শিবনারায়ণ দাসকে গার্ড অব অনার

শিবনারায়ণ দাসকে গার্ড অব অনার

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার শিবনারায়ণ দাসকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। পরে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনারে শিবনারায়ণের মরদেহ আনা হলে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। পরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শিবনারায়ণ দাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণ আজাদী লীগ, গণজাগরণ মঞ্চ, পুলিশ থিয়েটার, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, সহযাত্রী, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), পাঁচ দলীয় বাম জোট, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টসহ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন ও জনসাধারণ।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাস মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার একজন লড়াকু কর্মী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকায় ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা করার ব্যাপারে তিনি অবদান রেখেছেন। এটা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। আমরা পুরো জাতি তার প্রতি শ্রদ্ধানত। ’

যুদ্ধ পরবর্তী শিবনারায়ণ দাস জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত থেকে রাজনীতি করেছেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘শিবনারায়ণ দাস একজন আপাদমস্তক মুক্তিযোদ্ধা। জাতি পতাকা অঙ্কনের জন্য তাকে আমরা মনে রাখছি। শুধু পতাকা তৈরি করে শেষ হয়নি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জাসদের সঙ্গে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন এবং সবশেষ দেখা গেল দেশের জনগণের জন্য তিনি তার দেহটিও দান করেছেন। সব কিছু মিলিয়ে আমরা বলব আপাদমস্তক এই মানুষটি দেশ ও দেশের মানুষের জন্যই দিয়ে গেছেন। ’

প্রয়াত শিবনারায়ণ দাসের সন্তান অর্নব আদিত্য দাস বলেন, ‘আমার বাবা এমন একজন মানুষ ছিলেন; যিনি কখনো অন্যায়, দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের সঙ্গে আপস করেননি। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে তিনি কখনো আপস করেননি। আমার বাবার যে আদর্শ ছিল সেই আদর্শে আদর্শিত হয়ে আপনারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। অনুরোধ রইল এদেশে যদি খারাপ বেশি কিছু থাকে, ভালো যদি অল্প কিছু থেকে থাকে সেটিকে নিয়েই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমার বাবা সব সময় একটি কথাই বলে গেছেন, এই দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত যে সকল মানুষ রয়েছে, তাদের জন্য কথা বলতে হবে। যাদের আজকে কথা বলার ক্ষমতা নেই, দয়া করে তাদের জন্য ক্ষমতাসীন যার রয়েছে তাদের হয়ে কথা বলুন। ’

এদিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।

এ সময় অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের মধ্যে থেকে আরেকটি রাষ্ট্রের পতাকা তৈরি অত্যন্ত দুঃসাধ্য একটি কাজ। সেই দুঃসাধ্য কাজটি করেছে তৎকালীন ছাত্র নেতা শিবনারায়ণ দাস। জাতির এই সূর্য সন্তানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে এই জাতি। ’

গোলাম কুদ্দুসের বক্তব্য শেষে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন জানাতে জন্মস্থান কুমিল্লায় নেওয়া হয়।  

কুমিল্লা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিবনারায়ণ দাসের মরদেহ চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দান করা হবে। এদিকে তার কর্নিয়া সন্ধানীতে দান করা হয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান ৭৮ বছর বয়সী শিবনারায়ণ দাস।

১৯৭০ সালের ৬ই জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬নং কক্ষে রাত ১১টার পর পুরো পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত ও নকশা সম্পন্ন করা হয়। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৩১২নং কক্ষে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হয় পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। বলা হচ্ছে, শিবনারায়ণ দাস সেই সময় পতাকায় লাল বৃত্তের মাঝে মানচিত্রটি আঙ্কণ করছিলেন, এমনি করে রচিত হয় বাংলাদেশের পতাকা। ১৯৭২ সালে শিবনারায়ণ দাশের নকশাকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পরিমার্জন আনা হয়। প্রতিষ্ঠিত পায় আজকের এই পতাকা।

শিবনারায়ণ দাস প্রথম ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তার পিতা সতীশ চন্দ্র দাশ কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে হত্যা করে।

news24bd.tv/তৌহিদ