আগেই স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান আরজিনা, প্রেমিক করে খুন

নিহত জামিল শেখ ও নুসরাত। ইনসেটে আরজিনা।

বাড্ডায় বাবা-মেয়ে খুন

আগেই স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান আরজিনা, প্রেমিক করে খুন

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

'ডাকাতের হাতে স্বামী ও মেয়ে খুন হয়েছে। এমনকি ডাকাতরা তাকে ধর্ষণ করে সবকিছু লুট করে নিয়ে পালিয়ে গেছে। ' -এমন বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে অভিনয় শুরু করেছিলেন আরজিনা। খুনের পর থেকে দরজার বাইরে মুখে বিষাদের ছাঁয়া নিয়ে বসে ছিলেন।

কিন্তু সত্যিটা এখন সবাই জেনে গেছে।

সাবলেটের সঙ্গে তার পরকীয়ার বলি হতে হয়েছে বাবা-মেয়েকে। মায়ের সামনেই মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রেমিক, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন মা! এমন ঘটনা যেন 'মা' নামের পবিত্র শব্দটির ওপর ফের একফোটা কালি ফেলে দিল। এর আগেও রাজধানীতে মায়ের হাতে সন্তান খুনের ঘটনা ঘটেছে।

যদিও এমন ঘটনা বিচ্ছিন্ন। তবে এটি সংসার নামের বিশ্বাসের ঘরে যে বিষ ঢেলে দিয়েছে তার প্রভাব অনেক গভীর বলেও মনে করছেন অনেকে। কারণ, এই স্ত্রীর পরামর্শেই শাহিনকে সাবলেট দিয়ে মেয়েসহ হত্যার শিকার হন জামিল। ধিক্কার জানাচ্ছেন সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়।

এদিকে অভিযুক্তদের আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে নিত্য নতুন তথ্য। জানা গেছে, হত্যার বিষয়টি সহজ করতে স্বামী জামিল শেখকে রাতে তরকারির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলেন আর্জিনা। এজন্য আঘাত পেয়ে জেগে উঠলেও জামিল শেখ তা প্রতিহত করতে পারেননি। শাহিনের উপর্যুপরি আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। আরজিনার প্রেমিক শাহিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

আর মায়ের সামনে বাবাকে খুনের এই নৃশংস ঘটনা নিজের চোখে দেখছিল ৯ বছরের মেয়ে নুসরাত জাহান। ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। তখনও হয়ত সে বুঝতে পারেনি এরপরই তার পালা; জন্মদাত্রী মা নিজে বাঁচতে তাকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে! জামিলের খুনের ঘটনাটি দেখে ফেলেছিল মেয়ে নুসরাত। খুনের একমাত্র সাক্ষী এটাই তার অপরাধ, যে কারণে মা ও তার প্রেমিক তাকে চিরতরে বিদায় করে দেন দুনিয়া থেকে। বাবাকে বাঁচাতে অনেক আকুতি ছিল তার। কিন্তু তার কান্নাতে মন গলেনি ঘাতকদের।

গত বৃহস্পতিবার উত্তর বাড্ডার ময়নার বাগের ৩০৬ নম্বর বাসায় জামিল শেখ ও তার ৯ বছরের মেয়ে নুসরাত জাহান খুন হন। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রতিবেশীদের কাছে আরজিনা দাবি করেন, তিন-চারজন ডাকাত তার ঘরে ডাকাতি করে স্বামী-সন্তানকে হত্যা করে পালিয়েছে। এমনকি তাকে ধর্ষণও করেছে।

ওই রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে খুলনায় পালিয়ে যান আরজিনার প্রেমিকা 'ঘাতক' শাহিন।

এদিকে আরজিনার মায়াকান্না বিশ্বাস জন্ম দিতে পারেনি নিহত জামিল শেখের স্বজনদের মনে। কারণ, তাদের পরিবারে দাম্পত্য সংকটের বিষয়টা অনেকেরই জানা ছিল। স্ত্রীর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা নিয়ে অনেকবারই তাদের সংসারে অশান্তি হয়েছে।

এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় আরজিনা ও শাহিনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত জামিল শেখের ভাই শামীম শেখ। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনাকে (২৫) আটক করে পুলিশ। খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহিনকে। রিমান্ডে নেওয়া হয় আরজিনার কথিত প্রেমিক শাহিন ও তার বন্ধু খোয়াজকে।

তাদের আটক করার পর থেকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গত কোরবানির ঈদের পর স্ত্রী আরজিনা, মেয়ে নুসরাত ও ছেলে আলফিকে নিয়ে ওই বাসায় উঠেন জামিল।

নিহত জামিল শেখের বড় ভাই দুলাল শেখ জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। বিয়ের পর থেকেই তাদের পরিবারে অশান্তি লেগেছিল। আরজিনা মোবাইলে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছে অনেকবার। নতুন এই বাসায় ওঠার আগে আরজিনা রাগ করে সাভারের ইপিজেড এলাকায় তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে দুই মাস অবস্থান করে। পরে গত মাসে তার ভগ্নিপতি মহসিন শিকদার সাভার গিয়ে আরজিনাকে বাড্ডায় তার স্বামীর কাছে ফিরেয়ে আনেন।

সম্পর্কিত খবর