বর্ষবরণে প্রস্তুত কলকাতা

সংগৃহীত ছবি

বর্ষবরণে প্রস্তুত কলকাতা

অনলাইন ডেস্ক

ভারতে চলছে ভোটের আমেজ।  বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠজুড়েই চলবে ভোট পর্ব। আর সেই সন্ধিক্ষণে রাত পোহালেই বাঙালি ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বরণ করে নেবে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত সেজে উঠছে।

কলকাতার নিরিখে সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়ে থাকে দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীন এলাকায়। কলকাতার ঢাকুরিয়া এবং পার্ক স্ট্রিটের ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম সংলগ্ন সড়ক থেকে বের হবে ভাষা ও চেতনা সমিতির মঙ্গল শোভাযাত্রা।

এর সঙ্গে বের হয় ছোট পরিসরে আরও কয়েকটি শোভাযাত্রা। শুধু কলকাতা নয়, শহরের বাইরে কোচবিহার, রায়গঞ্জ, কল্যাণী, মধ্যমগ্রাম, শ্রীরামপুর, সল্টলেক, নদিয়া, নামখানা, চন্দননগর, নিউটাউনসহ বহু জায়গায় একই আদলে নববর্ষের শোভাযাত্র দেখা যায়।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বাংলার বুকে যারা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন এবং যারা তাতে অংশ নেন প্রায় সবাই বাম মনোভাবাসম্পন্ন। অর্থাৎ বাম দলগুলোকে সমর্থন করে থাকে।  

অষ্টম বছরে পা দিচ্ছে বাঘাযতীনের নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। রোববার (১৪ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় গাঙ্গুলি বাগান থেকে যাদবপুরের সুকান্ত সেতু পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সেই উপলক্ষে এখন তাদের প্রস্তুতি তুঙ্গে। রং-বেরঙের কাগজ কেটে তৈরি হচ্ছে মুখোশ, টুপিসহ আরও কত কী। শহরের নিরিখে সবচেয়ে বড় জাঁকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রা বের হয় বাঘাযতীন অঞ্চল থেকে। প্রতিবছর একটি থিম বা ভাবনার ওপর ভিত্তি করে সেজে ওঠে এ শোভাযাত্রা। এবারের ভাবনায় ‘বিভেদ ভুলে সম্প্রীতি’। এ বছর থাকছে ১০ ফিট উচ্চতায় বিশালাকায় মাটির টেপা পুতুল, বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যে সৃষ্টি বোঙা হাতি, মৎস্যকন্যার আদলে নৌকা ও আগ্রাসী বাঘ।

তবে উদ্যোক্তাদের প্রতিবারই একটি আফসোস থেকে যায়। বহু রাত জেগে প্রজন্মরা শোভাযাত্রার জন্য এ মুখোশ ও মূর্তি বানিয়ে থাকে। কিন্তু তা সংরক্ষণ করার জন্য এখন কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের সৃষ্টি আবার মাটিতেই মিশে যায়।

এবারে দুই শিল্পী প্রদীপ গোস্বামী ও সুদীপ রক্ষিতের তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে শেষ মুহূর্তের। তারা বলেন, এখানে কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় না। এবারে শোভাযাত্রায় থাকবে মুর্শিদাবাদের লাঠিখেলা। উদ্বোধন করবেন হাঁপু গানের শিল্পী তারাসুন্দরী। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউর রহমান, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, সঙ্গীত শিল্পী কাজী কামাল নাসিরসহ আরও অনেকে। মঙ্গল শোভাযাত্রা কমিটির বুদ্ধদেব ঘোষ বলেছেন, বিদ্বেষ ও বিভাজনের বিরুদ্ধে বাংলার মিলন ধর্মী লোকায়ত ধারাকে তুলে ধরে সম্প্রীতির নিদর্শন রাখতেই এ বর্ষবরণ উৎসব।

অপরদিকে ‘জাতীয় নববর্ষ উৎসব’ নামে দীর্ঘ ২৬ ধরে ভাষা ও চেতনা সমিতি কলকাতার বুকে বর্ষবরণ পালন করে আসছে। তার সম্পাদক ইমানুল হক বলেছেন, প্রতিবারে মতো ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পাশ থেকে আমাদের শোভাযাত্রা বের হবে। শেষ হবে রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন রানু ছায়া মঞ্চে। তবে এবার মুখোশ নয়, থাকছে রবীন্দ্র, নজরুল, নেতাজি, রামমোহনসহ বাংলার মনীষীদের ছবি। আর থাকছে হাতে টানা রিকশা। যদিও আমরা এ রিকশা আমানবিক মনে করি। তবু বাংলার ঐতিহ্য। তবে সবকিছুই তো মানুষ ভুলতে বসেছে। তাই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আর আমনবিক বলেই শিক্ষার্থীরাই রিকশার চাকা গড়াবে।

মুলত প্রতিবছর বাংলাদেশের পর দিন পশ্চিমবঙ্গে উদযাপিত হয় পহেলা বৈশাখ। তবে বাঙলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এবারে দুই বাংলায় একইসঙ্গে পালন করবে পহেলা বৈশাখ। তবে এবারে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতবাস বৈশাখী আয়োজন থেকে কিছুটা বিরতি নিয়েছে। তাদের অভিমত, ঈদে বেশির ভাগ অফিসার দেশে গেছে। তাই ২২ এপ্রিল বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠান করবো।

news24bd.tv/DHL

এই রকম আরও টপিক