"আড়ি, আড়ি, আড়ি, তার সাথে আড়ি
কাল যাবো ঘর, পরশু যাবো বাড়ি"

কিস্তি-১৮

"আড়ি, আড়ি, আড়ি, তার সাথে আড়ি কাল যাবো ঘর, পরশু যাবো বাড়ি"

বয়কট:

অনলাইন ডেস্ক

ছোটবেলা অন্তরা চৌধুরীর গান আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। গানগুলোর সুর ছিল মজার আর কথাগুলো সব বুঝতাম না ভালোভাবে। যে বয়সে ঠিকঠাক মতো কথা বলতে পারতাম না, তখনই ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজতে থাকা গান শেষ হয়ে গেলেই মাকে বলতাম, 'মা, মাছি গান ভেজে (বাজিয়ে) দাও। ' এই কথা বলে মা আমাকে এখনও ক্ষ্যাপান।

অধিকাংশ গানের কথাসহ সলিল চৌধুরীর সংগীতায়োজনে ছিল মনকাড়া সব কম্পোজিশন। ছড়াগান, কিন্তু কথাগুলো শিশুদের জন্যও চলে বড়োদের সঙ্গেও যায়।

আরও পড়ুন: কে যেন গো ডেকেছে আমায়'

এই অন্তরা চৌধুরীর একটা গান আছে 'এক যে ছিল দুষ্টু ছেলে', যাকে ছোট শিশুদের নৈতিক শিক্ষামূলক ছড়াগান বলা হয়। কিন্তু গানটিকে আমার বড়োদের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য বলে মনে হয়।

গানের কথক ছোট্ট শিশুটি শচীন বা যতীন নামের দুষ্টু ছেলের সঙ্গে আড়ি নিচ্ছে, বেশি রূপের দেমাগ দেখে একটি মেয়ের সঙ্গেও আড়ি নিচ্ছে। বাবা-মা বুঝিয়ে বলছেন সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি ভাব করে ফেলছে।

কিন্তু বড়োদের আড়ি ভাঙ্গে না সহজে। বাবা-মা হয়তো শিশুদের ভাব করতে বলছেন, কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে নিজেরাই অন্য কারো সঙ্গে জনমের তরে আড়ি নিয়ে নিচ্ছেন। আড়ি চলে ভাইয়ে ভাইয়ে, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের, প্রতিবেশীর সঙ্গে, আত্মীয় পরিজনের সঙ্গেও আড়ি দেয়া নেয়া চলে, চিরদিনের জন্য  ভাগ হয়ে যায় সবকিছু। ছোটবেলা আমার দাদুবাড়ির অনেক লোকজনের মুখেই শুনতাম বিয়ের 'জুদো' শব্দটি।  

তারা বলতেন, 'বিয়ের পর জুদো খায়। ' এই 'জুদো'কে  হিন্দিতে 'জুদা'। আসলে এটা ফার্সি শব্দ। তো পারস্য দেশ থেকে উড়ে উড়ে আসতে গিয়ে ডানাও না ভেঙ্গে বা লাফিয়ে লাফিয়ে আসতে গিয়ে ঠ্যাং না ভেঙে এই 'জুদা' শব্দটি ভারতবর্ষে এসেও 'জুদা'ই থাকছে, এই শব্দটি প্রমিত বাংলা থেকে আলাদা হয়ে গেলেও গ্রামাঞ্চলে কিন্তু 'জুদো' হিসেবে রয়েই যাচ্ছে। ইন্ডিয়া বিরোধিতা করতে গিয়ে 'জুদা' শব্দের ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে পরোক্ষভাবে কিন্তু ফার্সি থেকেও নিজেকে 'জুদা' করে নিচ্ছি আমরা। এতো 'জুদা' হতে হতে কোন সাগরে গিয়ে থামবো আমরা এক আল্লাহই ভালো জানেন!   

এখন তো আবার নতুন ট্রেন্ড চলছে 'বয়কট'- এর। কিছু বা কাউকে অপছন্দ হলে, এক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর মনে হলে দশদিক না ভেবে সোজাসুজি গোড়া থেকেই 'বয়কট' করা হচ্ছে। এটা ঘৃণাভিত্তিক যুগের লক্ষণ। বুদ্ধি বিচার শিকেয় তুলে রেখে এই ঢেউয়ে গা ভাসানোর মজাই আলাদা। অত্যাচার নির্যাতনের বিরোধিতা করা আর ফুটফাট করে বয়কট করা এক জিনিস নয়, তা কে কাকে বোঝায়? আমি তখনই নিজেক যেকোনো আন্দোলনে একাত্ম করতে পারি যখন আমি নিজেকে সেই আন্দোলনের একজন মনে করতে পারি। ফ্যাশনের প্রতিবাদ আর অস্তিত্বের পক্ষে প্রতিবাদ একেবারেই ভিন্ন জিনিস। ফলে অপরের স্বার্থে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক বেশি যুক্তিবাদী হতে হয়। এখানে ফাউ ফ্যাশনের আবেগের কোনো সুযোগ নাই।

আরও পড়ুন: জ্বিনের বাদশাহ

ধরুন, ফিলিস্তিন-ইসরাইল প্রশ্নে জর্ডানের পররাষ্ট্রনৈতিক অবস্থান আমার মোটেও ভালো লাগেনি। কিন্তু এর জন্য আমি জর্ডানের সংগীত শিল্পী ফারাহ সিরাজকেও ঘৃণা করা শুরু করবো? না, তাহলে তো আমি অন্তরা চৌধুরীর ওই গানের শিশুটির মতোই হয়ে গেলাম! 

ফারাহ সিরাজের কণ্ঠ ও গায়কী যদি আমার ভালো লাগে তো সেটা আমার স্বীকার করা উচিত। বা তাঁর গান শোনার ব্যাপারে ফিলিস্তিন-ইসরাইল প্রশ্নে জর্ডানের অবস্থানকে মাথায় রাখা উচিত না। এটাই পরিণত বড়োত্ব। আর জর্ডানের সমস্ত কিছুকে বয়কট করাটা শিশুতোষ।  

আমাদের এই 'আউল-বাউল-লালনের দেশে' মাইকেল জ্যাকসান আসতেই পারেন, আবার কাজাকিস্তানেও বাংলাদেশের রাধারমণ, ইংল্যান্ডে লালন চলে যেতে পারেন। সুর আর ভাষার এই সাবলীল অনুপ্রবেশকে রুদ্ধ করা যায় না। আর আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি যেহেতু 'বারোভাতারি',  সেহেতু আমাদের এমন কনস্ট্যান্ট পজিশন তো আরো আত্মঘাতী। অথচ, আমরা এমন আচরণ করি যেন আমরা পৃথিবীর যেকোনো একটি ভাষা-সংস্কৃতির মানুষ।

আবার ধরুন আপনি কঠিনভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনার একজন ধারক বাহক। আপনার কাছে লেবাননের কণ্ঠশিল্পী মেহের জেইনের 'আল্লাহি আল্লাহ' গানটি খুব ভালো লেগে গেলো। রোজার মাসে ধুমায়া শুনেছেন গানটি। হঠাৎ করে ইউটিউবে দেখে ফেললেন এই গানটির আদি নিবাস পাকিস্তানে,শিল্পী পাকিস্তানের নাহিদ আখতার। এটা তো আপনি মেনে নিতে পারছেন না। মহাবিপদ! দেখেন যেই আপনি পাকিস্তানকে বয়কট করে পাকি মুরগি বা কোনো প্রকার পাকিস্তানি পণ্যই স্পর্শ করছেন না সেই আপনিই কীভাবে পাকিস্তানের গান টুক করে শুনে ফেলছেন! এখন আপনি কি এই গানের জন্য আপনার অতি প্রিয় মেহের জেইনকেও বয়কট করবেন? নাকি নিজের কানকে বয়কট করবেন?

ভারতীয় আগ্রাসনের জন্য আপনি ভারতের সমস্ত কিছু বয়কট করছেন। পারছেন কি অনুপ জালোটা বা মোহাম্মদ রফির কণ্ঠের সেরা নজরুল সংগীত,লতার গাওয়া মিষ্টি গানগুলোকে ছাড়তে? 'কফি হাউজের সেই আড্ডাটা' কার স্মৃতিতে নাই? পুরনো বন্ধুদের আড্ডায় কি এই গান বাজে না অহরহো? আর রোজ সন্ধ্যা হলে প্রান্তীয় মানুষগুলো বিনোদন বলতে কি স্টার জলসা, জি বাংলা বোঝেন না? কিংবা রবীন্দ্র-বিরোধিতা করে কি আপনি এদেশের একাডেমিক সার্টিফিকেটকে বয়কট করতে পারবেন? স্কুল কলেজে তো বুড়োটার লেখা পাঠ্য হতেই থাকে সব পর্যায়ে।  

ইসরায়েল, ফ্রান্সকে আমরা বয়কট করে স্লোগান তুললাম। স্লোগান দিতে দিতে কণ্ঠ ভেজালাম কোকাকোলায়। ঘামের গন্ধ দূর করতে গায়ে মাখলাম প্যারিসের সুগন্ধি। ঘরের শিশু ম্যাগী ছাড়া কিছু খেতেই চায় না দেখি। ভারি মুশকিল!

কতো শিল্পপতিকে যে বয়কট করলাম আমরা। আবার আমরাই দুর্দান্ত এই গরমে গায়ে জড়ালাম ইয়োলোর সফট কাপড়, ঘাম মুছতে সাথে রাখলাম বসুন্ধরা টিস্যু। আড়ঙকেও বয়কট করেছি, কিন্তু সস্তায় ব্র‍্যান্ডের উপহারের জন্য বারবার গিয়েছি সেই আড়ঙেই। আমরা আড়ঙের ডিজাইনকে ইউনিক মনে করে থাকি। অথচ এটা জানি না এই ব্র‍্যান্ডের ডিজাইনাররা বিশ্বের নানা কালচারার হেরিটেজের ইমেজ তাদের ব্র‍্যাণ্ডিঙে ব্যবহার করে থাকে। পাপী ফেরাউনদের ব্যবহৃত নানা অলংকারের ডিজাইন আড়ং হরেদরে ব্যবহার করে থাকে। সচেতনভাবে করে কিনা জানি না। আমি মিল পাই। নেফারতিতির নেকলেসের মতো আমারও একটা নেকলেস আছে। হাতের বাজুর রকম সকম পুরাই ফেরাউন নারীদের মতো। কান উৎসবে বাংলাদেশের অভিনেত্রী বাঁধন যে গয়নাটি পরেছিলেন তাতেও আছে মিশরীয় সভ্যতার ক্যালিগ্রাফিক নমুনা।  আবার মেসোপোটেমিয়া সভ্যতা এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের নানা অলংকারের ডিজাইনও আড়ং অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তাদের পণ্যে ব্যবহার করে থাকে। এই যে বড়ো বড়ো আংটির চল, এটা কোত্থেকে এলো? চিনামাটির গায়ের বহু ডিজাইনও সেইসব সময়ে পৌঁছে দেয় আমাকে। আপনি মুসলিম কালচারের ডিজাইনের ঘোর বিরোধী, আপনি কি পারবেন শেষ পর্যন্ত আড়ঙকে বয়কট করতে? আপনি কি পারবেন পোশাকের দুনিয়ায় পাকিস্তানি ফেরদৌস, ইন্ডিয়ান বিবেকের প্রতাপকে রুখে দিতে? পারবেন না। সম্ভবও না।

গত কয়েক বছর ধরে আমরা অনেক দেশ, ব্র্যাতন্ড ও মানুষকে বয়কট করেছি। পেরেছি কি বয়কট করতে?
পাকিস্তান,ফ্রান্স, ইসরায়েল, জর্ডান,ইউক্রেন,ইন্ডিয়াকে বয়কট করলাম, বয়কট করলাম আড়ঙ,ইয়োলোকেও। আমরা একবার ওয়ালটনকে বয়কট করছি, বয়কট করছি চঞ্চল চৌধুরী এবং জোভানকে। কবে যেন কোন নাটকের জন্য নিশো-মেহজাবিনকেও বয়কট করলাম। কথায় কথায় এভাবে বয়কট করাকে আমার কাছে ওই গানের মতো 'আড়ি আড়ি আড়ি সবার সাথে আড়ি'র মতো লাগে। এবং এটা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।

অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতা অন্তরা চৌধুরীর কণ্ঠে শুনতাম --
'তেলের শিশি ভাঙলো বলে
খুকুর 'পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙে ভাগ করো
তার বেলা? তার বেলা? তার বেলা?'

ছোটরা আড়ি নিলে বড়োরা বোঝায়। বড়োরা আড়ি নিলে কে বোঝাবে?

আমিও ছেলেবেলায় আড়ি নিতাম। খেলতে খেলতে কেউ ঠ্যাটামি করলে আর খেলতাম না তার সঙ্গে। আবার দেখা হলেই তথৈ বচ। এখনও এমন হয়, বরং ছোটবেলার থেকে অনেক বেশিই হয়। বড়োদের ঠ্যাটামি বিচিত্র। বুঝতে না পারলে বা না বোঝার ভান করলে সম্পর্ক থাকে, বুঝলেই বিপদ!
এখন কেউ ঠ্যাটামি করলে তাদেরকে একটু এভোয়েড করি। এখন আড়ি নিতে খুব কষ্ট লাগে, অসুস্থ লাগে। মানুষের উপর খুব রাগ হয়। আমার দেশসহ নানা দেশের মানুষের ওপর নানামাত্রিক টর্চার দেখলে ইচ্ছে করে মাথায় বোমা ফাটিয়ে আসি। কিন্তু পরে ভাবি আমার এই আবেগ অকাজের। ঘরের ভেতর থেকে পরিবার থেকে

পরিজন কিংবা পরিচিত/ অপরিচিত(নামে আর মিথে পরিচিত)কতো মানুষই তো আমাকে অপছন্দ করতে পারে, আমি কতোজনকে বয়কট করবো? বাঁচবো কীভাবে তাহলে? শত শত বাক্য আর সময় আমার বিরুদ্ধে ব্যয় হচ্ছে হয়িতো, আমি হয়তো তা জানছি বুঝছি তবু বয়কট তো করতে পারছি না কাউকেই। হয়তো কিছুটা এভোয়েড করতে চেষ্টা করছি সংঘর্ষ এড়াতে। মানুষের জন্য ভালো চিন্তা করতে খুব ইচ্ছে করে, করিও।  কিন্তু দূর থেকে। কেননা কাছে গেলেই তো 'প্রকৃত সারস উড়ে যায়' আর ফেরে না। কোথায় যে যায়, মিলিয়ে যায় আংকেল স্ট্রঙের মতো। কতো যে এমন হয়েছে। তবে কাউকেই 'বয়কট' করি না, এভোয়েড করি। কেউ  মিলতে এলে অবজার্ভ করি। ভুল বুঝলে আর শুধরাতে যাই না।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় ও একজন মোহাম্মদ আজম

এই ব্যাপারে আমার মা এবং বর অনন্য। তাঁদের হজম শক্তির ক্ষমতা দেখে আমি বিস্মিত হই। আমি তো এভোয়েড করি, তাঁরা তাও করেন না। যেমন আছে তেমন থাকতে দেন। এটা আমার বর বেশি করেন। একটু কৌশলে সবকিছুর সঙ্গে থেকেও কীভাবে যেন নাই হয়ে থাকতে পারেন। ভদ্রলোক আস্ত জ্বিন একটা! আমার মায়ের আবার কৌশল সেন্স একটু কম। বয়কট না করলেও কারো কোনো ব্যাপারে কষ্ট পেলে না থেকে নাই হয়ে থাকতে পারেন না। বলে ফেলেন। তবু বয়কট করে চলেন না আমার বরের সহ্য ক্ষমতা অসীম। এতো অসীম যে তাঁর কোনো শত্রু নেই। এটা তাঁর পর্যায়ে সম্ভব না, তবু নাই। কারণ তিনি প্রকাশ্যে কখনো শত্রুতা পুষে চলেন না। বিয়ের শুরুর দিকে দেখতাম তিনি কমোডিটি ফেটিশের কঠোর বিরোধিতা করতেন। এখনও তিনি সেই অবস্থানেই আছেন, তবে যারা ফেটিশ তাদের বিরুদ্ধে অতো কঠোর হন না। নিজেকে 'পেটি বুর্জোয়া' ভাবতেও দ্বিধা করেন না।

আমাদের দুইজনের কালচারাল হ্যাবিটেশনের দূরত্ব অনেক। তবু তিনি বইপত্র পড়ার ফলে এবং আমি তাঁর সঙ্গে মেশার ফলে একটা ককটেল কালচারের জন্ম হয়েছে আমাদের ঘরে। ছেলে বাবার মতো 'যা আছে তার পক্ষ থেকে' সবকিছু দেখা শিখছে। জোরাজুরি, চাপাচাপির চেয়ে যুক্তিকে বেশি মেনে নিচ্ছে, আবার মায়ের মতো কারো দুর্দশা দেখে কষ্টও পাচ্ছে। বাপের দেশের 'হাক্কনিডা'(পাকন পিঠা)ও খাচ্ছে, মায়ের দেশের চিতোই পিঠাও খাচ্ছে। বয়কট করার শিক্ষা আমরা আমাদের সন্তানকে দিচ্ছি না। তবে অন্যায্যতার বোধ তার মধ্যে দেবার চেষ্টা করছি। জানি না সে কতোটুকু আমাদের কাছ থেকে নিতে পারবে, তবে আমার চেষ্টা থাকবে সবকিছুকে পর্যবেক্ষণের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করে দেয়া।

এই ভয়াবহ বয়কট-কালচারকে কিছুতেই বাড়তে দেয়া যাবে না। কেননা এটা দিয়ে প্রায় কিছুই বোঝায় না। দেখুন, গাজা-ইসরাইল ইস্যুতে সৌদির অবস্থান দেখেও তো আমরা সৌদিকেও বয়কট করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। কেন? 

সৌদির সঙ্গে নিজেদের রিলিজিয়াস এক্সিস্ট্যান্সের যোগ আছে। চাইলেই বয়কট করতে পারবো না। অন্য সবাইকে পারবো। ফলে, বয়কট-কালচার একটা ভুয়া কালচার। দেশ ও সময়ের অগ্রসরের পথে বিরাট বাঁধা।

আরও পড়ুন : আমার দস্তইয়েভস্কি

বাংলাদেশে দুইদিন পরপর ব্যক্তি, পণ্য এবং দেশ বয়কটের যে ঢেউ ওঠে তা অদ্ভুত লাগে আমার কাছে। বাংলাদেশের কবি ব্রাত্য রাইসু আর মাহবুব মোর্শেদকে এই ব্যাপারে ওয়ার্ড দেয়া যেতে পারে। এমন আরও অনেকেই আছেন, যারা কারো কোনো একটা ইস্যুতে গোটা জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বয়কট করে ফেলেন। যাপন যতো সহজ হয় ততো জটিলতা কমে। রাজনীতি-সচেতন হতে গিয়ে একেবারে সবকিছুকে বয়কট করাও তো ভালো রাজনীতির উদাহরণ না। আবার নিজেকে হিরো হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সমসাময়িক মোস্ট পিপলের(মাস-পিপল নয়) পক্ষে ভ্যালিড বা ইনভ্যালিড গ্রাউন্ডে কথা বলার কূটকৌশলকে তো রাজনীতি সচেতনতা বলা যায় না। আজকাল অনেকেই 'বয়কট' কালচারকে গ্রহণ করছে মোস্ট পিপলের দলে ভিড়ে থাকার জন্য,নিজেকে হিরো প্রমাণ করার জন্য। অথচ, মোস্ট পিপলকে তারা কিছুতেই ওউন করেন না। এখন কথা হলো যদি কেউ আমাকে বলেন যে, আপনার বয়কটেই স্বস্তি, তাহলে আমার কিছু বলার নাই। বড়োজোর এটুকু বলতে পারি আপনার বড়ো হয়ে ওঠাই আপনাকে বাড়তে দেয়নি।
আচ্ছা, ঈমানে বলুন তো,
সবার সাথে আড়ি দিয়ে, সবাইকে বয়কট করে কি যাপন সহজ ও স্বস্তিকর হয়?

লেখক পরিচিতি : কবি, লেখক ও শিক্ষক। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।   বর্তমানে সরকারি বিজ্ঞান কলেজে কর্মরত।

news24bd.tv/ডিডি