হলের কক্ষে লাইব্রেরি বানিয়েছেন রাবি শিক্ষার্থী আকরাম

নিজ কক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন।

হলের কক্ষে লাইব্রেরি বানিয়েছেন রাবি শিক্ষার্থী আকরাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের স্মৃতির শহর নামের রুমটি কোন আবাসিক কক্ষ নয়। এ যেন একটা লাইব্রেরি। পড়ার টেবিল, বিছানা ও কাপড় রাখার র‍্যাক সব খানেই বইয়ের স্তুপ। জায়গার অভাবে এলোমেলো করে রাখা অংসখ্য বই।

রুমটির যে দিকে তাকানো যায় শুধু বই আর বই।

এভাবেই নিজের স্বপ্নের লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন। অনলাইনের এই যুগে বই পড়ার অভ্যাস অনেকটাই হারিয়ে ফেলতে বসেছে তরুণ সমাজ। সেখানে ব্যতিক্রম এই শিক্ষার্থী।

বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের নিজ কক্ষটিকেই বানিয়ে ফেলেছেন একটি ক্ষুদ্র লাইব্রেরি। আকরাম হোসেনের সংগ্রহে আছে প্রায় ছয় শতাধিক বই।

হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম ব্লকের তিন তলায় ৩৬২ নম্বর কক্ষে থাকেন ঝিনাইদহের সন্তান আকরাম হোসেন। বই সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময় থেকেই বই পড়ার আগ্রহটা শুরু হয়।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এই আগ্রহটা অনেকাংশে বেড়ে যায়। শিক্ষকরা প্রচুর বই পরার পরামর্শ দিতেন। শিক্ষকদের উপদেশে অনুপ্রাণিত হয়ে বই পড়ার শুরু। বই পড়তে ভালো লাগা থেকেই পছন্দের বই সংগ্রহ শুরু করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সব বই পাওয়া যেত না। যে সব বই পাওয়া যেত না সেগুলো প্রথম সংগহ করি। এভাবে ধীরে ধীরে পছন্দের সব বই সংগ্রহ শুরু করি।

আকরাম হোসেন জানান, তার সংগ্রহে প্রায় ৬০০ বই রয়েছে। বিশ্বসাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, লোকসাহিত্য, উপন্যাস, নাটক, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্য রচনা, জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ধর্ম, স্মৃতিকথা, সাহিত্য সমালোচনা, তথ্য প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামিক, আত্ম উন্নয়নমূলক, বাংলা ও ইংরেজি অভিধানসহ চাকরির বই রয়েছে। হলের রুমে বই রাখার জায়গা না থাকায় অনেক বই বাড়িতে রেখে এসেছেন।

তিনি আরও জানান, অনেক সময় বই কিনে রাতে না খেয়ে থেকেছেন। বলেন, আমি নতুন নতুন বই কিনতে খুব পছন্দ করি। বই কেনার পর দেখা গেছে হাতে আর অবশিষ্ট কোনো টাকা নেই। এরকম করে বই কিনতে কিনতে আমার সংগ্রহটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসের খাওয়া দাওয়া হাত খরচের সব টাকায় বই কিনে ফেলি। মাসের শেষ কয়দিন তাই বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে চলতে হয়।

আকরাম হোসেন জানান, অনেকেই বই ধার নিয়ে আর ফেরত দেয় না। তখন তার অনেক মন খারাপ হয়। ফেরত না পাওয়া সেই বই পুনরায় বাজার থেকে কিনে এনে সংগ্রহে রাখেন। এজন্য প্রত্যেক বই তার একটা খাতায় সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে রাখেন।

পড়তে ইচ্ছে না করলে টেবিলে রাখা মায়ের ছবি দেখেন আকরাম হোসেন। তিনি জানান, তার মায়ের ছবি দেখলেই পড়ার আগ্রহ ফিরে আসে।

আকরাম হোসেনের জন্ম ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ গ্রামে। কৃষক পিতা ও গৃহিণি মায়ের ৩ ছেলের মধ্যে বড় আকরাম হোসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ সেশনে ভর্তি হন ইতিহাস বিভাগে। শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে নিতে চান তিনি। এ লক্ষ্যে তিনি বিসিএস, নিবন্ধনসহ চাকরির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরণ করতে হলে নিজের জ্ঞানকে শানিত করতে হয়, আর পর্যাপ্ত বই পড়া ছাড়া জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন আকরাম।

আকরাম হোসেনের বই সংগ্রহের বিষয়টি দেখে উৎসিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। রুমমেট, আশপাশের কক্ষের শিক্ষার্থী ও বন্ধুবান্ধবরা আকরাম হোসেনের থেকে বই ধার নিয়ে পড়েন। তারা জানান, আকরাম হোসেনের অনেক বইয়ের সংগ্রহ। তিনি না খেয়েও বই কিনেন। এমনও হয় মাস শেষে আকরামের কাছে খাওয়ার টাকা থাকে না। তখন বন্ধুরা তাকে টাকা ধার দেন। পরের মাসে ধারের টাকা ফেরত দেন তিনি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, আকরাম হোসেনের বই সংগ্রহের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের কাছেই এত বইয়ের সংগ্রহ নেই। সেখানে আকরাম হোসেন লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন এটা অনেক বড় ব্যাপার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আকরাম হোসেনের প্রচুর বইয়ের রাখার সুবিধার্থে তাকে ৪ রুমের কক্ষের পরিবর্তে সিঙ্গেল রুম বরাদ্দ দিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

news24bd.tv/DHL