গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটাবে এআই, দায়ী থাকবে যুক্তরাষ্ট্র : ইউভাল নোয়াহ হারারি

ইউভাল নোয়াহ হারারি

গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটাবে এআই, দায়ী থাকবে যুক্তরাষ্ট্র : ইউভাল নোয়াহ হারারি

অনলাইন ডেস্ক

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যাতে ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী যেমন অ্যামাজন, মাইক্রসফট এবং গুগলের প্ল্যাটফর্মে এআই অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারী বিদেশি গ্রাহকদের তথ্য তদন্ত করার জন্য প্রকাশ করা যায়। এই প্রস্তাবটি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। প্রস্তাবের অধীনে, মার্কিন সরকার বিদেশি গ্রাহকদের নাম এবং আইপি ঠিকানার মতো বিশদ বিবরণ দিতে সক্ষম হবে এবং বিদেশি কোম্পানির ডেটা সেন্টার এবং সার্ভারগুলিতে অ্যাক্সেস সীমিত করতে পারবে, যা এআই প্রশিক্ষণ ও হোস্টিংয়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরীক্ষায় যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এ বছরের চলতি মাসে।

। সূত্র, বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণে এআই খাতের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এ কারণে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মধ্যে সন্দেহ জাগতে পারে এ কারণে যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যনব দেশের গোপন তথ্য জেনে ফেলবে সেজন্য।
 
এআই প্রযুক্তি নিয়ে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। যুদ্ধাস্ত্র তৈরিসহ বিধ্বংসী কার্যক্রমে এ প্রযুক্তির ব্যবহার মানব সভ্যতাকে বিলুপ্তির মুখে ফেলতে পারে।  
অ্যান অ্যাকশন প্ল্যান টু ইনক্রিভ দ্য সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অব অ্যাডভান্সড এআই শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) ও উন্নত এআইয়ের উত্থান পারমাণবিক অস্ত্র প্রবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণাপত্রটি তৈরি করতে ১৩ মাস ধরে ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডিয়ান সরকারের প্রতিনিধি, ক্লাউড পরিষেবা সরবরাহকারী, এআই নিরাপত্তা সংস্থা, সিকিউরিটি ও কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
অ্যান অ্যাকশন প্ল্যান টু ইনক্রিভ দ্য সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অব অ্যাডভান্সড এআই শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) ও অ্যাডভান্সড এআইয়ের উত্থান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দিতে পারে।  
সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা যায়, গবেষণাপত্রটি তৈরি করতে এক বছরের বেশি সময় ধরে ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।  
এ প্রসঙ্গে টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউভাল নোয়া হারারি বলেছেন, এআইয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে মানুষ টিকে থাকতে পারবে কি না জানি না । তবে এটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।  
মানবজাতির ইতিহাস নিয়ে ইউভাল নোয়াহ হারারি-র লেখা বই ‘সেপিয়েন্স’ পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান নিয়ে চিন্তিত এই ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক। হারারি বলছেন, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি যা আমাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। দ্য টেলিগ্রাফ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এআই নিয়ে তার চিন্তা ও দর্শন।
দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এআই প্রসঙ্গে ৪৭ বছর বয়সি হারারি বলেন, 'ইতিহাসে এটাই প্রথম প্রযুক্তি যা গল্প তৈরি করতে পারে। ' তার দৃষ্টিতে, 'গল্পের' ওপর আমাদের সামষ্টিক বিশ্বাস—ধর্মে, অর্থনীতিতে ও অপর জাতির প্রতি—পৃথিবীতে মানবজাতির আধিপত্য জোরদার করেছে।
এখন এআইও এমন গল্প বুনতে পারে। এআই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রযুক্তির ভালো ও ক্ষতিকর উভয় দিকই আছে। একসময় যাকে বহুদূরের ও তাত্ত্বিক জিনিস মনে হতো, আজ তা বাস্তব, হাতছোঁয়া দূরত্বের। এ কারণেই গত মাসে চ্যাটজিপিটির মতো সফটওয়্যার নিয়ে গবেষণা স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে কয়েক হাজার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি যে চিঠি দেন, তাতে শামিল হয়েছিলেন হারারিও। উল্লেখ্য, চ্যাটজিপিটি সৃজনশীল লেখা তৈরিতে সক্ষম।
অন্যান্য এআই প্রযুক্তি ছবি ও শব্দেও এমন সৃজনশীল ক্ষমতা দেখাতে পারে। হারারি বলেন, 'নতুন প্রজন্মের এআই শুধু মানুষের তৈরি কনটেন্টই ছড়াচ্ছে না, নিজেও কনটেন্ট তৈরি করছে। কল্পনা করুন তো এমন এক পৃথিবীর কথা, যেখানে সিংহভাগ লেখা, গান, টিভি সিরিজ, ছবির স্রষ্টা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কেমন লাগবে সেই পৃথিবীতে থাকতে? এই ব্যাপারটির অর্থ আমরা বুঝতে পারছি না। সংস্কৃতি যদি এআইয়ের দখলে চলে যায়, এর পরিণতি কী হবে?'
তিনি বলেন,অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে এআই স্রেফ মানুষের ছবি বা ভিডিও তৈরিতেই আটকে নেই। সে আমাদের প্রিয় বন্ধু বা আত্মীয়ের ভিডিও বানাচ্ছে। কারণ ঘনিষ্ঠ মানুষজন আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দেখা যাবে, তাদের মতো চেহারার মানুষের ভিডিও বানিয়ে এআই জলবায়ু পরিবর্তন, টিকা বা অভিবাসীদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করছে।
হারারি বলেন, 'এটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে বিশেষ করে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য বেশি বিপজ্জনক। গণতন্ত্রের জীবনাবসান হবে। '

news24bd.tv/ডিডি