ভারতে কে হচ্ছেন জয়ী 

আঝ ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন--ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছবি।

১৮তম লোকসভা নির্বাচন

ভারতে কে হচ্ছেন জয়ী 

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের ১৮তম লোকসভার নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) । ৫৪৩টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে সাত দফায়। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য ভোটে লড়ছেন।  বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিপরীতে লড়াই করছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট।

কংগ্রেসসহ দুই ডজনেরও বেশি বিরোধী দল এই জোটে রয়েছে।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রধান নরেন্দ্র মোদি এবারও জিততে পারলে  ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন। বিভিন্ন সমীক্ষাও বলছে মোদির জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দীর্ঘ শাসনকালের ফলে জনসমর্থন ‘ইন্ডিয়াজোট’র প্রতিও বেড়েছে।
 কারণ তাদের বিভিন্ন দলের ব্যাংক একাউন্ট জব্দকে ভোটাররা ভালোভাবে নেননি।
ভারতে  ৮০% মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নরেন্দ্র মোদি যেভাবে ধর্ম আর ধর্মীয় প্রতীকগুলিকে ব্যবহার করেন, তা খুবই কার্যকরী হয়।
এ বছরের নির্বাচনে মোদির প্রধান স্লোগান হয়ে উঠেছে, ‘এবার চারশো পার’, অর্থ তার দল সংসদে চারশোটি আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তবে সংসদের নিম্ন কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাদের প্রয়োজন ২৭২টি আসন। গত নির্বাচনে, ২০১৯ সালে দলটি ৩০৩ টি আসনে জয়ী হয়েছিল।
এবারও মোদির প্রধান সেনাপতি হিসেবে কাজ করছেন অমিত শাহ। মুণ্ডিত মস্তক, গেরুয়া বসন পরা সন্ন্যাসী থেকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যোগী আদিত্যনাথ।
তাদেরকে ভোটারদের বড় অংশ মনে করেন তারই হিন্দু ধর্মের আসল রক্ষক।  
অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বলে দেশটিতে বেশি জনপ্রিয় রাহুল গান্ধী। কিন্তু ভোটের মাঠে কৌশলগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকায়  কখনও মন্ত্রী হননি, কিন্তু সবচেয়ে পরিচিত বিরোধী নেতা। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের অনেকটাই বংশ পরম্পরায় পাওয়া – দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে তার ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী এবং বাবা রাজীব গান্ধী দুজনেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার পরিবারের দুইজন ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী উগ্রপন্থীদের হামলায় নিহত হয়েছেন।  
প্রায় এক দশক আগে যখন কংগ্রেস শেষবার সরকারে আসীন ছিল, তখন রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধীকে ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী বলে মনে করা হতো। তবে গত কয়েক বছরে ৭৭ বছর বয়সী মিসেস গান্ধীর যেমন শারীরিকভাবে অসুস্থ। তেমনই রাজনীতিতে তার প্রভাবও কমেছে। আর রাজীব গান্ধীকে ভোটাররা সহজকথায়   ভালো মানুষ মনে করলেও তাকে দিয়ে কাজ হবে না –এমন ধারণা পোষণ করেন।  
এবছর জানুয়ারি মাসে মিসেস গান্ধী সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাই এই লোকসভা নির্বাচনে তিনি লড়াই করছেন না।
গান্ধী পরিবারের আরও একটি নাম প্রতি নির্বাচনের আগেই আলোচনায় উঠে আসে। তিনি হলেন মিসেস গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কা। যদিও তিনি কখনও লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতোই অনেকটা দেখতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অবশ্য কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান আর মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কারণে প্রশংসিতও হন। এবারও তার সমর্থকদের মধ্যে থেকেই দাবি উঠেছিল যে তিনি যেন নির্বাচনে দাঁড়ান।
বিরোধী নেতাদের মধ্যে আর যার নাম আলোচনায় রয়েছে, তিনি হলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি এখন অবশ্য গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। তিনি প্রথম প্রচারের আলোয় উঠে এসেছিলেন দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনকারী হিসাবে। তার দল আম আদমি পার্টি বিজেপি আর কংগ্রেসকে হারিয়ে একটানা তিনবার দিল্লির শাসন ক্ষমতায় আছে। আবার পাঞ্জাবেও ওই দলটিই সরকার চালায়।
ভোটের মাঠে প্রতিটি দল বা জোটই ভোটারকে আকৃষ্ট করতে নির্বাচনী ইশতেহারে কিছু বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।  
মোদির বিজেপি ভোটারদের বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উত্তরাঞ্চলীয় শহর অযোধ্যায় গড়ে ওঠা হিন্দুদের ভগবান রামের মন্দির। হিন্দুত্ববাদীরা ১৯৯২ সালে যে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেই জায়গাতেই গড়ে উঠেছে এই মন্দিরটি। সেই ঘটনার পরে যে দাঙ্গা বেঁধেছিল, নিহত হয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। এবছর জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী ওই মন্দিরটির উদ্বোধন করেন। সেই অনুষ্ঠান টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল। স্কুল, কলেজ আর বেশিরভাগ অফিসও সেদিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে মানুষ ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা দেখতে পারেন। হিন্দুত্ববাদী ভোটার মনে করেন মোদি ক্ষমতায় এলেই মন্দিরের কাজ সম্পন্ন হবে।  
অন্যদিকে ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষ ‘২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ’ হিসাবে গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, তা কি ভোটারদের মনে কোনও দাগ ফেলতে পারবে? বিশ্বের সবথেকে দ্রুত বাড়তে থাকা অর্থনীতির দেশ ভারত। দেশটির জিডিপি এখন সাড়ে তিন লাখ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর যুক্তরাজ্যকে টপকিয়ে বিশ্বের পঞ্চম সবথেকে বড় অর্থনীতি হয়ে উঠেছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি হয়তো পৌঁছিয়ে যাবে সাত লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে। আর সেটা সম্ভব হলে জাপান এবং জার্মানিকেও পেরিয়ে যাবে ভারতের অর্থনীতি। তাদের আগে থাকবে মাত্র দুটি দেশ – যুক্তরাষ্ট্র আর চীন।
অনেক ভোটারের মাথাতেই কর্মসংস্থান বিষয়টা থাকবে। তরুণ ভারতীয়দের মধ্যে থেকে ৭০-৮০ লাখ জন প্রতিবছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করে থাকেন। কিন্তু আরও লাখ লাখ মানুষ কোনো কাজ জোটাতে পারেন না।
সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য অবশ্য বলছে, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা কমছে এবং শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন যে নতুন সৃষ্টি হওয়া বেশিরভাগ কাজই খুব কম বেতনের চাকরি। মোদি সরকার শেষ দুইবছরে কংগ্রেসের সমর্থক এমন পরিবারের সন্তানদের চাকরি দিয়ে এমন একটি ধারণার জন্ম দিয়েছে যে তাদের কাছে দলের চেয়ে দেশ বড়।  
নির্বাচনের অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনতে যে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেটিকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কারা ওই নির্বাচনী বন্ড কিনেছে আর কোন দল কত অর্থ পেয়েছে, সেই তথ্যও প্রকাশ করার জন্য সরকারি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
সেই তথ্য সামনে আসতেই দেখা যায় যে নির্বাচনী বন্ড থেকে সব থেকে লাভবান হয়েছে বিজেপি। দলটি ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যে ১২ শো কোটি ভারতীয় টাকার নির্বাচনী বণ্ড বিক্রি হয়েছিল, তার অর্ধেকই পেয়েছিল বিজেপি।
এছাড়া ভারতের কল্যাণমুখী প্রকল্পগুলোর পরিমাণ দেখলে বিস্মিত হতে হয়। নরেন্দ্র মোদীর সরকার দাবি করে যে তারা প্রায় ৯০ কোটি গরিব মানুষকে সহায়তা দেওয়ার জন্য কয়েক লক্ষ কোটি ভারতীয় টাকা খরচ করেছে।  
অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে থাকায় কংগ্রেস কার্যত কিছুই করতে পারেনি। তাদের প্রতিশ্রতিগুলো ভাল হলেও ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো নয়। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের অবস্থাও তাই। এনিয়ে বিবিসিও আজ শুক্রবার ( ১৯ এপ্রিল) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারাও এগিয়ে রেখেছে মোদিকেই।  

news24bd.tv/ডিডি