মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা

অনলাইন ডেস্ক

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। জবাবে ইসরায়েলও প্রতিশোধ নেওয়ার উপায় খুঁজছে, সাজাচ্ছে নানা পরিকল্পনা।  হামলার পর এখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই সমগ্র বিশ্বের নজর। এই হামলার মাধ্যমে যেন আবারও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে।

 হামলার পর ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জর্ডান, চীন, রাশিয়া থেকে শুরু করে তুরস্কের নানামুখী তৎপরতা ও বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।  

একদিকে গাজায় টানা ৬ মাসের বেশি সময় ধরে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক ও নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে তাদের বাহিনী। হত্যা করেছে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষকে।

এর মধ্যে ফুটফুটে সুন্দর শিশুই খুন হয়েছে ১৪ হাজার। গাজা গণহত্যা ইস্যুতে যখন মিত্রদের কাছেই চরমভাবে নাজেহাল হচ্ছিলো ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ; ঠিক সে সময়ে ইরানের এই হামলাকে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবনের পুনর্জন্ম বলে আখ্যয়িত করছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিশ্লেষকরা। সে কারণেই গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যেই নেতানিয়াহু সরকার ইরানের হামলার কড়া জবাব দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে পাল্টা হামলা চালালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে বলে ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করেছে ইরান।

ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা নিয়ে যা বলল সৌদি

মুলত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলের হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হলে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধের আগুন। এর প্রতিশোধে শনিবার মধ্যরাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে মিলে জর্ডানও ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার অভিযোগে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে এসেছে জর্ডানের নাগরিকরা। ইরানের এ হামলার খবর সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছিল তা অস্বীকার করেছে দেশটি। এ উত্তেজনার আগুন আরও উসকে দিয়েছে চীনের মন্তব্য।  

চীন বলেছে, তারা বিশ্বাস করে, ইরান তার সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষা করে পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দিতে সক্ষম। মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা এড়াতেও তারা সক্ষম। এ মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।  

(Photo Illustration: Jack Forbes; Photos: Amir Levy/Getty Images, Iranian Leader Press Office/Handout/Anadolu Agency via Getty Images, Getty Images (4))

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, ইরান তাদের হাতে থাকা কার্ড খেলে দিয়েছে। ছয় মাস ধরে তারা দেখছে, তাদের মধ্যপ্রাচ্যে কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে।

ইরানের হামলার জবাব দেওয়া হবে 
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব দেওয়া হবে। ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েল ঠিক কী পদক্ষেপ নেবে, তা নির্দিষ্ট করেননি জেনারেল হারজি। তাছাড়া কবে, কখন ইসরায়েল এ জবাব দেবে, তার কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি তিনি। এদিকে, ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে ইসরায়েলের সরকারের দিক থেকে কিছু জানানো হয়নি।

পাল্টা হামলা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে: ইরান
ইরানে পাল্টা হামলা চালানো হলে সেকেন্ডের মধ্যে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছে তেহরান।   ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এ হুঙ্কার দিয়েছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি যে, ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনো অপরাধীর ন্যূনতম পদক্ষেপ অবশ্যই কঠোর, বিস্তৃত এবং বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে। এর  আগে ইরানের উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানি দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েলের যে কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে তেহরানের পাল্টা আক্রমণ ‘মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার হবে’। ইরান জবাব দেওয়ার জন্য আর ১২ দিন অপেক্ষা করবে না।

ইরানের রাজনীতিবিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানি
ইরানের রাজনীতিবিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানি

অন্যদিকে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল ফজল শেকারচি ইসরায়েলের শাসকগোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের পক্ষে অবস্থান না নিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধানদের পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, শিশু-হত্যাকারী ইসরায়েলের সন্ত্রাসী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন বন্ধ করুন। তিনি বলেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান প্রমাণ করেছে যে, তারা যুদ্ধবাজ নয় এবং যুদ্ধের বিস্তার চায় না। ইসরায়েল যদি দুর্বৃত্তমূলক কোনো আগ্রাসন চালায় তাহলে ইরান আরও শক্তিশালী জবাব দেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি 
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বেশ কিছু দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন। সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক্স পোস্টে ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ‘আজ সকালে আমি ৩২টি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিতে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। ’ তিনি ইরানকে প্রতিহত এবং দুর্বল করে দিতে দেশটির ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে (আইআরজিসি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েল কাৎজ বলেন, আর দেরি নয়। ইরানকে এখনই থামাতে হবে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তার সরকার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার জবাবে সামরিক প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করছে। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ‘সীমিত’ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে ইসরায়েল। ইরানের বাইরে ইরান-সমর্থিত শক্তিগুলোর ওপর হামলা চালাতে পারে ইসরায়েলি বাহিনী।  

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার পথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ
এরই মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইসরায়েল অবশ্য আগেই ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে- সপ্তাহান্তে ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পর তারা এখন ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, তিনি ‘আগামী দিনগুলোতে’ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছেন। অন্যদিকে ইইউয়ের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, তার ব্লক এটি নিয়ে কাজ করছে।

ইসরায়েল অবশ্য ইতোমধ্যেই তার মিত্রদের প্রতি তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। মূলত ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত বছরের অক্টোবরে শেষ হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য একটি বিস্তৃত চুক্তির সাথে যুক্ত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে এবং বিভিন্ন সময়ে নতুন নিষেধাজ্ঞাও যুক্ত করেছে।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের জন্য একমাত্র দায়ী নেতানিয়াহু
গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পেছনে দায়ী শুধুমাত্র ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকার, এমন মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আঙ্কারায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের জন্য একমাত্র দায়ী নেতানিয়াহু: এরদোয়ান

প্রভাবশালী এই বিশ্বনেতা আরও বলেন, আঞ্চলিক সংঘাত উসকে দেয়ার অপচেষ্টা করছে ইসরায়েল। সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ভয়াবহ হামলা ছিল তাদের সেই নীলনকশারই অংশ।

তিনি আরও বলেন, গাজায় ইসরায়েলের ‘নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা’ থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে এমন পায়তারা করছেন নেতানিয়াহু। তিনি আরও বলেন, গাজায় সহিংসতা যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন নতুন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়তে থাকবে।

ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে ইরানের হামলার নিন্দা জানানোয় তিনি পশ্চিমাদের সমালোচনাও করেন। এরদোয়ান বলেন, যখন ফিলিস্তিনের গাজা ও সিরিয়ার ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েল হামলার চালায় তখন পশ্চিমারা নিশ্চুপ থাকে।

ইসরায়েলকে সহযোগিতার কথা অস্বীকার সৌদি আরবের
ইরানি মিসাইল হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করার কথা অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। একটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম সৌদি সরকারি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে এই সহযোগিতার কথা জানিয়েছিল। আল আরাবিয়া নিউজ নিজেদের সোর্সের মাধ্যমে এই খবর যাচাই করতে গেলে ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই সোর্স আল আরাবিয়া নিউজ জানিয়েছে, সরকারের কোনো অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ইসরায়েলে ইরানি হামলা ঠেকাতে সৌদি আরবের অংশগ্রহণের বিষয়ে কিছুই ছাপানো হয়নি।

ইসরায়েলকে সহায়তার অভিযোগ, অবস্থান স্পষ্ট করলো সৌদি

ইসরায়েলকে সহায়তা করায় জর্ডানে বিক্ষোভ 
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান।  

ইসরায়েল ইস্যুতে সুর বদল জর্ডানের
ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার জন্য এবার ইসরায়েলকে দায়ী করল জর্ডান। ইরানের হামলার এক সপ্তাহ না পেরুতেই নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করে এ অভিযোগ তোলা হয়। ইরানের ছোড়া বেশ কিছু ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছার আগেই ভূপাতিত করে মুসলিম বিশ্বে বেশ সমালোচিত জর্ডান। এ পরিস্থিতির মধ্যে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে দেশটির পক্ষ থেকে বক্তব্য এলো।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বার্লিনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেন। আয়মান বলেন, বিশ্বের উচিত নেতানিয়াহুকে থামানো। বর্তমান উত্তেজনা বাড়ানোর পেছনে তিনিই দায়ী।

ইসরায়েল ইস্যুতে এবার সুর বদল জর্ডানের
একটি আন্তর্জাতিক সভায় জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি। ফাইল ছবি।

জর্ডানের এ নেতা আরও বলেন, সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলায় কর্মকর্তা নিহতের প্রতিশোধ নিয়েছে দেশটি। ইরান বলেছে, তারা আর কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। নতুন করে উত্তেজনাও বাড়াতে চায় না। কিন্তু নেতানিয়াহু এটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ, তিনি গাজা যুদ্ধ থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরাতে চাইছেন। এ কাজে ইরান ইস্যু ব্যবহার করা হচ্ছে।

তেহরানের ওই হামলা প্রতিরোধে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ ময়দানে প্রকাশ্যে যুক্ত হয়েছে মুসলিম দেশ জর্ডানও। তারা কয়েক ডজন ইরানি ড্রোনগুলো করে ভূপাতিত করেছে।

পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন ‘নিরাপত্তার খাতিরে’ সাময়িক সময়ের জন্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বন্ধ রেখেছে তেহরান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে সোমবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসির কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার ঝুঁকি আছে কি না?

ইরান গত শনিবার ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়

জবাবে আইএইএ প্রধান বলেন, এমন আশঙ্কার বিষয়ে সব সময়ই উদ্বেগ রয়েছে। রোববার আইএইএর পরিদর্শকদের ইরান সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তার খাতিরে দেশটির সব পারমাণবিক স্থাপনা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হবে। সোমবার স্থাপনাগুলো খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে পরিদর্শকদের পাঠানো হবে না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম ইরান-চীন 
ইরান তার সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষা করে পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দিতে সক্ষম। মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা এড়াতেও তারা সক্ষম। এমনটা মনে করে চীন।

রয়টার্সের ওই খবরে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এই ফোনালাপে ইরানের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াংকে ব্রিফ করেন আবদুল্লাহিয়ান।

ইরানকে সমর্থন করবে চীন: শি

এদিকে, মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, ওয়াং বলেছেন, “আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু না করার বিষয়ে ইরানের জোরালো অবস্থানের প্রশংসা করে চীন। ” ওয়াং জানিয়েছেন, ইরানের দূতাবাসে (কনস্যুলেট) হামলার তীব্র নিন্দা জানায় চীন। তারা দৃঢ়ভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে। তারা এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করে।

আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে ইসরায়েল
১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নিয়োগ দেওয়া স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে গিয়ে বিদেশের মাটিতে হত্যাকাণ্ড চালানো বিধিবহির্ভূত।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ইসরায়েল ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, ইসরায়েল এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যাতে মনে হয়, তেহরান তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে যাচ্ছিল অথবা হামলার জন্য কোনো অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী পাঠাচ্ছিল। ওই হামলা যে আইনগতভাবে বিধিবদ্ধ, তেমন প্রমাণও দিতে পারেনি। হামলার আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকেও জানায়নি। অথচ বিষয়গুলো জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি।

ঝড়ের আগের ‘শান্ত অবস্থায়’ ইরান-ইসরায়েল?

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদের অধীন অন্য কোনো দেশে সামরিক শক্তি প্রয়োগ নিষিদ্ধ। তবে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে তা লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল সরকার।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে ইসরায়েল লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)। ইসরায়েলের দাবি, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের অধিকাংশই রুখে দেওয়া গেছে। ওই হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার দ্বিতীয় দফায় ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

সূত্র বলছে, ইরানে শিগগিরই পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। তবে কখন ও কীভাবে হামলা হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হেরজি হালেভিও শুধু এটুকু বলেছেন, ইরানের বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে গাজা সংঘাতের কারণে আগে থেকেই সংকটে থাকা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি এড়াতে ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিষয়টি মাথায় রেখে ইসরায়েলও ‘সীমিত পরিসরে’ পাল্টা জবাব দিতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা এনবিসিকে বলেছেন, ইরানের ভূখণ্ডের বাইরে দেশটির সামরিক বাহিনী ও ইরানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল।

news24bd.tv/aa