লোকসভা নির্বাচনে মোদির জয় নির্ধারণ করবে দক্ষিণ ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

লোকসভা নির্বাচনে মোদির জয় নির্ধারণ করবে দক্ষিণ ভারত

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজের নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন ক্ষমতাসীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আইনসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪০০টিতে জয়লাভ করবে, যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টি একাই ৩৭০ আসনে জিতবে। ভারতের ৭৭ বছরের ইতিহাসে মাত্র একবার এমনটা হয়েছিল, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর বর্তমানে বিরোধী দলে থাকা কংগ্রেস ৪০০টি আসন পেয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারতের সাত ধাপের ও ৪৪ দিনব্যাপী নির্বাচনে বিজেপির ৪০০ আসন পাওয়া নির্ভর করছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের ওপর, যেখানে এখন পর্যন্ত দলটির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।  

ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের নিবাস দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে।

এখানকার তামিল নাডু, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা এবং তেলেঙ্গানা রাজ্য এবং বিশেষায়িত অঞ্চল পন্ডিচেরি ও লক্ষদ্বীপ হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। ভারতের জিডিপির ৩০ শতাংশের যোগান দেয় এই দক্ষিণাঞ্চল।

যদিও মোদি বলে থাকেন তার সরকার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি দক্ষিণ ভারতের ১৩১টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল, তাও বেশিরভাগ আসন ছিল কর্ণাটক থেকে। তামিল নাডু, কেরালা এবং অন্ধ্র প্রদেশে বিজেপি সেবার কোনো আসনই জিততে পারেনি, এবং পন্ডিচেরি ও লক্ষদ্বীপে তারা তাদের আসন হারিয়েছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন এবারও এমনটি হতে যাচ্ছে।

নয়াদিল্লী ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফোর পলিসি অ্যানালাইসিসের চেয়ারম্যান মোহন গুরুস্বামীর মতে, অন্ধ্র প্রদেশ এবং অন্যান্য দক্ষিণী রাজ্যে বিজেপির কোনো জনপ্রিয়তা নেই। বিজেপির সাথে যারাই জোট করবে তারাই এখানে নির্বাচনে পরাজিত হবে।

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের স্বামী এবং অর্থনীতিবিদ পারাকালা প্রভাকরের মতে, এবারের নির্বাচনে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যকার বিভাজন প্রকট হয়ে ধরা দেবে।

শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে উত্তর ভারতের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে দক্ষিণ ভারত। কেরালা রাজ্যে নবজাত শিশু মৃত্যহার প্রতি ১০০০ শিশুতে মাত্র ৬টি শিশু, যা যুক্তরাষ্ট্রের সমান। কিন্তু উত্তর ভারতের মধ্য প্রদেশে শিশু মৃত্যুহার প্রতি ১০০০ শিশুটে ৪৮টি শিশু, যা আফগানিস্তানের সমপরিমাণ। এ কারণেই বিজেপির ধর্মভিত্তিক রাজনীতি উত্তর ভারতে জনপ্রিয়তা পেলেও দক্ষিণ ভারতে তেমন সুবিধা করতে পারেনি।

সাবেক মন্ত্রী ও বিজেপির সাথে জোট করায় অন্ধ্র প্রদেশের প্রভাবশালী তেলেগু দেসাম পার্টি থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করা কিশোর চন্দ্র দেওয়ের মতে, উত্তর ভারতে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা গেলেও দক্ষিণ ভারতে তা সম্ভব নয়। আমাদের এখানে রাম মন্দির কোনো বিষয় নয়।

দেওয়ের সাথে সুর মিলিয়ে তামিল নাডুর তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পালানিভেল থিয়াগা রাজান জানান, শট শট বছর ধরে দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরা শান্তিতে সহাবস্থান করছেন। সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর যেকোনো প্রচেষ্টা এখানে ব্যর্থ হবে।

শুক্রবারের নির্বাচনেই বুঝা যাবে বাস্তবতা কি বলে।

সূত্রঃ আল জাজিরা

news24bd.tv/ab