ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফাঁস

সংগৃহীত ছবি

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফাঁস

অনলাইন ডেস্ক

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে গত বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় দুই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা ও অন্যদের আহত করার ঘটনায় একাধিক ভিডিও ফাঁস হয়েছে। আর এতে ওই সময় হত্যায় কারা কিভাবে অংশ নিয়েছে তাও দেখা গেছে।

ভিডিও ক্লিপে হত্যাকাণ্ডে কারা কিভাবে অংশ নিয়েছে সেটাও ভেসে উঠেছে। এ ঘটনার পরের দিন শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে থানায় পৃথক তিনটি মামলা রুজু হয়।

মামলায় মূলহোতা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের বাইরে উন্মত্ত জনতার চিৎকার-চেঁচামেচি আর ভেতরে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে শ্রমিকদের পেটাচ্ছে গুতাচ্ছে। নির্মাণ শ্রমিকদের পিটানোতে তারা হাউমাউ করে চিল্লাচিল্লি করছে। ভিডিওতে ওই গ্রামের উজ্জ্বল, সুফল, সুকুমার, রাজকুমার, সাধন, বিকাশ, সুজিত, মানিকসহ আরো কয়েকজনকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা যায়।

শনিবার রাত থেকে রোববার দিবাগত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তবে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আটককৃতদের নাম পরিচয় জানায়নি।

অপর ভিডিওতে দেখা গেছে, সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের পিঠমোড়া করে বেঁধে দাড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন সময় খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ভিডিওটিতে সেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্য অজিত মেম্বারের সঙ্গে চেয়ারম্যানকেও দেখা যায়।

দুই জনপ্রতিনিধিই নির্মাণ শ্রমিকদের এভাবে না পিটিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের। চেয়ারম্যান-মেম্বারের অনুরোধে হামলাকারীরা সাড়া না দিলে চেয়ারম্যান মধুখালী থানা পুলিশকে মুঠোফোনে খবর দেন।

প্রথম খবর পেয়ে মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ননী গোপাল ও একজন কনস্টেবল আসেন ঘটনাস্থলে। হামলাকারীরা দুই পুলিশকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফিরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরেই মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনূন আহমেদ অনীক ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিরাজ হোসেন ঘটনাস্থলে যান।

ইউএনও এবং ওসির সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনকে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারীরা। তবে এ ভিডিওর ব্যাপারে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা কিছু বলতে রাজি হননি। ঘটনার তদন্তে ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলায় অংশ নেওয়া কয়েকজনকে ইতিমধ্যে তারা আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়েও তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে বাঁশ, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে আপন দুই সহোদরকে হত্যা এবং আরো ৫ জনকে গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মধুখালীর ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক এবং ওসি মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে হতাহতদের উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনসহ তাদেরও জিম্মি করে হামলকারীরা। খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব প্রায় ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

এ সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। এ ঘটনার পরে মন্দিরে আগুন, নির্মাণ শ্রমিক হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে স্থানীয় থানায়। ঘটনার দুই দিন পর শনিবার (২০ এপ্রিল) ধর্মমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং পঞ্চপল্লীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে।  

news24bd.tv/DHL