শেরপুরে র‌্যাবের অভিযানে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি গ্রেপ্তার

শেরপুরে র‌্যাবের অভিযানে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি গ্রেপ্তার

শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান মধ্যপাড়া এলাকার চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার অন্যতম আসামি মো. কানন মিয়াকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪ (জামালপুর-শেরপুর) এর সদস্যরা। সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

গ্রেপ্তারকৃত কানন নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান মধ্যপাড়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

র‌্যাব ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা পেশায় রিকশাচালক। জীবিকার তাগিদে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তায় বাস করেন। তার ছোট মেয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে একই এলাকায় বিয়ে দেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে সন্তানও জন্মগ্রহণ করে।

আর সংসারের হাল ধরতে ৯ মাস আগে ভুক্তভোগীর স্বামী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।

এদিকে স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর হতে ভুক্তভোগী তার সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। ওই অবস্থায় আসামি রাজিবের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে আসামি রাজিব অপর আসামি কানন মিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে ভুক্তভোগীর শ্বশুরবাড়িতে দেখা করতে আসেন। গত বছরের ১১ আগস্ট তারিখ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে শ্বশুর বাড়ির টিনের দু’চালা বসতঘরের মেঝেতে আসামি রাজিব ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

ওইসময় অপর আসামি কানন মিয়া সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তাদের নগ্ন ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। ওই ভিডিও চিত্র আসামি কানন মিয়া প্রধান আসামি রাব্বির মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেন।  

এরপর হতে আসামি রাব্বি ও আসামি কানন মিয়া দু’জনেই ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানসহ কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ে ভুক্তভোগী তার সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। গত বছরের ১০ নভেম্বর ছেলে সন্তানটি হঠাৎ মারা গেলে ভুক্তভোগীসহ সকলেই তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে থাকাবস্থায় আসামি রাব্বি ও আসামি কানন মিয়া ভুক্তভোগীকে আগের ধারণ ভিডিও চিত্র দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে আসামি কানন মিয়া ফোন করে ভুক্তভোগী তরুণীকে বলেন, তাদের মোবাইল থাকা পূর্বে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও চিত্র ভুক্তভোগীর সামনে ডিলিট করে দেওয়া হবে। তাই তাকে আসামি রাব্বির বাড়িতে আসতে হবে। ওই তরুণী সরল বিশ্বাসে কানন মিয়ার কথামতো রাব্বির বসতঘরে গেল তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দু’জনেই পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করেন। এই দৃশ্য আসামি কানন মিয়া গোপনে তার মোবাইলে ধারণ করেন। পরে এ বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু না বলার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ছেড়ে দেয় তাকে।  

পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর অশ্লীল ভিডিও চিত্র আসামিরা এলাকার বিভিন্ন লোকের মোবাইলে ছড়িয়ে দিলে বাদীর ছোট ভাই ওই ভিডিও চিত্রটি দেখেন। পরে ঘটনাটি তরুণীর পরিবারকে জানালে ভুক্তভোগীর বাবা এ নিয়ে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নালিতাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঘটনার পর থেকে এই আসামি  গ্রেপ্তার এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।

এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৪ (সিপিসি-১) জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর আবরার ফয়সাল সাদীর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল সোমবার সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন উত্তরা ব্যাংকের সামনে অভিযান পরিচালনা করে মামলার অন্যতম আসামি কানন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন। অপরাধ দমনে র‍্যাবের এমন অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

news24bd.tv/কেআই