গাজাবাসীর কি ঈদ আছে? 

হাজার কিছু নারী ও শিশু

গাজাবাসীর কি ঈদ আছে? 

অনলাইন ডেস্ক

রমজান শেষে ঈদকে স্বাগত জানিয়ে ঈদের তাকবির আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান) ধ্বনিতে এক সময় মুখরিত হয়ে উঠতো পুরো গাজা উপত্যকা। নানা বয়সী মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়ে তাকবির দিতে থাকতেন। ঘরে ঘরে ছিল ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির ধুম। নতুন জামাকাপড় কিনতে বাজারে যেত শিশুরা।

তবে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় এবার সেসব ঐতিহ্যের কোনোটিই নেই গাজায়।  

আজ গাজা উপত্যকাসহ পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে এ ঈদ যেন এক দুর্দশার ঈদ গাজাবাসীর জন্য।  ২৩ লাখ মানুষের শহরটি এখন ধ্বংস্তূপ।

সেখানকার জনপ্রিয় আল রেমাল ও আল সাহা বাজার মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব বাজারই ছিল বাচ্চাদের জন্য নতুন জামাকাপড়, চকলেট ও ঈদের মিষ্টি কেনার অন্যতম স্থান। যেখানে বাবা-মায়ের হাত ধরে কোমলমতিরা যেতো পছন্দের জিনিস কিনতে। অথচ এখন রাস্তা বন্ধ, কোনো দোকানের শাটার এখনও দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংস্তূপের মাঝে।

দ্য ন্যাশনাল নিউজের খবরে বলা হয়- দক্ষিণ গাজার বাসিন্দা মোনা ইউসেফ বলেন, ‘ঈদতো শিশুদের জন্য, অথচ গাজায় হাজার হাজার শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কিভাবে ঈদ উদযাপন করবো? ইসরায়েলি সেনারা শহর থেকে চলে গেলেও আমাদের হৃদয় দুঃখ ও হতাশায় ভরা। ’

তাল আল হাওয়ায় নিজের বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর ইউসেফ আল নাসের পাড়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার কিশোর বয়সী নাতি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, অন্য আরব দেশের শিশুরাও কি আমাদের মতো এমন জীবন যাপন করে?

ইসরায়েলি হামলায় বাবা-মা ও এক ভাইকে হারানোর পর উত্তর গাজার জাবালিয়ায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আজিজ। সে বলে, ‘আমার আশপাশের অনেক শিশুর বাবা-মা আছে, আমি আমার বাবা-মাকে মিস করি। আমার মা আমাকে ঈদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন ঈদ নেই। ’

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। ওই মাসেই আজিজ মায়ের জন্য আলু কিনতে গিয়েছিল। ঠিক সে সময়ই তাদের বাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে তার বাবা-মা এবং ভাই নিহত হয়।

স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া গাজার অপর বাসিন্দা হিনাভি বলেন, ‘ঈদ হলো পারিবারিক জমায়েত, বাচ্চাদের পার্কে খেলা, তাদের টাকা দেওয়া এবং খেলনা কেনা। কিন্তু ইসরায়েল আমাদের এই মৌলিক বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত করেছে। ’ যুদ্ধের কারণে গত ৬ মাস ধরে এই পরিবারটি বিচ্ছিন হয়ে পড়েছে। হিনাভির সন্তানদের তাদের চাচাত ভাইদের সঙ্গে গত ৬ মাস ধরে দেখা নেই।

হিনাভি বলেন, ‘আমারা ক্লান্ত। আমরা এই পরিস্থিতি আর সহ্য করতে পারছি না। আমরা সব উৎসব পুরোপুরি উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন আমাদের জীবন বাঁচানোই দায়। ’

গাজার অন্যান্য অংশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়ে তার পরিবারের প্রায় ২০ জন আত্মীয় এখন তাঁর বাড়িতে অবস্থান করছেন। মাসরি বলেন, ‘এই প্রথম আমরা ঈদে কোনো আনন্দ করবো না, কারণ আমাদের মন ভালো নেই। প্রতিটি পরিবারই এই যুদ্ধে কাউকে না কাউকে হারিয়েছে। ’

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক