ঈদ আনন্দ নেই নড়াইলের দুইশো পরিবারে

প্রতিপক্ষের হামলা আতঙ্কে পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ছবি: নিউজ২৪

ঈদ আনন্দ নেই নড়াইলের দুইশো পরিবারে

নড়াইল প্রতিনিধি

ঈদ হচ্ছে না নড়াইলের সংঘাতপূর্ণ কুমড়ি গ্রামের প্রায় দুইশো পরিবারে। প্রতিপক্ষের হামলা আতঙ্কে পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। বাড়িঘরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারায় আয়-উপার্যন বন্ধ হয়ে অর্থিক অনটনসহ পুরুষ শূণ্য এসব পরিবারের নারীও শিশুরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার মাঝে দিন পার করছে। এমন বাস্তবতায় এসব পরিবারগুলোর কাছে ঈদ আর অন্য সব দিনের মাঝে কোনো ব্যবধান নেই বলছে তারা।

 

পুলিশ বলছে, এলাকায় সবার জন্য উদ্বেগ আতঙ্ক মুক্ত ঈদের উৎসব মুখর পরিবেশ নিশ্চিতে তারা তৎপর রয়েছে।  

সরেজমিন দেখা গছে, কুমড়ি মধ্যপাড়ার ফসিয়ার মোল্যার ছেলে পঙ্গু হাসিবুর(৩৫) কে তার স্ত্রীও প্রতিবেশি কয়েকজন চেয়ারে বসিয়ে ধরাধরি করে ঘর থেকে এনে তার এক চিলতে উঠানের মাঝে বসিয়ে দিচ্ছে। নিয়তির নির্মমতায় এক সময়ের প্রানচঞ্চল এ মানুষটিকে আজ অন্যের উপর ভর করে চলতে হচ্ছে। কথা হয় হাসিবুরের সঙ্গে তিনি জানান, জমি চাষবাস ও ইজিবাইক চালিয়ে স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান নিয়ে দিন ভালোই কাটছিল তার।

চার মাস আগে বিলে কাজে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। ১২/১৩জনে ধারালো অস্ত্র লাঠিশোঠা নিয়ে হামলে পড়ে তার উপর। চিকিৎসায় বেঁচে ফিরলেও চিরপঙ্গুত বরণ করতে হয়েছে। হতাশা ভরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাসিবুর বলেন, মানুষের দান সহায়তা বাঁচা এই জীবনে ঈদ বলে কিছু নেই।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুমড়ি গ্রামের ৯টি বংশের ঐক্যমতে গঠিত ‘নাইন গ্রুপ’ এবং তাদের প্রতিপক্ষ সলিমন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষে অনেক সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বিগত দিনে। কয়েক মাস আগে গ্রামের সৈয়দ এবং দত্তরা নাইন গ্রুপে যোগ দেয়ায় এ গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে পড়ে। এর পরই ছলিমন গ্রুপকে কোনঠাসা করতে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছে।

কুমিড় মধ্যপাড়ার ইকবাল খার স্ত্রী কহিনুর(৫০), হাসমত লস্করের স্ত্রী রমেছা (৪০), আহিদুল লস্কর(৭০)সহ অনেকে জানায়, রাত পোহালে ঈদ, অথচ ঈদ উদযাপনের মতো কোনো পরিস্থিতি নেই তাদের। বাড়িঘরে হামলা ভাংচুরসহ ছলিমন গ্রুপের লোকজন একের পর এক নাইন গ্রুপের পরিকল্পিত হামলা শিকার হতে থাকায় হাসিবুরের মোল্যার মতো পরিনতির ভয়ে ছলিমন গ্রুপের প্রায় দুইশো পরিবারের পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। নারী শিশু বৃদ্ধ যারা বাড়ি আছে তারাও অজানা আতঙ্কে চরম উৎকন্ঠার মাঝে দিন পার করছে। কাজকর্ম স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারায় সকলে চরম অর্থিক অনটনে পড়েছে।

বিগত কয়েক মাসে ছলিমন পক্ষের হাসিবুর, মাসুদুজ্জামানা, ইসরাফিল, সজিব লস্কর, সাহেদ আলমসহ অন্তত ১০জনকে কুপিয়ে যখম করা হয়। ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি বাড়ি, লুটে নেয়া হয় অন্তত ৪০টি ঘের থেকে দেড় কোটিরও বেশি টাকার মাছ।

জানা গেছে, এসব ঘটনায় লোহাগড়া থানায় ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং ৫টি প্রকৃয়াধীন আছে। এমন অবস্থায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগ্যে জুটছেনা বলে জানায় চরম দুর্দশাগ্রস্ত এসব মানুষরা। এদিকে, অভিযুক্ত নাইন গ্রুপের অন্যতম নেতা রবিউল শেখ উল্টে সলিমন গ্রুপের বিরুদ্ধে হামলা নির্যাতনের অভিযোগ করে বলেন, বিগত দিনে আমি নিজে কয়েক দফায় সলিমন গ্রুপের হামলার শিকার হই, আমার তার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। হামলার শিকার হয় আমাদের অনেকে। ভাংচুর চালানো হয় অনেকের বাড়িঘরে। বর্তমানে আমাদের দল বড় হওয়ায় ছলিমন পক্ষীয়রা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য গ্রাম ছেড়ে দিয়ে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। আমারা কাউকে হামলা নির্যাতন করিনি। পুলিশের বিরুদ্ধেও বাড়ি বাড়ি চড়াও হয়ে হামলার অভিযোগ রবিউল শেখের।

এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, কুমড়ি একটি দাঙ্গা প্রবণ গ্রাম। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখানে অন্তত ৪৫ জন খুন হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই গ্রামের মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বিবাদমান দুইটি গ্রুপ দ্বন্দে জড়িয়েছে। তবে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন যে কোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এলাকার সবার ঈদ উদযাপন নির্বিগ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান ওসি তদন্ত।

news24bd.tv/DHL

এই রকম আরও টপিক