মধুখালীতে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, আহত ৫

মধুখালী থানা

মধুখালীতে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, আহত ৫

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গণপিটুনিতে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত এবং আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।  
নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন, মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ২ ছেলে আশরাফুল (২১) ও আরশাদুল (১৫)।

ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত।

এলাকাটি হিন্দুবসতি অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙে ফেলে তারা।
এ সময় বাইরে থেকে কেউ ওই গ্রামে যেতে পারেনি।  

তপতি মণ্ডল নামে ওই গ্রামের এক নারী জানান, তিনি মায়ের ঘরে (কালীমন্দির) সন্ধ্যাবাতি দিচ্ছিলেন, তখন শ্রমিকরা জানালা দিয়ে দেখছিলেন কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা। তারপর আমি বাড়ি গিয়েছিলাম ঘোষি নিতে। তখন ওরা (শ্রমিকরা) রড ওঠানামা করতেছিল আর নিজেরাই বকাবাজি করতেছিল। তারপর আমি চিৎকার শুনতে পাই। এগিয়ে গিয়ে দেখি, মা একদম পুড়ে গেছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেল। এই যা। তারপর কী হলো তা তিনি দেখেননি।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। পাশাপাশি ফরিদপুর থেকে র‍্যাব সেখানে পৌঁছেছে। থেমে থেমে সেখানে ফাঁকা গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সিধলাজুড়ি নামক স্থানের কাছে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, এখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলেন। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ওসি ফোর্সসহ এখানে আসে। তাদের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ইউএনও ছিলেন। তারা এখানে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে আমরা ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ এসে তাদেরসহ আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে হাসপাতালে পাঠাই।  

তিনি বলেন, এখনো (রাত ১টার দিকে) আশেপাশে থেকে অনেকে লাইট মারছে, চিৎকার করছে। আমরা সারারাতই পাহারা দেব।

পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। গ্রামবাসীসহ সবাইকে অনুরোধ করবো কেউ যেন আইনকে নিজের হাতে তুলে না নেয়। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি মহোদয় নিজেও সবসময় খবরা-খবর রাখছেন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের জানান, এখানে পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সবার অবস্থাই খারাপ।

news24bd.tv/আইএএম