শিশুদের শরীরে ব্যথার নানা কারণে হতে পারে। যেমনঃ গ্রোয়িং পেইন, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস, লুপাস (সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস), ভিটামিন-ডি সল্পতা, লাইম ডিজিজ, লিউকেমিয়া, বাত জ্বর, পার্থেস ডিজিজ, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম, কোভিড-১৯, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি।
গ্রোয়িং পেইন
শিশুরা সারাদিন ছোটাছুটি, খেলাধুলা করে। সন্ধ্যায় বা রাতে বিছানায় যাওয়ার পর তারা পায়ে বা শরীরে ব্যথার কথা বলে।
জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (জিআইএ)
এটি শিশুদের বাতরোগ যার কারণে শিশুরা ব্যথার কথা বলে। এই রোগে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে বা গিড়ায় দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হয়।
প্রদাহের লক্ষণ গুলো হলো, গিড়া ব্যাথা, ফুলে যাওয়া ও নড়া চড়া করতে না পারা। তাছাড়া এই রোগে জয়েন্ট স্টিফনেস হয়, যাতে হাঁটলে বা এক পজিশনে দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে শিশুদের ক্ষুধামন্দা, জ্বর বা জ্বরভাব, শরীরে র্যাশ দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
লুপাস (সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস)
এটি একটি অটোইমিউন রোগ যাতে একের অধিক জয়েন্টে ব্যথা বা স্টিফনেস থাকে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে, বুকে ব্যথা, চুলপড়া, জ্বর চর্মরোগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
লাইম ডিজিজ
এটি ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট একটি রোগ। এই রোগে শিশুদের জয়েন্ট ও মাংশপেশী দুটোতেই ব্যথা থাকে। সাথে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ত্বকে ফুসকুড়ি ও জ্বরও থাকতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
লিউকেমিয়া
এটি রক্তের রোগ। যা হলে রক্তের শ্বেত রক্তকনিকা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং রক্তের স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যহত হয়। লিউকেমিয়াতে শিশুদের হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা থাকে। তাছাড়া অন্যান্য উপসর্গগুলো যেমন: নাক দিয়ে রক্তপাত, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাঁধা, দাঁত বা মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, জ্বর, ক্ষুধামন্দা, ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
বাতজ্বর
বাতজ্বরকে ইংরেজিতে বলে রিউমেটিক ফিভার, এটা শিশুদের প্রদাহজনিত রোগ। সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের বাতজ্বর বেশি হয়। এই জ্বর মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ড, মেরুদন্ড, ত্বক ইত্যাদি স্থানকে আক্রান্ত করে। এই রোগে হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর, চামড়ায় লাল দাগ, প্রদাহজনিত কাঁপুনি ও খিঁচুনি, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
পার্থেস ডিজিজ
পার্থেস ডিজিজ হিপ জয়েন্ট বা ফিমারের মাথায় রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের ফলে শুরু হয়। সাধারণত ৩-১১ বছর বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। এই রোগে নিতম্ব বা কুঁচকি, হাঁটু, গোড়ালিতে ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও হাঁটাচলা বা মুভমেন্টে সমস্যা হয় এবং আক্রান্ত পা খাটো হয়ে যেতে পারে। এই রোগেও দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম
এটি একটি স্নায়বিক ব্যাধি। রাতে ঘুমনোর সময়ে পায়ে চুলকানির সাথে সাথে পায়ে হালকা খিঁচুনি, ঝাঁকুনি বা পায়ের ভেতরে কোনও অস্বস্তি অনুভব করাকে রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বলা হয়। অনেক শিশু এই রোগে ভুগে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে নির্দিষ্ট ভিটামিনের যথাযথ পরিমাণ থাকা খুবই জরুরি। তাই শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে।
কোভিড-১৯
যেসব শিশুরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলো তাদের কিছু শারীরিক জটিলতা বা ব্যথা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থাকে পোস্ট কোভিড সিনড্রম বলা হয়। দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশিতে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
জন্মগত ত্রুটি
মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ভ্রূণের ত্রুটি ও অস্বাভাবিকত্বের কারণে অনেক শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অধিক আঙ্গুল, কম আঙ্গুল, জোড়া আঙ্গুল, কাঁকড়ার মতো আঙ্গুল, হাত বা পা না থাকা ইত্যাদি অনেক ধরণের জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়। এসব ত্রুটির জন্য শিশুদের বিভিন্ন রকম ব্যথা ও দৈনন্দিন চলাফেরায় সমস্যা হয়। সবচেয়ে বেশি পায়ের পাতার গঠনে সমস্যা দেখা দেয়, ফ্লাটফুট বা পেসকেভাস জাতীয় পাতার বিকৃতি হতে পারে। এতে করে পাতা ব্যথা হয়। হাঁটা-চলাফেরায় কষ্ট হয়। এ জন্য একজন রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রয়োজনে জুতা কারেকশন করা লাগতে পারে।
অন্যান্য
ভিটামিন ডি এর অভাব এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুদের হাড় ব্যথা হতে পারে। ফলে অনেক সময় শিশুদের পা বেঁকে যেতে পারে (রিকেটস)। সেক্ষেত্রে সকালের রোদটা খুবই উপকারী ভিটামিন ডি এর জন্য। এছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ডিম, দুধ, কলিজা, খাসীর পায়া, ঢেঁকিছাটা চাল, দেশী মুরগী, পালং শাক ইত্যাদি খেতে হবে।
লেখক : বাত ব্যথা প্যারালাইসিস পঙ্গুত্ব আর্থ্রাইটিসে রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ,
সহযোগী অধ্যাপক , আইআইএইসএস ও কনসালটেন্ট ,ডিপিআরসি।
news24bd.tv/health