নির্বাচনে মাহমুদ কলি–নিপুণদের পরাজয়ের যত কারণ 

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন

নির্বাচনে মাহমুদ কলি–নিপুণদের পরাজয়ের যত কারণ 

অনলাইন ডেস্ক

অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪–২৬ মেয়াদের নির্বাচন। নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন মিশা-ডিপজল প্যানেল। আর হেরেছে মাহমুদ কলি ও নিপুণ প্যানেল। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে শনিবার সকালে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

নতুন মেয়াদের এই নির্বাচনে নিপুণ হেরেছেন খল চরিত্রের অভিনেতা ডিপজলের কাছে। মাহমুদ কলি হেরেছেন মিশা সওদাগরের কাছে। শুধু কলি– নিপুণ নয়, তার প্যানেলের রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে এমন ভরাডুবির বেশ কয়েকটি কারণ আছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা।

গত মেয়াদের নির্বাচনে নিপুণ সভাপতি হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন গুণী অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তিনি জানান, এই মেয়াদের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে তিনি আর অংশ নেবেন না। মার্চে হঠাৎ করে শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে টাকার ছড়াছড়ি হয়। ভোটাররা প্রতিটি প্যানেল থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নেন। হঠাৎ করে সভাপতির এমন বক্তব্য ভোটে প্রভাব ফেলেছে।

এমন কি কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সাইমন সাদিকসহ কয়েকজন সদস্যের সরে যাওয়াটা এবারের নির্বাচনে নিপুণ প্যানেলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে মিশা-ডিপজল তাদের গুছিয়ে ফেললেও নিপুণকে সভাপতি প্রার্থী খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। অনেক তারকাকে রাজি করানোর চেষ্টার খবর এলেও শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, নিপুণ সভাপতি হিসেবে পান একসময়ের আলোচিত নায়ক মাহমুদ কলিকে। তারপরও যেন নির্বাচনী মাঠ জমাতে পারেননি তিনি। প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা মিশা-ডিপজল প্যানেলের প্রার্থীদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী ছিল বলেও কেউ কেউ মত দেন।

তা ছাড়া গেল মেয়াদে নিপুণের সঙ্গে যারাই ছিলেন, তাদের মধ্যে শাহনূর, নানা শাহ ও ডি এ তায়েবের মতো অনেকেই যখন তাকে ছেড়ে মিশা-ডিপজলের সঙ্গে যোগ দেন, তা সবচেয়ে নেতিবাচক ছিল।  

নির্বাচনের আগে নিপুণের ক্ষমতা প্রদর্শনের ব্যাপারটি সামনে এসেছে। এবারের মেয়াদের নির্বাচন শুরুর আগ মুহূর্তে নিপুণ তার ক্ষমতাবলে কয়েকজনকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ দিয়েছেন, এমন কথা চলচ্চিত্রের অনেকে বলেছেন। আবার ফেসবুক দেওয়া পোস্টকে ঘিরে সদস্যপদ বাতিলের ব্যাপারটিও নিপুণের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি। প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের সদস্যপদ এবং তার নির্বাচনের বিষয়টিও নিপুণকে সমালোচনায় ফেলে।

গেল মেয়াদে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পীরজাদা শহীদুল হারুন। তার সঙ্গে নিপুণের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশ্যে। দুজন দুজনকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতেও ছাড়েননি। সেই পীরজাদাকে এবার দেখা গেছে কলি-নিপুণ প্যানেলে। হঠাৎ করে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ‘চিরশত্রু’ হিসেবে পরিচিত পীরজাদা হারুনের সঙ্গে হাত মেলানো এবং একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ভোটারদের মধ্যে নিপুণকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কারও কারও মতে, নিপুণ শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, যা মোটেও ঠিক হয়নি। জোর খাটিয়েছেন।

কারও কারও মতে, গেল মেয়াদে বিজয়ী হয়ে আসার আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি নিপুণ। তারই প্যানেলে সদস্য নানা শাহ এ বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘আগেরবার আমি এবং ডি এ তায়েব নিপুণের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম। ভালো কিছু কাজের আশা করেই তাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম। তারা কথা দিয়েছিল সিনেমা নির্মাণ করবে। একটি কথা মনে রাখবেন, শিল্পী সমিতি সিনেমা নির্মাণ করতে পারে না। কিন্তু নিপুণ কথা দিয়েছিল ছয়টি সিনেমা নির্মাণ করবে। আমি তার কথা অনুযায়ী এগিয়ে ছিলাম। দুটি সিনেমায় এন্ট্রি করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার পাশে কেউ আসেনি। নিপুণ কথা রাখেনি। তার প্যানেলে গিয়ে ভুল করেছিলাম। ’

অন্যদিকে ডিপজল এবং মিশা সওদাগরদের প্রস্তুতিও এবার তুলনামূল বেশি ছিল। কমিটিতে না থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাধারণ শিল্পী তথা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। এ ক্ষেত্রেও ঘাটতি ছিল নিপুণ এবং তার প্যানেলের অন্য সদস্যদের।

আরও পড়ুন: ডিপজলের কাছে হেরে মুখ খুললেন নিপুণ 

২০২৪-২০২৬ নির্বাচনে নতুন মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা এবং বিগত দুই মেয়াদের সফল সভাপতি মিশা সওদাগর (২৬৫ ভোট)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ কলি ১৭০ ভোট পেয়ে পরাজিত। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন চলচ্চিত্রের মুভি লর্ড ও দানবীর’খ্যাত অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল (২২৫ ভোট)। ১৬ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হয়েছেন নিপুণ আক্তার (২০৯ ভোট)।  

news24bd.tv/TR