জলবায়ু পরিবর্তনের মাশুল দিতে হচ্ছে এশিয়াকে: জাতিসংঘ

জলবায়ু পরিবর্তনের মাশুল দিতে হচ্ছে এশিয়াকে: জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন ও এর কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া মহাদেশের দেশগুলো। সম্প্রতি জাতিসংঘের বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মিটারোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে।

ডব্লিউএমও’র মতে, অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি পড়েছে এশিয়ায়। এতে করে সার্বিক তাপমাত্রাও বাড়ছে এই মহাদেশে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

মূলত গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দীর্ঘ তাপপ্রবাহে একদিকে এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, অন্যদিকে জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি করবে।

মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর শীর্ষ নির্বাহী কেলেস্টে সাউলো বলেন, ‘এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। বিশ্বে খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যার মতো যত বিপর্যয় ঘটেছে, সেগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব ইতোমধ্যে জনজীবন ও পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতিতেও দৃশ্যমান হচ্ছে। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও ব্যাপক হবে। ’

তাপমাত্রা বাড়ছে সাইবেরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া, পূর্ব চীন থেকে জাপান পর্যন্ত। গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে এশিয়ার হিমালয় পর্বতমালা এবং এই পর্বতমালার হিন্দুকুশ ও তিব্বত রেঞ্জের ২২ টি হিমবাহের মধ্যে অন্তত ২০টির বরফের মজুত ২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জাপানের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৩ সাল।

ডব্লিউএমও’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ এশীয় অংশের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এশিয়াকে। ২০২৩ সালে এশিয়ায় বড় আকারের ঝড়, বন্যা ও তুমুল বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৯০ লাখ।

এ বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, ‘আবহাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খানিকটা হলেও সহায়তা করবে। তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস কেবল একটি বিকল্প নয় বরং জরুরি কর্তব্য। ’

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়া কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাসে জোর দেওয়া হয়েছে ডব্লিউএমওর এই প্রতিবেদনে।  

news24bd.tv/SC