বৈধ আয় ছাপিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড়

এমদাদুল হক ওরফে দাদা এমদাদ

বৈধ আয় ছাপিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড়

হাসিব বিন শহিদ ও শাহাদাত স্বপন

সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এমদাদুল হক ওরফে দাদা এমদাদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে দুদক থেকে এমদাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছেন এমদাদ। তথ্য দিতে তিনি আরও এক সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেছেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে দুদক সূত্র। জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করলে অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানা যাবে।

সাধারণত, আদালতে প্রমাণযোগ্য দলিলাদি হাজির করতে পারলে মামলা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। যথাসময়ে অনুসন্ধানকাজ শেষ করতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ’

জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুদক যেকোনো উৎস থেকে অভিযোগ পেলে যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানযোগ্য হলে তা অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানের স্বার্থে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়। ’

বৈধ আয় ছাপিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড়

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এমদাদুল হক সাবেক একজন মন্ত্রীর এপিএসের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেহেতু অনুসন্ধান শেষেই বোঝা যাবে এ ক্ষেত্রে অন্য কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হবে। ’

দুদক সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এমদাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধানে নামে দুদক। এরপর গত ৩ মার্চ অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাসকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় কমিশন। সম্প্রতি কমিশন থেকে আয়কর নথি, বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বর ও ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি চেয়ে এমদাদকে চিঠি দেওয়া হয়। প্রথম দফায় তথ্য দিতে ব্যর্থ হন তিনি।

গত রোববারর তিনি দুদকে এসে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে এসব তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সময়ের আবেদন করেন। ফলে তথ্য সরবরাহে দুদক তাকে আরও এক সপ্তাহ সময় দেয়। একই সঙ্গে এমদাদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাবও চাওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে দুদকে এসব তথ্য সরবরাহের কথা রয়েছে তার। এছাড়া গোয়েন্দা ইউনিটকে কাজে লাগিয়ে এমদাদের বিরুদ্ধে আরো গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বৈধ আয়ের তুলনায় অসম সম্পদ
অভিযোগে বলা হয়, এমদাদের বৈধ আয়ের তুলনায় সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে অসম। ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়। ষষ্ঠ গ্রেড অনুযায়ী একজন এপিএস সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ হাজার ১০ টাকা বেতন গ্রহণ করতে পারেন। সর্বোচ্চ বেতনের হিসাবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এমদাদুল হক গত ১৩ বছরে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা বেতন নিয়েছেন।

কিন্তু এপিএস এমদাদুল হক এই বেতনে রাজধানীতে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দক্ষিণ বনশ্রী জামে মসজিদ লাগোয়া উঁচু দেয়ালঘেরা ভবনটি তার। এছাড়া বাসাবোতে রয়েছে আরো দুটি বাড়ি। এর মধ্যে একটি ১০ তলা, অন্যটি ছয়তলা। ৩৬ নম্বর উত্তর বাসাবোর বেস্ট লিভিং লিমিটেডের বেস্ট বেয়ারেক লিভিং অ্যাপার্টমেন্টে বাস করেন এমদাদ। আবাসন ব্যবসায়ও রয়েছে তার বিনিয়োগ।  রিমঝিম আবাসনের ১৫ শতাংশ শেয়ার এমদাদের নামে।

news24bd.tv/SHS