কক্সবাজার-কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ঢল

কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ঢল

কক্সবাজার-কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ঢল

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার ও কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত। দীর্ঘ একমাস পর হাসি ফুটেছে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের মুখে। পুরো রমজান মাস কক্সবাজার অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল। দর্শনার্থীর সেই খরা কেটেছে।

 

কক্সবাজার সৈকত

দেশের অধিকাংশ মানুষের বেড়ানোর জায়গা হিসেবে পছন্দের শীর্ষে থাকে কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। বিশেষ দিন ও টানা ছুটিতে এখানে পাহাড়-সমুদ্র, নদী ও ঝরনা দেখতে ভিড় করেন পর্যটকেরা। প্রতিবছরের মতো এবারও দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের দিন সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আসতে থাকেন ভ্রমণপিপাসুরা।

পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রমজান মাসজুড়ে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলো নান্দনিক সাজে সজ্জিত করা হয়।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের দিন থেকে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অধিকাংশ দোকানপাটও খুলেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণি পয়েন্টে পর্যটক নামতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল থেকে কলাতলী থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতে অন্তত ৪০ হাজার দর্শনার্থী নামেন বলে জানান সৈকতে দায়িত্বরত কর্মীরা।

ঈদের দিন বিকেলে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের মানুষ সাগরের নোনাজলে গোসলে নেমেছেন। কেউ সৈকতে ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন, কেউ আবার ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে সৈকত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) গা এলিয়ে দিগন্ত ছোঁয়া নীলজলরাশিতে মজে আছেন। কেউ কেউ বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনদের এসব আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে রাখছেন।

শহরের বাইরেও পর্যটকরা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এই সড়কে সৈকত ছাড়াও আছে পাহাড়-ঝরনা, প্রাকৃতিক গুহাসহ নানা দর্শনীয় স্থান। এ ছাড়া সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়া, রামু বৌদ্ধ বিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের প্রবল আগ্রহ থাকলেও নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে যেতে পারছেন না দর্শনার্থীরা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ তুহিন সাগরে নেমেছেন স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে। কোমড় সমান পানিতে ভাসছেন টিউবে। আধা ঘণ্টা পর বালুচরে উঠে বসেন চেয়ার-ছাতা কিটকটে। হারুন নামের আরেক পর্যটক বলেন, নোনাজলে শরীর ভেজাতে কক্সবাজারে ছুটে আসা।

সৈকতে দায়িত্বরত বিচকর্মী বেলাল উদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান জানান, স্থানীয়দের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। শুধু ঈদের দিনেই অন্তত ৪০ হাজার পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। শুক্রবার থেকে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে।  

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এবার পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসের ৯০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে।

কুয়াকাটা সৈকত 

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দর্শনার্থীর স্রোত নেমেছে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সৈকতে। পর্যটকের ভিড় বেড়েছে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পর থেকেই।  

জানা যায়, কুয়াকাটার আশেপাশের জেলা-উপজেলা থেকে আগত দর্শনার্থী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা শুটকি পল্লী, গঙ্গামতির সৈকত, রাখাইন পল্লী, ইকোপার্ক, ইলিশ পার্ক, লেম্বুর বন ও সৈকতের ঝাউবাগানসহ অধিকাংশ পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। তাদের সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগসহ সমুদ্রের নোনাজলে গা ভাসিয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে। সৈকতে কেউ গোসল করছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছেন, আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুরো সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা সুমনা বিশ্বাস বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। বুধবার যখন আসি তখন বেশি পর্যটক ছিলেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সৈকত এলাকা মুখর হতে থাকে। অনেক লোক দেখেও ভালো লাগছে। ’

রমজানে দীর্ঘ একমাস কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা কম ছিল। সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরাও অলস সময় পার করেছেন। সেই খরা কেটে যাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। এবার তারা ঈদের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করছেন।

হোটেল ডি’মোর-এর ব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদীন জুয়েল বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমাদের ৬০ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যে ভাড়া হয়েছে। শুক্র ও শনিবারকে কেন্দ্র করে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সামনের সপ্তাহজুড়ে পর্যটকদের স্রোত অব্যাহত থাকবে। ’

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সেক্রেটারি জেনারেল জহিরুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটি উপলক্ষে অনেকদিন পর কুয়াকাটা পর্যটকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। দর্শনার্থীর আনাঘোনায় মুখরিত পুরো সৈকত। পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে কুয়াকাটার ১৬টি পেশার মানুষ। তারা পর্যটকদের সেবা দিয়েই রোজগার করছেন।  

কুয়াকাটা জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক আবদুল খালেক বলেন, ‘ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে ছয়টি টিম নিয়োজিত রেখেছি। যাতে সব ধরনের অপ্রতিকার ঘটনা ঠেকানো যায়। ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। তাই তাদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে। ’

news24bd.tv/আইএএম