দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রচারণায় এমপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রচারণায় এমপি

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় পছন্দের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম।

এ উপজেলায় সংসদ সদস্য শহিদুল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়কে জেতাতে শেরপুর শহরের গৌরীপুরস্থ নিজ বাসার সামনে জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করে তার হাতকে শক্তিশালী করতে ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহবান জানাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীরা।

জানা গেছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলের সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।

সে মোতাবেক নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে কোনো এমপি বা মন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারবেন না বা কারও পক্ষে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন বলে ঘোষণা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের অপর ২ প্রার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল শনিবার রাতে শেরপুর শহরের গৌরীপুর এলাকার মৈত্রীবাড়ি মাঠে বিশাল প্যান্ডেল বেঁধে ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এক সভার আয়োজন করেন শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম।

ওই সভায় তিনি বিশ্বজিৎ রায়কে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, তার প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে তিনি নির্বাচিত হয়ে আসবেন। তিনি নির্বাচিত হলে তার মাধ্যমে আমি আপনাদের কাজ করতে পারব। সেইসাথে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাকে উপহার হিসেবে তুলে দিতে পারব। এ সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়সহ আওয়ামী লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, শাহাদাৎ হোসেন ও রুকনুজ্জামান পলাশ এবং বিএনপিদলীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য, আওয়ামী লীগের উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সভা শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হয়।

দলীয়সহ নানা দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, একইভাবে গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার মৈত্রীবাড়ি মাঠে ঈদ পুনর্মিলনীর নামে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম। ওই সভাতেও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র আবু তাহের, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চাঁন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী অংশ নেন।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একজন প্রার্থীর পক্ষে দলীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুলের সরাসরি অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম আমিরুজ্জামান লেবু বলেন, এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত থাকায় দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের কারও পক্ষে কাজ না করতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়কে বিভিন্ন সভায় নিজের বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার পক্ষে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের ওয়াদা করাচ্ছেন। এটি দলীয় সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে তিনি দলীয় দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাবেন উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্য নিরপেক্ষ বা নীরব না থাকলে নির্বাচনে অবশ্যই প্রভাব পড়বে।

একই কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের অপর প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম তার পছন্দের প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়কে জেতাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ডেকে নিয়ে এবং সভা করে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রভাবিত করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এবারের দলীয়ভাবে উন্মুক্ত থাকা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এজন্য আমি নিন্দা প্রকাশ করে তার বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অন্যদিকে তার পক্ষে থাকার কথা এক প্রকার স্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম আমার বন্ধু মানুষ। তার সহযোগিতায় যদি আমি নির্বাচিত হতে পারি উপজেলার সব সমস্যার সমাধান করব। সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যদি একমুখী থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা অবহেলিত ঝিনাইগাতীর উন্নয়ন করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্য কোনো প্রার্থী নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দুএকজন রয়েছেন। তবে নৌকার এমপির সমর্থন দলের নেতা হিসেবে আমার প্রতিই রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এক সভা করে আমাকে একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার নির্বাচন পরবর্তী কর্মীদের নিয়ে বসা হয়নি। তাই ঈদের পর পুনর্মিলনী করেছি। সেখানে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে তিনি ঢাকায় চলে যাবেন।

উল্লেখ্য, এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত টিকে থাকা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩ জন, বিএনপির ৩ জন ও জাসদের একজন প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থীরা হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম আমিরুজ্জামান লেবু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ, বিএনপি নেতা দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, বিএনপি নেতা সোহরাওয়ার্দী বাহাদুর লাল, বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক একেএম ছামেদুল হক। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

news24bd.tv/তৌহিদ