ঈদ মুবারক ঈদ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

ঈদ মুবারক ঈদ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

সারা মুসলিম জাহান রাতভর ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে শবেকদরের রজনী অতিক্রম করেছে। যে রজনী হাজার রজনীর চাইতে উত্তম। আল্লাহতায়ালা শবেকদরে এত ফজিলত দান করেছেন, যা হাজার রজনীর ফজিলতকেও অতিক্রম করে। জানি না পরের রমজান পাব কি না, আবার শবেকদরের রহমতের বরকতের ফজিলতের রাত জীবনে আসবে কি না।

তবে অশান্ত পৃথিবীর এই কোলাহলে বড় কষ্টে মন ভরে যায়।

গত কয়েক মাস ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত আক্রমণ, যাতে শত শত বেসামরিক লোক জীবন হারাচ্ছে, শিশুরা খাদ্যের অভাবে, পুষ্টির অভাবে মারা যাচ্ছে। সভ্যসমাজ অসভ্যতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞের প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। জানি না ইসরায়েলের নেতানিয়াহু কোন ধাতুতে গড়া।

আল্লাহর দুনিয়ায় নেতানিয়াহুর মতো মানুষ জন্মায় ভাবতেও কেমন অবাক লাগে। পৃথিবীর বহু দেশে যুদ্ধ হয়েছে, যুদ্ধ হচ্ছে এবং যুদ্ধ হবে। কিন্তু সেখানে কখনো শুধু বেসামরিক লোক নিহত হয় না, হবে না। কিন্তু গাজা এক ব্যতিক্রমী স্থান। যেখানে ইসরায়েলরা একজন হামাস যোদ্ধাকে আহত করতে পেরেছে কি না কোনো খবর নেই। কিন্তু শত শত বেসামরিক লোক নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে, সভ্য দুনিয়া চেয়ে চেয়ে দেখছে। কোনো প্রতিকার, কোনো প্রতিরোধের সর্বোপরি শান্তি স্থাপনে ক্ষমতাবানদের কারও কোনো আগ্রহ নেই। এরকম অবস্থায় রমজান শেষে পবিত্র ঈদ। আমরা কতটা কী আনন্দ উপভোগ করতে পারব কিছুই বুঝতে পারছি না।  

গাজাতে যেমন ইসরায়েলি আক্রমণে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবন হারাচ্ছে, আমাদের দেশেও তেমনি বিশৃঙ্খল সড়ক দুর্ঘটনা, কল-কারখানায় একের পর এক আগুন ও নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রতিদিন কত সম্ভাবনাময় সংসার জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই সড়কে যে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে লোক মারা যাচ্ছে। সেতুমন্ত্রীকে একসময় খুবই দায়িত্বশীল মনে করতাম। কিন্তু কই তার মধ্যে কোনো আকার-বিকার দেখছি না। রেলগাড়ি লাইনচ্যুত হচ্ছে, দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত পতিত হচ্ছে, প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আগে মাননীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন একসময় দিনাজপুর পরে ঠাকুরগাঁও জেলার সিরাজ ভাইর ছোটভাই আমাদেরও ছোটভাই নুরুল ইসলাম সুজন। এখন মন্ত্রী হয়েছেন রাজবাড়ী পাংশার মো. জিল্লুল হাকিম। জিল্লুল হাকিম আমাদের বহুদিনের পরিচিত কর্মী নেতা। তার উপজেলার মাছপাড়া, মৃগী আরও অনেক জায়গায় গেছি। একবার সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে জিল্লুল হাকিমের পাংশার বাড়িতে গিয়েছিলাম। বহুদিন বহু বছর যাবৎ জিল্লুল হাকিমকে চিনি জানি। তার আন্তরিকতায় কখনো কোনো খাদ দেখিনি। রেল মন্ত্রণালয়ের যদি গতি আনতে পারেন, উন্নতি করতে পারেন তাহলে সেটা হবে তার জন্য সর্বোপরি দেশের জন্য এক পরম সাফল্য।

একসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি আনার জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির স্বাক্ষর করেছিলেন চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাত দিয়ে। এজন্য একসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম কদিন চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার অধ্যাপক ইউনূসকে নয়, নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমাকে। যার যেমন চিন্তা-চেতনা সে তেমনই বলে। সরকার তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল বানিয়েছিল। কী যোগ্যতা দক্ষতার কারণে বানিয়েছিল তা সরকারই জানে। কিন্তু তাকে নানা সময় কোর্টে বিচারপতিদের সামনে সওয়াল জবাব করতে দেখে তেমন যোগ্য মনে হয়নি। সে যাক, শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অনেক রাস্তাঘাট হয়েছে, উন্নতিরও কিছুটা ছোঁয়া লেগেছে। তবে পাহাড়ি দরিদ্র জাতিগোষ্ঠীর কতটা কি একেবারে গোড়ার দিকে উন্নতি হয়েছে স্বস্তি এসেছে সেটা বলতে পারব না। সন্তু লারমা কখন কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতা হয়ে ওঠেন জানতাম না। তবে মানবেন্দ্র লারমা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল নেতা। তিনি পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর জন্য আন্দোলন করেছিলেন, কথা বলেছিলেন। তাকে একসময় হত্যা করা হয়েছে। সব সময় এমনই হয়। মূল নেতাকে পাতিনেতারা হত্যা করে অথবা হত্যার মতোই কিছু একটা করে।  

পার্বত্য চট্টগ্রাম আগাগোড়াই অবহেলিত এবং দ্বিধাদ্বন্দ্বে দোদুল্যমান। ’৪৭-এ স্বাধীনতা বলব না, ভারত বিভক্তি বলব। কোনটা বলা ঠিক এখনো আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি। পাকিস্তান-ভারত যেভাবে ব্রিটিশের হাত থেকে অব্যাহতি পেয়েছে বা মুক্তি পেয়েছে তাকে স্বাধীনতা বলে না, মুক্তি বলে না। সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের পতাকা তোলা হয়েছিল। যা ছিল তিন দিন। ’৬৫ সালে আমি যখন বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলাম তখন শীতকালীন মহড়ায় হায়াকু, করেরহাট এসব এলাকায় পায়ে হেঁটেছি। অন্যদিকে ’৬২ সালে বাড়ি পালিয়ে কাপ্তাই গিয়েছিলাম। সেই আমার প্রথম কাপ্তাই দেখা, কাপ্তাই হ্রদ দেখা। বড় সুন্দর ঐশ^রিক দৃশ্যপট। পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য ভারতের কাশ্মীর। কাশ্মীরে আমি যাইনি। কিন্তু এখন নানা ধরনের ইলেকট্র্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে কাশ্মীরের যেসব ছায়াছবি দেখি তাতে আমার পার্বত্য চট্টগ্রামকে কখনো কাশ্মীরের চাইতে কম মনে হয়নি। এক হৃদয়কাড়া মনোমুগ্ধকর ভূস্বর্গের নাম খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান। যারা চোখে না দেখেছে তারা সেই প্রাকৃতিক দৃশ্য কোনো ছায়াছবি দেখে অনুভব করতে পারবে না।  

পার্বত্য চট্টগ্রাম আমার চোখে ভূস্বর্গ। সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দারা যদি কষ্টে থাকে অস্তিত্ব নিয়ে, তাদের কৃষ্টি-সভ্যতা নিয়ে শঙ্কায় থাকে তাহলে তো এ দুনিয়ায় স্বর্গের কোনো মানে হয় না। তাই সবকিছু তলিয়ে দেখা দরকার। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে যতটা শান্তি-স্বস্তি উন্নতি হওয়ার কথা ছিল সত্যিই কি তা হয়েছে? আমার তো তেমন মনে হয় না। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহরা যেমন অবহেলিত তেমনি তার হাতে সম্পাদিত চুক্তি অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত। আগেই বলেছি, রাস্তাঘাট হয়েছে, দালানকোঠাও হয়েছে। কিন্তু মানুষ যদি স্বস্তিতে না থাকে তাহলে এসবের কোনো মানে হয় না।  

একসময় বীরউত্তম জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার বাঙালি বসতি স্থাপন করেছিলেন। হয়তো তিনি একটি জাতীয় ভারসাম্য আনতে চেয়েছিলেন। ব্যাপারটা ঠিক হয়নি, ভালো হয়নি। অমন হওয়া ভালো না। একদিকে আদিবাসী পাহাড়ি, অন্যদিকে বাঙালি এ তো সংঘাতের নামান্তর মাত্র। কোনো জায়গায় শান্তি স্থাপন করতে চাইলে হয় তাদের ধ্বংস করে ফেলতে হয়, না হয় তাদের শিক্ষা সাংস্কৃতি সামাজিক ন্যায়বিচারে সর্বতো সহযোগিতা করতে হয়। বাধানিষেধে কোনো শান্তি নয়। শান্তির নামে অশান্তির নামান্তর। রাষ্ট্র পরিচালনায় কিছু দিলাম কিছু নিলাম এরকম না করে দিলে পুরোটাই দিতে হয় আর নিলে সবকিছুই নিতে হয়। পৃথিবীতে যারা দিতে শিখেছে তারাই বেশি ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছে।  

সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা অন্যের অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা একেবারেই মূর্খতা। কোনকালে কেউ কোনো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। কেউ হয়তো শত বছরে কেউ হয়তো হাজার বছরে তাদের চাওয়া-পাওয়া তাদের অধিকার অর্জন করেছে। যেমনি আমরা করেছি। আমাদের পূর্বপুরুষ কতজন কতভাবে জীবন দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে।

স্বাধীনতা বা আত্মমর্যাদা অর্জনের লড়াই আজকের নয়, হাজার বছর আগে থেকেই আমরা লড়ে চলেছি। সে চেঙ্গিস খাঁর সময়ের আগে থেকে, হালাকু খাঁর সময় থেকে, সুলতানি আমল, মুঘল, ব্রিটিশ কারও বিরুদ্ধে আমাদের কম লড়াই করতে হয়নি, জীবন দিতে হয়নি। ’৪৭ সালে ব্রিটিশের কাছ থেকে ভারতবর্ষ খন্ডিত হয়ে তথাকথিত স্বাধীনতা অর্জন করে। তারপরও মাকে মা ডাকতে আমরা রক্ত দিয়েছি।  

আমাদের যে কোনো অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। ’৭১-এর স্বাধীনতার পরও আমরা ভালো থাকতে পারিনি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা আমাদের নেতাকে পিতাকে হারিয়েছি। তাই কখনো কোথাও কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে কারও প্রতি কোনো জুলুম হলে বড় বেশি বুকে বাধে। সে জাতি ধর্মে যাই হোক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান আমার কাছে বিবেচ্য নয়, আমার কাছে বিবেচ্য তারা মানুষ। গা এলিয়ে দেওয়ার মতো গদাই লস্করির চালে রাষ্ট্র চলছে। সবকিছুতে বোন হাসিনা। সরকারি বড় বড় পদে থেকে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে কেউ কোনো দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে চায় না। এর চাইতে বড় অবক্ষয় আর কিছুই হতে পারে না। সেদিন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কতটা কী করতে পারবেন জানি না। তবে লোকটিকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, পছন্দ করি। তিনি একটি সত্য কথা বলেছেন, উপযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো বলেছেন। তা হলো, ‘ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আমরা খুঁজে বের করব এবং যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও সুস্থিতির জন্য এরপরও আলোচনার দরজা সবার জন্য খোলা। ’ এটি একটি সত্যিই মূল্যবান কথা, রাষ্ট্রের নেতার মতো কথা।  

তবে দিনের পর দিন একের পর এক যা ঘটছে জিনিসগুলোর ওপর নজর দেওয়া উচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই ঘটনা বাতাসে উড়ে আসার মতো নয়। নিশ্চয়ই এখানে কারও না কারও স্বার্থ আছে, কারও না কারও ইন্ধন আছে। সেসব খতিয়ে দেখা উচিত। সময় থাকতে আমরা যদি সঠিক জিনিস খুঁজে বের করতে না পারি, পরে বিপদে পড়তে হতে পারে। মনে হয় সরকার এবং সরকারি যন্ত্র নিশ্চয়ই গা ভাসিয়ে দেবেন না। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। লাইলাতুল কদরের রাত খুব যে খারাপ গেছে তা যেমন বলা ঠিক হবে না, তেমনি তেমন ভালো যায়নি। তবে সুরা তওবা আর সুরা ইউনুস পাঠ করেছি। এ নিয়ে কতবার হলো বলতে পারব না

মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত আমার কোরআন সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এর ওর কাছ থেকে যা শুনেছি তাই ছিল মূল সম্বল। তবে একটা কথা বলতেই হবে, মুক্তিযুদ্ধ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে জুলাই মাসে হতেয়ায় শাহ সুফি হজরত সামান উল্যাহকে পেয়েছিলাম। লাল গেরুয়া পরে উদাম পেট ভাসিয়ে চলতেন। হাতে থাকত খমক। তাতে টুংটাং করতেন, ইচ্ছেমতো গান গাইতেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। শুনেছি, তিনি মাটি খুঁড়ে ১২ বছর গর্তে বাস করেছেন। গোসল-আসল, পেশাব-পায়খানা ছাড়া একমুহূর্তের জন্য বাইরে বের হতেন না। লোকজন যা দিত তাই খেতেন, না দিলে না খেয়ে থাকতেন। সেই সামান ফকির মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী আমাকে দিনের পর দিন কোরআনের বয়ান শুনিয়েছেন। সে এক অসাধারণ বাচনভঙ্গি এবং তার বয়ান পদ্ধতি। পরে যখন যেখানে কোরআন পড়েছি, এখনো পড়ি মনে হয় এসব যেন আমার আগে থেকেই জানা। যদি বয়স থাকত আগের মতো মনে রাখার ক্ষমতা থাকত তাহলে সামান্য চেষ্টা করলেই কোরআনে হাফেজ হয়ে যেতে পারতাম। এখন আগের মতো মনে থাকে না। সুরা তওবা কোরআনের নবম সুরা, ১৬ রুকু, আয়াত ১২৯। শুরুটা এভাবে “(হে বিশ্বাসীগণ!) তোমরা শরিককারীদের সঙ্গে যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের তরফ থেকে তা বাতিল করা হলো। ২. অতএব (হে শরিককারীরা!) তোমরা আল্লাহর জমিনে চার মাস ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা কর, কিন্তু জেনে রাখ, তোমরা কখনো আল্লাহর আওতার বাইরে যেতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের লাঞ্ছিত করবেন। ৩. হজের বড় দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহর সঙ্গে যারা শরিক করে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রসুল পুরোপুরি দায়মুক্ত। তোমরা যদি তওবা কর, তবে তা তোমাদের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে। আর তোমরা যদি সত্যবিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, আল্লাহর আওতা থেকে তোমাদের পালানোর কোনো পথ নেই। তাই (হে নবী!) সত্য অস্বীকারকারীদের নিদারুণ শাস্তির সংবাদ দাও। ৪. তবে শরিককারীদের মধ্যে যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এবং চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলেছে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করেনি, তাদের সঙ্গে মেয়াদ পুরো না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি মেনে চলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ-সচেতন মানুষকেই আল্লাহ পছন্দ করেন। ৫. (প্রচলিত রীতি অনুযায়ী) সংঘাত নিষিদ্ধ মাসসমূহ পার হওয়ার পর (বিবদমান) শরিককারীদের যেখানে পাও, সেখানে ওদের বিনাশ কর। সম্ভাব্য প্রতিটি স্থানে ওত পেতে থেকে (বিবদমান) শরিককারীদের পাকড়াও কর, অবরুদ্ধ কর। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে, তবে তাদের মুক্ত করে দাও। মনে রেখ, আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ২৪. হে নবী! বলো, ‘তোমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন, সগোত্র, অর্জিত ধনসম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যার মন্দার আশঙ্কা কর আর তোমাদের পছন্দের বাড়িঘর যদি আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং আল্লাহর পথে প্রাণান্ত সংগ্রাম করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর (সেদিন পর্যন্ত) যখন আল্লাহর চূড়ান্ত ফয়সালা তোমাদের সামনে উপস্থিত হবে। (জেনে রাখো) আল্লাহ সত্যত্যাগীদের কখনো সৎপথ প্রদর্শন করেন না। ’ ৩৭. মাস পিছিয়ে দেওয়া ওদের দিক থেকে সত্য অস্বীকার করার আরেকটি উদাহরণ। এ প্রক্রিয়ায় সত্য অস্বীকারকারীরা আরও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয়। ওরা এক বছর একটি মাসকে নিষিদ্ধ করে আবার আরেক বছর একে বৈধ করে। ওদের উদ্দেশ্য একটাই। তা হচ্ছে, আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন, তাকে যেন ওরা বৈধ করতে পারে। এভাবে মাস গণনা হলো আবার নিষিদ্ধ মাস বৈধও হলো। ওদের মন্দ কাজগুলোও ওদের কাছে আকর্ষণীয় ও চাকচিক্যময় হয়ে ওঠে।  

আসলে আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের সৎপথ প্রদর্শন করেন না। ৯৪. (অভিযান শেষে) তুমি যখন ফিরে যাবে, তখন ওরা তোমার কাছে নানা ধরনের অজুহাত পেশ করবে। (হে নবী!) তখন ওদের স্পষ্ট করে বলো, ‘অজুহাত পেশ করে কোনো লাভ নেই। আমি তোমাদের কোনো কথাই বিশ্বাস করি না। কারণ তোমাদের আসল অবস্থান আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আল্লাহ ও তাঁর রসুল তোমাদের তৎপরতা লক্ষ্য করবেন। তারপর তোমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে, যিনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্য, প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুরই জ্ঞান রাখেন। তখন তোমরা সারা জীবন যা করেছিলে, সে রেকর্ড তোমাদের দেখাবেন। ’

অন্যদিকে কোরআনের দশম সুরা ইউনুস। রুকু ১১ আয়াত ১০৯। ‘১১. পার্থিব ভালো জিনিস পাওয়ার জন্য মানুষ যেভাবে তাড়াহুড়া করে, আল্লাহ যদি মানুষের পাপের শাস্তিদানে সে-রকম তাড়াহুড়া করতেন, তবে সহসাই তারা শেষ হয়ে যেত। তাই যারা বিশ্বাস করে না যে, পরকালে আমার সামনে হাজির হতে হবে, তাদেরও আমি কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, অবাধ্যতা ও সীমা লঙ্ঘনের মধ্যে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরপাক খাওয়ার জন্য। ১২. মানুষ যখন কষ্ট ও বিপদে পড়ে তখন শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে। তারপর আমি যখন তার কষ্ট ও বিপদ দূর করে দিই, তখন সে এমনভাবে চলাফেরা করে যেন তার বিপদের সময় সে কখনো আমাকে ডাকেনি! আসলে যারা নিজেদের বিনষ্ট করে, তাদের কাছে তাদের কাজকর্মই মনপছন্দ হয়ে ওঠে। ’

লেখক : রাজনীতিক

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক