স্বস্তির ঈদযাত্রা কতদূর!

সাইফুল ইসলাম (স্বপ্নীল)

স্বস্তির ঈদযাত্রা কতদূর!

সাইফুল ইসলাম (স্বপ্নীল)

উৎসব ও আমেজে মানুষ শেকড়ের টানে প্রিয়জনের সাথে আনন্দের মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করতে চায়। নাগরিক হিসেবে এ চাওয়া অন্যায় বা বেশি কিছু নয়। কিন্তু এ চাওয়াতে বাধ সাধে যাত্রাপথের ভোগান্তি। ছোট্ট এদেশের অবকাঠামোগত ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও বিশাল জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত জনপদে তা অপ্রতুল।

অধিকন্তু গণপরিবহনের সহজলভ্যতা ও কাঙ্খিত সেবাপ্রাপ্তি বিরাট চ্যালেঞ্জ।
প্রতিবছরই ভাড়া নৈরাজ্য, অতিরিক্ত যাত্রীচাপ, ফিটনেস, মানহীন গাড়ি ও দুর্ঘটনা, বাস-ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি, অসহনীয় দীর্ঘ যানজট, মাত্রাতিরিক্ত গতি, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, সড়কে বিশৃঙ্খলা, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, মহাসড়কে হাটবাজারসহ নানাবিধ ভোগান্তির কথা শোনা যায়। ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিতে সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপও দেখা যায়। তবুও টিকেট কালোবাজারি, চাঁদাবাজি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও দুর্ঘটনাসহ নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকারের আন্তরিকতা ও প্রয়াসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
 
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, এবার ঈদে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। এত বিশাল মানুষের ট্রাফিক সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হবে। কারণ ঈদের ছুটিতে দিনে গড়ে ৩০ লাখ মানুষকে ঢাকা ছাড়তে হবে যেখানে দিনে মাত্র ২২ লাখ মানুষ পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ ঈদ যাত্রায় অন্যান্য জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করবে। সমিতি ঈদের ছুটি দুইদিন বৃদ্ধির আহ্বান করেছে যাতে ট্রাফিক এড়িয়ে জনভোগান্তি লাগব করা যায়।  
বাস, ট্রেন, লঞ্চ, প্রাইভেটকার, বাইক ও অন্যান্য যানবাহনে মানুষ নাড়ির টানে শেকড়ে ফিরে যাবে। সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টার কারণে মানুষের ভোগান্তি দূর হয় না। প্রতিবছরই মিডিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায় না। বিশেষ করে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি, বাস, লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা।  
ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও আনন্দময় করতে ইতোমধ্যে প্রতিবছরের ন্যায় পুলিশ মহাপরিদর্শক টিকেট কালোবাজারি ও বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অতীত অভিজ্ঞতা বলে যথাযথ মনিটরিং ও সমন্বয়ের অভাবে সব প্রচেষ্টা বিফলে যায়। আমরা আশা করব পরিবহন নেতৃবৃন্দকে কাঙ্খিত যাত্রীসেবা নিশ্চিতে সরকার তার কঠোর অবস্থানের কথা জানাবে। কোনো অনিয়ম, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পেলে প্রশাসন তৎক্ষণাৎ ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিল করতে হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নজরদারি ও মনিটরিং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবে। পুরো ব্যবস্থাপনায় সুফল পেতে পর্যাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করতে হবে। টিকেট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।
ট্রেন ও বাসের ছাদে এবং লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা উচিত। অনলাইন ও অফলাইনে প্রাপ্ত অভিযোগ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করা সমীচীন। এছাড়াও সরকার বিআরটিসির সবগুলো সচল বাস এবং অতিরিক্ত ট্রেন ও কোচ যাত্রীসেবায় নিযুক্ত করা যুক্তিযুক্ত। দুর্ঘটনারোধে মহাসড়কে ছোটযান নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কে নজরদারি বাড়াতে হবে। সর্বোপরি যাত্রী নিরাপত্তা ও আনন্দময় ঈদযাত্রা নিশ্চিত করবে। যাত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষেরও সচেতন ও নিজের নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। স্বস্তির ঈদযাত্রা যাতে অন্তিমযাত্রা না হয় এটাই আমাদের চাওয়া।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

news24bd.tv/ডিডি