ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে যা হতে পারে

হরমুজ প্রনালী

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে যা হতে পারে

অনলাইন ডেস্ক

হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইরান এমনটি করবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের নৌবাহিনীর কমান্ডার আলী রেজা তাংসিরি। খবর শিনহুয়ার।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) লেবাননের আল মায়াদিন টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাংসিরি বলেন, আমরা চাইলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা এমনটা করছি না, কারণ আমরা মনে করি আমাদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেরও এই প্রণালি ব্যবহার করার অধিকার রয়েছে।

পাশ্ববর্তী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইসরায়েলের উপস্থিতিকে ইরানের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন ইরানের এই সামরিক নেতা। পাশাপাশি, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিকেও হুমকি হিসেবে মনে করেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে তাংসিরি জানান, ইরান সবসময় উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে যাতে করে সাগরে ইরানের স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করা যায়।  
হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন ৮৫টি তেলবাহী জাহাজ অতিক্রম করে বলেও জানিয়েছেন এই সামরিক নেতা।

এই প্রণালিটি হচ্ছে তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট, যা মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্বব্যাপী তেল আমদানীকারক দেশগুলোর যোগাযোগ স্থাপন করে।

বিশ্বে প্রতিদিন ব্যবহৃত তেলের এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়েই আনা-নেওয়া করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এই প্রণালি দিয়ে পরিবহন করা হয়েছে।

সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরাক তাদের উৎপাদিত তেলের প্রায় সবই হরমুজ প্রণালি দিয়ে সরবরাহ করে। পাশাপাশি, নিজেদের উৎপাদিত এলএনজি গ্যাসের প্রায় সবই কাতার দেই প্রণালি দিয়ে আনা-নেওয়া করে।

যদি কোনো কারণে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয় তবে বিশ্বের ব্যস্ততম তেল সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাবে এবং গভীর জ্বালানি শঙ্কট দেখা দেবে।

সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি হামলার পর থেকে ইরান পাল্টা আঘাতের হুমকি দিয়ে আসছে। এর ফলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে অতীতে ইরান এমনটি করেনি বিধায় সামনেও তারা এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ নেবে না বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।  এরপরও যদি  হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সমস্যাসমূহ :

তেল বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে

বিশ্বের অন্যতম বড় কয়েকটি অপরিশোধিত তেল উৎপাদক দেশ এই পানিপথ দিয়েই তাদের তেল রপ্তানি করে থাকে। ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেলটি পারস্য উপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওমান ও ইরানকে সংযুক্ত করেছে। এই রুটটি আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, তেলবাহী জাহাজ যাতায়াতের এটিই একমাত্র পথ। ফলে ইরান এটি বন্ধ করলে বিশ্বের তেল বানিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। হরমুজ দিয়ে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেলের মতো তেলজাতদ্রব্য রপ্তানি হয়ে থাকে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত তেলের বেশিরভাগই যায় এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

ভৌগলিকভাবে হরমুজ প্রণালির একদিকে আছে আরব দেশগুলো। এসব দেশের মধ্যে আমেরিকার মিত্র দেশগুলো রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে কুয়েত, বাহরাইন, ইরান, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। হরমুজ প্রণালির অন্য পাশে রয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তেল রপ্তানি করা হয় হরমুজ প্রণালির মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়।

ইরানের মোট রপ্তানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে জ্বালানি তেল রপ্তানির মাধ্যমে। ইরান বলেছে, তাদের তেল রপ্তানিতে আমেরিকা যদি বাধা দেয়, তাহলে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে কোনো তেল রপ্তানি করা যাবে না। ইরান বলেছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে যত তেল পরিবহন করা হবে সেটি তারা বন্ধ করে দেবে।

এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল অতীতে
১৯৮০’র দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় এ ধরনের হুমকির ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় ইরাক এবং ইরান পরস্পরের তেল রপ্তানি বন্ধ করতে চেয়েছিল। তখন জ্বালানি তেল বহনকারী ২৪০টি তেলের ট্যাংকার আক্রান্ত হয়েছিল এবং ৫৫টি ডুবে গিয়েছিল। ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে চায় তাহলে সেটির কিছু নেতিবাচক দিক আছে। হরমুজ প্রণালি অশান্ত হয়ে উঠলে পৃথিবী জুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। কারণ সেসময়ও তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল।  

জাতিসংঘের সমুদ্র আইন কি বলে ?
১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের সমুদ্র আইন সম্পর্কিত কনভেনশন অনুযায়ী একটি দেশের তটরেখা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল অবধি সেই দেশের সমুদ্রসীমা হিসেবে বিবেচিত হবে। এখন পারস্য উপসাগরে যেতে যেসব সমুদ্রযান উত্তর এবং দক্ষিণ রুট ব্যবহারে বাধ্য হয় সেগুলোকে বাধা দিতে পারে ইরান। তবে জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত কনভেনশনের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিতে পারে ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরান সরকার ১৯৮২ সালে তাতে স্বাক্ষর করলেও সেটি কখনই সেদেশের সংসদে অনুমোদিত হয়নি।

news24bd.tv/ab/ডিডি