অতিরিক্ত গরু-ছাগলের মাংস ভোজনে ১০ স্বাস্থ্য ঝুঁকি

রেড মিট

অতিরিক্ত গরু-ছাগলের মাংস ভোজনে ১০ স্বাস্থ্য ঝুঁকি

অনলাইন ডেস্ক

ঈদ, বিবাহ, নববর্ষসহ বিভিন্ন অকেশনে রেডিমিট খাওয়া আমাদের দেশে খুব সাধারণ একটা রীতি। গুরুর মাংস, খাসির মাংস ছাড়া যেন জমেই না এ সব উৎসব। তবে অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া হলে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই সুস্থ থাকতে রেডমিট পরিমিত খাওয়ার বিকল্প নেই।

 

১. ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়

‘ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড’ জানাচ্ছে, সপ্তাহে তিনবার রান্না করা ১২ থেকে ১৮ আউন্সের বেশি রেড মিট খাওয়া ঠিক নয়। এতে দেহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণা বলছে, রেড মিট বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল মসলা দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রান্না করে খেলে তা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া কোলন ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়ায় রেড মিট।

 

২. ওজন বেড়ে যায়

যে খাবারে অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরিও কিন্তু থাকে। অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার ওজন বৃদ্ধি, ওবিসিটি, ডায়াবেটিসের এর মতো অন্যান্য জটিল রোগের মূল কারণ হতে পারে। রেড মিটে প্রচুর ক্ষতিকর চর্বি থাকায় ওজন বেড়ে যায়, যা নানা রোগের জন্য দায়ী।  

ডা. ইয়ং’য়ের মতে, ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। এটা ক্যালরিও যোগ করে ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ’ তার মতে, ‘প্রাণিজ উপাদান বিশেষ করে লাল মাংস স্থূলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। যা থেকে হৃদরোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। ’

৮ আউন্স স্টেকে ৬১৪ ক্যালোরি থাকে, এর মধ্যে মোট চর্বির পরিমাণ হয় ৪৬ গ্রাম, যা কিনা দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের ২০০০ ক্যালরির মধ্যে ৬৬ শতাংশ।

৩. হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে 

লাল মাংস খাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ প্রভাব হলো হৃদপিণ্ডের ক্ষতি সাধন, যা ‘ফাইনালি ফুল, ফাইনালি স্লিম অ্যান্ড দ্যা পোর্শন টেলার প্ল্যান’ বইয়ের লেখক লিসা ইয়ং সমর্থন করেন। ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের এই পুষ্টিবিদ বলেন, ‘লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস হৃদরোগের সৃষ্টি করে। ’

‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, ১.১ পরিবেশন রেডমিট- গরু, খাসি, বাইসন বা ভেড়া ইত্যাদি খাওয়ার ফলে ধমনিতে চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ জমে ‘ব্লক’ সৃষ্টি করার ঝুঁকি বাড়ায় ২২ শতাংশ।

৪. উচ্চ মাত্রার স্যাচুরেইটেড ফ্যাট 

বেশিরভাগ লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেইটেড ফ্যাট থাকে। নিউ ইয়র্ক এর পুষ্টিবিদ সিডনি গ্রিন বলেন,  “তিন আউন্স ‘রিব আই স্টেক’য়ের টুকরায় প্রায় আট গ্রাম স্যাচুরেইটেড চর্বি থাকে যা দৈনিক চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করে। ” 

স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ‘এলডিএল’ বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায় যা হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ। ডা. ইয়ং বলেন, ‘স্যাচুরেটেইড ফ্যাট ধমনিতে বন্ধকতা সৃষ্টির মাত্রা বাড়ায় ’

মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, ‘ধমনির দেয়ালে কোলেস্টেরলের ‘প্লাক’ জমায় এবং রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ’

৫. অন্ত্রে প্রভাব

পুষ্টিবিদ সিডনি গ্রিন মনে করেন, ‘রেড মিট’য়ের স্যাচুরেইটেড ফ্যাট হৃদপিণ্ডের পাশাপাশি অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’য়ে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, জ্ঞানীয় দক্ষতা, হজমের গোলমালসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘হজম ও শোষণের সময় অন্ত্রের মাইক্রোবস বিপাকীয় উপাদান কার্ডিওভাস্কুলার রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। ’

৬. প্রদাহ

‘লাল মাংস খাওয়া প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি বাড়ে”, বলেন গ্রিন।

দ্যা ক্লিভ ল্যান্ড ক্লিনিক অনুযায়ী, লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেইটেড ফ্যাট প্রদাহ বাড়ায়। ‘দ্যা জার্নাল অব অ্যামেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

৭. হজমে জটিলতা

পুষ্টিবিদ সিডনি গ্রিন বলেন, ‘প্রতিদিন লাল মাংস খাওয়া প্রোটিন সরবারহ করে যা হজমতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে আছে চর্বিবহুল প্রোটিন যা অনেকের হজম করতে সমস্যা হয়’।  

এই কারণে চর্বি বহুল খাবারের পরে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হলেও যাদের পাকস্থলীর সমস্যা আছে, প্রতিদিন মাংস খান তাদের ক্ষেত্রে এমন জটিলতা বেশি দেখা দেয়।

৮. সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা বাড়ে

প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস যেমন- বেকন বা সসেজে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা দেহে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ দৈনিক ২৩০০ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেয়।

সসেজে ৫৬৯ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম থাকে যা দৈনিক চাহিদার এক চতুর্থাংশ। এতে খাবার মজাদার হলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় যেমন- কিডনির সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি ও উচ্চ রক্তচাপ।  

৯. কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে

সাধারণত ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য (হোলগ্রেইন) ফাইবার সমৃদ্ধ থাকে। আর এই আঁশযুক্ত খাবার স্টুল স্বাভাবিক রাখতে হেল্প করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে ফাইবারের ঘাটতির প্রথম লক্ষণ। অতিরিক্ত লাল মাংস জাতীয় খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। তাই ডেইলি ফুড চার্টে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।

১০. কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে 

অত্যধিক প্রোটিন কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রাণিজ প্রোটিন পিউরিন নামক কম্পাউন্ডে পূর্ণ থাকে যা ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। আর অতিমাত্রার ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

news24bd.tv/আইএএম