গরমকালে জোহর নামাজের সময়

গরমকালে জোহর নামাজের সময়

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

গরমের তাপ এবং শীতের তীব্রতা মূলত উৎপত্তি হয় জাহান্নাম থেকে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে আমার প্রতিপালক আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন, একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আরেকটি নিঃশ্বাস গরমকালে। ফলে তোমরা গরমের তাপ ও শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক।

(সহিহ বুখারি)

ভীষণ গরমের সময় রসুলুল্লাহ (সা.) বিলম্ব করে জোহর নামাজ আদায় করতেন। কোরআন হাদিসের আলোকে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান প্রভু কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া মুমিনদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। ’ (সুরা নিসা-১০৩)।

অনুরূপভাবে অসংখ্য সহিহ হাদিসের আলোকে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করা ফরজ ও নামাজ আদায় হওয়ার জন্য শর্ত। এক ওয়াক্তের নামাজ অন্য ওয়াক্তে পড়া মোটেই বৈধ নয়।

ওয়াক্তের আগে নামাজ পড়লে পুনরায় তা পড়তে হবে। আর ওয়াক্ত অতিক্রম হওয়ার পর নামাজ পড়লে কাজা হিসেবে গণ্য হবে এবং এমন করা মহাপাপ হবে। ওয়াক্ত মতো নামাজ পড়াকে কেউ অস্বীকার করলে সব ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে তাকে কাফের বলা হবে। তবে জানার বিষয় হলো, নামাজ আদায় করার কিছু মুস্তাহাব ও উত্তম সময় রয়েছে।

ব্যতিক্রম কোনো কারণ বা বিশেষ কোনো সমস্যা না হলে রসুলুল্লাহ (সা.) সেই মুস্তাহাব সময়ে নামাজ আদায় করতেন। যেমন, তিনি গরমকালে জোহর নামাজ বিলম্বে পড়তেন। তাই জোহর নামাজ বিলম্বে পড়া মুস্তাহাব ও উত্তম। নিচে কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদিস পেশ করা হচ্ছে যেগুলোতে মহানবী (সা.) গরমকালে জোহর নামাজ বিলম্বে পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে একদা ভ্রমণে ছিলাম, সে মুহূর্তে মুয়াজ্জিন জোহরের নামাজের আজান দেওয়ার প্রস্তুতি নিলে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঠান্ডা হতে দাও’। কিছুক্ষণ পর মুয়াজ্জিন পুনরায় আজানের প্রস্তুতি নিলে রসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, ‘ঠান্ডা হতে দাও’। এমনকি আমরা পাহাড়ের দীর্ঘ ছায়া দেখতে পাই, অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, গরমের তীব্রতা দোজখের উত্তাপের কারণে হয়। অতএব, তীব্র গরমকালে ঠান্ডা করে নামাজ পড়বে (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জোহর নামাজ ঠান্ডা অবস্থায় পড়ো, কেননা গরমের তীব্রতা দোজখের উত্তাপের কারণে হয়। ’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)। আনাস (রা.) থেকে আরও একটি হাদিস অত্যন্ত বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) গরমকালে ঠান্ডা করে এবং শীতকালে তাড়াতাড়ি করে জোহর নামাজ পড়তেন। (নাসায়ি, হাদিস সহিহ)।

বিশিষ্ট ফকিহ ইমাম ইবনে কুদামা লিখেন, ‘ঠান্ডা করে নামাজ পড়ার অর্থ এতটুকু বিলম্ব করে জোহর নামাজ পড়া যাতে গরম বিলুপ্ত হয়ে আবহাওয়া স্নিগ্ধ হয়ে যায়। ইমাম বুখারি, ইমাম আহমদসহ অসংখ্য ইমাম, মুহাদ্দিস এবং আরবের প্রসিদ্ধ আলেম ইমাম ইবনু তাইমিয়াও গরমকালে জোহর নামাজ বিলম্ব করে পড়াকে মুস্তাহাব (উত্তম) বলে উল্লেখ করেছেন (মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া)।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

news24bd.tv/SHS  

এই রকম আরও টপিক