যারা ময়মনসিংহ–ঢাকা রোডে নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের মধ্যে অনেকেই গাজীপুরের শালবনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মুগ্ধ হয়ে যান। বনের সৌন্দর্য তো মুগ্ধ করেই, কিন্তু বসন্তের শেষে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে শালবনের ভেতর হঠাৎ লালা সাদা গোলাপি রঙ উঁকি দেয়। আমি বাস থেকে যতবার দেখেছি ততবার বাস থামিয়ে দেখতে ইচ্ছে করেছে, ভেবেছি আসলে কী ফুল এগুলো।
এই ফুলগুলো হলো শালবনের অলংকার শটি ফুল।
সারা বন জুড়ে ফুটে আছে হাজার হাজার শটি ফুল। গোলাপি রঙের ফুলই বেশি, তবে সাদা কিংবা টকটকে লাল রঙের ফুলও চোখে পড়ে।
শটি গাছের ব্যবহার ও উপকারিতা
অতি প্রাচীন কাল থেকেই এই গাছের বিভিন্ন ব্যবহার হয়ে আসছে, পেটের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভেষজ এই গাছ, রূপচর্চাতেও বেশ জনপ্রিয়। অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে এই গাছের যেমন- বুনো হলুদ, শটি, হইল্ল্যা, কস্তুরী হলুদ।
এটি ওয়াইল্ড টারমারিক (Wild Turmeric) হিসেবেও পরিচিত। শটি গাছের কন্দ শুকিয়ে পরিষ্কার করে গুড়ো করে এক ধরনের ময়দার মতো খাদ্য তৈরি করা হয়, যা আঞ্চলিকভাবে পালো নামে পরিচিত। শিশু খাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল।
কবিরাজী মতে, শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ খাবার পালো। মানব দেহের বিভিন্ন জটিল রোগ সারাতে প্রাচীন কাল থেকে লোকজ চিকিৎসায় শটির পালোর ব্যবহার ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পালো একটি পুষ্টিকর ভেষজ খাবার। সময়ের বিবর্তনে জনস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী পালো এখন বিলুপ্ত প্রায়। ১৫ থেকে ২০ কেজি কাঁচা শটির কন্দে এক কেজি খাওয়ার উপযোগী পালো তৈরি হয়। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এই পালো স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ২-৩ বছরেও নষ্ট হয় না।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, শটির পালোর উপকারিতা স্বাস্থ্যের জগতে আলোচিত আকর্ষণীয়। জয়েন্টগুলোতে প্রদাহ ও ব্যথা দূর করে শরীর থেকে টক্সিক অপসারণ করে, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন চর্মরোগের জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক প্রতিকার। এটি অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হিসেবেও কাজ করে। পালো সেবনে পাকস্থলির স্বাস্থ্য ও হজম শক্তি ঠিক থাকে। এছাড়া ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং এবং অন্যান্য কারণে হজমের সমস্যাগুলো নিরাময় করে। আলসার প্রতিরোধ করতে পারে। শিশুদের জন্যও এটি একটি আদর্শ খাবার।
সৌন্দর্য পিপাসুরা এই সময়ে একবার হলেও ঘুরে আসুন ঢাকা থেকে খুব কাছে গাজীপুর-ভাওয়াল-জয়দেবপুরের শাল বাগানে। এখন গাছের নতুন পাতারা যেমন হলদে সবুজের মিশ্রণে নয়নাভিরাম রঙে সেজেছে আর বনের নিচে তেমনি রূপ ছড়িয়ে বসে আছে শটি ফুলেরা।
লেখক : বেনু দত্ত
প্রকৃতি সন্ধানী