আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই...

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই...

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বেশ কিছুদিন সিলিমপুর মৎস্য খামারে পুকুরের মাটি কাটা ও গাছপালা লাগানো দেখে সময় কাটাচ্ছি। ভালোই লাগছে। তবে তীব্র রোদ এবং গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। গাছের নিচে সারা দিন বসে থেকেও স্বস্তি পাই না।

স্ত্রীর শাসন, ‘রোদ্রে ঘোরাফেরা কর না’। ছেলেমেয়েদেরও একই কথা। চেষ্টা করি যতটা রোদ এড়িয়ে চলা যায়। কিন্তু গরম এড়াবার উপায় নেই।
মজার ব্যাপার এখানে দিনে অন্তত ১০-১৫ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। ধান খেতে পানি দিতে পারছে না, কৃষকের সে হাহাকার দেখলে বুক ফেটে যেতে চায়। বিদ্যুৎ যায় বেশি, আসে কম-এ এক হরিবল কারবার। কীভাবে যে দেশের মানুষ চলছে তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন ছাড়া আর কেউ জানেন না।

এই প্রচন্ড গরমে শিশুর হাসির মতো ধান খেতগুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে। পাকা ধানে পোকা লাগছে। মূলত কাঁচা ধানে পোকা লাগে। কিন্তু এই তীব্র গরমে উল্টো নিয়মে চলছে, পাকা ধানে পোকা ভাবা যায় না। কিন্তু আসল সত্য হলো পোকা লেগেছে। সারা দেশে কতটা যে ক্ষতি হবে এখনো বলা যায় না। মৎস্য খামারে যখন মাসখানেক আগে পুকুর খনন শুরু হয়েছিল তখন প্রতিদিনই ভাবতাম, মনে মনে বলতাম যেন বৃষ্টি না আসে। মাটির কাজ শেষ, এক সপ্তাহ থেকে সকাল-বিকাল ভাবছি পরম করুণাময় আল্লাহ বৃষ্টি দিন। গাছগুলো মরে গেল।

আবহাওয়াবিদরা বলছে, আরও এক সপ্তাহ বৃষ্টি হবে না। যদিও আবহাওয়া অফিসের অনেক কথাই সত্য হয় না। আজ কদিন থেকেই ভাবি আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেন মিথ্যা হয়। কিন্তু হচ্ছে না। কবে বৃষ্টি আসবে সে নিয়ে বড় উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে। যখন লিখতে বসেছি তখনই যদি বৃষ্টি আসত সবকিছু ভাসিয়ে নিত, বড় ভালো হতো।

এ সেই জায়গা যেখানে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলাম। শালগ্রামপুর বাজারের পাশে দেলোয়ারের বাবা নুরুর জমিতে ছিল পাতার ক্যাম্প। আমাদের দেশে একসময় বিড়ির ভীষণ প্রচলন ছিল। টাঙ্গাইলে মস্ত বড় বড় বিড়ির ফ্যাক্টরি ছিল। ভারত থেকে বিড়ির পাতা আসত। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ভারতের টেন্ডু পাতা বন্ধ হয়ে গেলে বিড়ির শিল্প মারাত্মক হুমকিতে পড়ে। সেই সময় থেকে মধুপুরের আশপাশে এক ধরনের বিড়ির পাতার গাছ দেখা যায়। খুব সম্ভবত গাদিলা পাতা বা অন্য কোনো নামে ডাকা হয়। তার এক ব্যবসা ছিল শালগ্রামপুরে। সে পাতা তখন পূর্ব পাকিস্তানে চলত না, পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল তার ব্যাপক চাহিদা।

উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের কিছু পাঠান শালগ্রামপুরে পাতার ব্যবসা করত। সেই সময়ে তারা মাসে কোটি টাকার পাতা কিনত এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে প্রচুর লাভবান হতো। ১০০ টাকার পাতা তারা ৩০০ টাকায় বিক্রি করত। সখীপুর, মধুপুর, বাটাজোর, কালিয়াকৈর এসব এলাকার বহু লোক পাতা বিক্রি করে চমৎকার সুন্দরভাবে সংসার চালাত। আর শালগ্রামপুরে ছিল মমতাজ খান নামে এক পাঠান ব্যবসায়ী। তার ১২-১৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মচারী ছিল আর বাকি সবাই স্থানীয় লোকজন। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলা হয়েছিল মির্জাপুরের সাটিয়াচরাতে। সে প্রতিরোধে মূলত তখনকার ইপিআররা নেতৃত্ব দিয়েছিল।

টাঙ্গাইল থেকে ১৮-১৯ কিলোমিটার ঢাকার দিকে প্রথম প্রতিরোধ শিবির গড়ে তোলা হয়েছিল। এক ব্যাটালিয়ন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে আতকা বাধা দিলে তাদের বিপুল ক্ষতি হয়। ৭০-৮০ জনের বেশি নিহত, আহত হয় আরও দুই শতাধিক। আচমকা  আক্রমণে দিশাহারা হয়ে ২৫-৩০টি পাকিস্তানি হানাদার গাড়ি রাস্তার দুই পাশে পড়ে যায়। গাড়িগুলো উল্টেপাল্টে পড়তেও বেশকিছু হানাদার আহত-নিহত হয়। এরপর শুরু হয় কিয়ামতের আলামত। বেশ কয়েকটি মেশিনগান গর্জে ওঠে, কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়, সেভেনটি টু আর আর ব্যবহার করা হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আকাশে দুই-তিনটি হেলিকপ্টার আসে, দুটি স্যাবরজেট ওপর দিয়ে উড়ে গেলে মাটি ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আমাদের প্রতিরোধ কয়েক মিনিটের বেশি চলেনি। হেলিকপ্টার এবং বোমারু বিমান আসার আগ পর্যন্ত ইপিআরদের মনোবল ভালোই ছিল।

ছাত্র যুবক কৃষক শ্রমিক রিকশাওয়ালা নিয়ে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যরাও খুব একটা দুর্বল ছিল না। কিন্তু হেলিকপ্টার আর বোমারু বিমানের দাপটে তারা টিকতে পারেনি। ১৪-১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাতবরণ করে। ইপিআরের মধ্যেও চারজন শহীদ হয়। বাকিরা পিছু হটে রিয়ার ক্যাম্প নাটিয়াপাড়া থেকে সবাইকে গুটিয়ে নিয়ে সোজা জামালপুর-ময়মনসিংহের দিকে চলে যায়। এই যুদ্ধে আমি প্রত্যক্ষ অংশ নেওয়ার সুযোগ পাইনি। খাবার-দাবার গোলাবারুদ ও অন্যান্য জোগান দিতেই ব্যস্ত ছিলাম। আমরা পড়েছিলাম মারাত্মক হতাশায়। টাঙ্গাইল পুলিশ কোথের দায়িত্ব আমার কাছে থাকায় সেখান থেকে সব অস্ত্র, গুলি নিয়ে পাহাড়ের দিকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। ৩ এপ্রিল বিকালের দিকে আমি যখন কালিহাতী কামার্থী পার হই তখন আমাদের নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি এবং আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা হয়। তারা সীমান্তের দিকে যাচ্ছেন বলে আমাকেও তাদের পেছনে চলে আসতে বলেছিলেন। আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। অস্ত্র, গোলাবারুদ প্রথমে মরিচা, তারপর বাঘেরবাড়ী, সেখান থেকে ছোটচওনা, বড়চওনাতে লুকিয়ে রাখা হয়। নেতাদের কথামতো আমিও সীমান্তে যাওয়ার চেষ্টা করি। ৫ তারিখে প্রথমে ময়মনসিংহ, তারপর ফুলপুর, সেখান থেকে হালুয়াঘাট। ফুলপুর-হালুয়াঘাট এসব এলাকায় আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য হাতেম আলী তালুকদার এমএনএ, হুমায়ুন খাঁ পন্নী এমএনএর সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। হালুয়াঘাটের কুদরত উল্যাহ মন্ডলের সঙ্গে আমার দেখা এবং কথা হয়, তারাকান্দার শামসুল হকের সঙ্গেও কথা হয়। হালুয়াঘাট থেকে ফেরার পথে ফুলপুর থানার দ্বিতীয় অফিসার মমতাজ উদ্দিন আমাদের আটক করে। তার চোখে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানি। তার সন্দেহ জাগে আমরা পাকিস্তানের পক্ষের লোক হতে পারি।

তাই ফুলপুর থানায় আমাদের আটকালে তখন ময়মনসিংহের নেতা রফিকউদ্দিন ভূঞা সেখানে যান। আমাদের আটকের কথা শুনে তিনি খুবই অস্বস্তিতে পড়েন। তার ভয় ছিল সেকেন্ড অফিসার যদি তাদের কথা না শুনে তাই তাকে কিছু না বলে তিনি সীমান্তের হাতীপাগারে তার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে যান। আমাকেও সঙ্গে যেতে অনুরোধ করেন। আমি তার সঙ্গে যাই। পশ্চিম পাকিস্তানি ভেবে আমাদের ফুলপুর থানায় আটক করা হয়েছে, থানা অফিসার সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এ কথা বলতেই তিনি ভীষণভাবে রেগে যান এবং বলেন, ‘আমার নাতি লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকীকে এখন তোমাদের পাকিস্তানিদের মতো মনে হচ্ছে? তাদের ধরিয়ে দিয়ে পুরস্কার পাবার চিন্তা করছ? এখানে পাকিস্তানিরা এলে আমাদের ধরিয়ে দিয়ে একই কাজ করবে? যাও এক্ষুনি তাদের ছেড়ে দাও গিয়ে। তোমরা ভালো না, কবে যে তোমরা মানুষ হবে তাই বুঝতে পারি না। ’

এরপর একই ঘটনা ঘটেছিল জামালপুরে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে খেয়াঘাটে। সেখানে আলোচনা হচ্ছিল টাকাভর্তি বস্তা নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী এবং আসাদুজ্জামান খান ভারতে যাওয়ার পথে নিজাম সাহেবরা তাদের আটক করেছে। জামালপুরের খেয়াপারে এসব কথা শুনে দুমড়ানো-মুচড়ানো বুক নিয়ে নিজের মাটিতে ফিরতে পণ করেছিলাম এবং ফিরে এসেছিলাম সখীপুরে।

উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমার বাবা-মা, ভাই-বোন ছাতিহাটির যে পৈতৃক বাড়িতে ছিল সেখানে থাকা তাদের সম্ভব ছিল না। একসময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ির পূর্বদিকে বংশাই নদীর পারে ধানগড়ায় নাদু মিয়ার বাড়িতে আমার বাবা-মা আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৭ এপ্রিল গ্রামের বাড়ি এসে দেখি সে এক অভাবনীয় ব্যাপার। নিজের বাড়ি নিজের চেনার উপায় নেই। চারদিকে বেড়া দিয়ে এক দুর্গ বানিয়ে ফেলেছেন আমার ছোট চাচা ওদুদ সিদ্দিকী।

আমাদের বাপ-দাদার বাড়িতে চার ভিটার চার ঘর। আমাদের ঘর ১৯৬২-’৬৩ অথবা ’৬৪ সালের দিকে এক প্রচন্ড ঝড়ে ভেঙে যায়। সে ঘর আর ঠিক করা হয়নি। কারণ আমরা তখন থাকতাম টাঙ্গাইলের বাড়িতে। ছোট চাচা ওদুদ সিদ্দিকী থাকতেন গ্রামে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকীর মা-বাবা ছাতিহাটিতে থাকলে যে কোনো সময় হানাদাররা তাদের ধরে নিতে আসতে পারে এবং তাতে গ্রামের ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য পৈতৃক বাড়িতে ছোট চাচা তাদের থাকতে দেননি। বাবা-মার জিনিসপত্র টোপলাটুপলি সব ঘরের বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন। আর ধানগড়ার নাদু, সিরাজ, হামিদ এবং নাদু ভাইর ছেলে শাজাহান তখন আমাদের খোঁজে ছাতিহাটির বাড়িতে গিয়েছিলেন। রহিমা-শুশু-শাহানা-বেলাল-আজাদ-মুরাদ হাউমাউ করে কাঁদছিল। নাদু ভাইরা সেসব টোপলাটুপলি কাঁধে তুলে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের মরার ভয় নেই।

 বাড়িঘরও ছোট। পুড়লেই-বা কী পুড়বে। চলেন আমাদের বাড়ি। ’ তারা নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই সেদিন বাবা-মা বাড়ি ছিল না। অনেক রাতে ক্লান্ত শরীরে ছাতিহাটি থেকে বাবা-মা, ভাই-বোনের খোঁজে ধানগড়া গিয়েছিলাম। পরের দিন চলে আসার ইচ্ছে ছিল। কারণ আমার কোথাও থাকা নিরাপদ ছিল না। খবর পেলেই পাকিস্তান হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু পরদিন ছোট ভাইবোনদের চাপাচাপিতে থেকে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা-মা যে বাড়িতে ছিলেন সে বাড়িতে নয়, অনেক দূরে মোস্তফাদের বাড়িতে ছিলাম। হঠাৎই রাত সাড়ে ১১-১২টায় দরজায় করাঘাত, ‘বজ্রভাই, বজ্রভাই দরজা খোলেন। লতিফ ভাই অনেক সৈন্য নিয়ে কালিহাতী এসেছেন। আপনাকে নিয়ে যেতে আমাদের পাঠিয়েছেন। ’

সেখানে আমার প্রিয় সাথী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বীরপ্রতীক যেমন ছিল তেমনি ফজলুল হকের ভাই হুরু, আমাদের পাশের গ্রাম পাকুটিয়ার মোংলা আরও কে কে যেন ছিল। তখনই মা-বাবাকে বলে ধানগড়া থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। ফজরের আজানের পর কালিহাতী এসে দেখি কেউ নেই। পরে নদী পার হয়ে হামিদপুর গিয়ে দেখলাম সাটিয়াচরা থেকে যে ইপিআরের দল পিছু হটেছিল তারাই লতিফ ভাইর নেতৃত্বে আবার এসেছে। কালিহাতী যুদ্ধ হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। খুবই ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। ইপিআররা কারও কথা শুনছিল না। আমরা সবাই ছিলাম ইপিআরদের মুখ চেয়ে। সেখানেও পাকিস্তান হানাদাররা যখন অবলীলায় ঘাড়ের ওপর ঝাঁপিয়ে বসে তখন কয়েকটি অস্ত্র চলেছিল। আচমকা আক্রান্ত হয়ে পাকিস্তানিরা অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। কয়েক মিনিটেই আমাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদারদের প্রচন্ড ক্ষতি হয়। নিজেদের গুলিতে নিজেদের সামনে থাকা অনেক সৈন্য মারা যায়। সেখানে একজন পাকিস্তানি মেজরও মারা গিয়েছিল। আমরা সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। সেই প্রথম আমি একা হয়ে পড়ি।  

এর আগে কখনো একা হইনি। কেউ না কেউ সঙ্গে ছিল। এর ৮-১০ দিন পর সারা জেলার চর-ভর-পাহাড় ছুটে বেড়াই। এরপর আবার ছাতিহাটিতে এসে দেখি মা-বাবা বাড়ি এসেছেন। দুই বা তিন দিন আগে আমি মনস্থির করেছিলাম, এ অবস্থায় কাউকে পাওয়া যাবে না। কোনো নেতার খবর নেই। তাই যা করার নিজেদেরই করতে হবে। কামার্থীর সাইদুরকে চিঠি লিখি, কয়েকজন বিশ্বস্ত বন্ধুদের নিয়ে চলে এসো। সে চলে এসেছিল। কিন্তু তার আগেই আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম। ১০-১২ দিন আগে কালিহাতী যুদ্ধে ইপিআররা পিছিয়ে যেতে যে অস্ত্র ফেলে গিয়েছিল তা স্থানীয় লোকজন কুমারবাড়ীর আশপাশে লুকিয়ে রেখেছিল।

তারই খবর নিয়ে এসেছিল নৌবাহিনীর সৈনিক কস্তুরীপাড়ার মনিরুল ইসলাম। ফারুককে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম তার সঙ্গে। কস্তুরীপাড়া থেকে সাথী হয়েছিল মোয়াজ্জেম হোসেন খান, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শাজাহান, প্রখ্যাত নাট্যকার মামুন অর রশীদসহ আরও কয়েকজন। গভীর রাতে কালিহাতীর কুমারপাড়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র, কিছু গুলি, ৫০-৬০টি গ্রেনেড উদ্ধার করে এনেছিলাম। প্রায় দুই কিলোমিটার বেলাভূমি হওয়ায় আমাদের খুব কষ্ট হয়েছিল। বিশেষ করে সিলেটের ফারুক ও মামুন অর রশীদ বেটেখাটো হওয়ায় তারা প্রায় ডুবে যাচ্ছিল।  

যাই হোক, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কস্তুরীপাড়া হয়ে মরিচাতে এসে দেখি ছয়-সাতজন সহকর্মী নিয়ে সাইদুর বীরপ্রতীক আগের রাত থেকে সেখানে অপেক্ষা করছে। মনে হয় আমরা তখন ১১ জন। তার মধ্যে গুলি ছুড়তে জানি মাত্র দুজন। একজন নৌবাহিনীর মনিরুল ইসলাম, অন্যজন আমি। আমাদের কাছে খবর ছিল শালগ্রামপুর পাতার ক্যাম্পে বেশকিছু অস্ত্র আছে। আমরা সেটা উদ্ধারে পাগল হয়ে ছুটেছিলাম।

 না, পাতার ক্যাম্পে কোনো অস্ত্র পাইনি। কিন্তু পাতার ক্যাম্পের মূল মালিক মমতাজ খানকে পেয়েছিলাম। যার বড় ভাই ছিল ঢাকার দায়িত্বে এক লে. কর্নেল। ওষুধপত্র, খবরাখবর নানান সাহায্য হয়েছে তার মাধ্যমে। সে শালগ্রামপুরকে স্বাধীনতার পর আমরা সংগ্রামপুর নামে ডেকেছি। এখন অনেকেই সংগ্রামপুর বলে না, শালগ্রামপুর বলে। আমরা অনেক জায়গাতে সফল হতে পারি নাই। ভূঞাপুরে আমাদের কর্মী কদ্দুস শহীদ হয়েছিল। কদ্দুসের নামে ভূঞাপুরের নাম রেখেছিলাম কদ্দুস নগর। কিন্তু সেটা আর হয়নি। হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু খুনিদের হাতে নিহত না হলে হয়তো অনেক কিছুই হতো। পিতার অবর্তমানে অনেক কিছুই হয়নি, আর যে হবে তাও আশা করি না। তীব্র গরমে সংগ্রামপুরের একেবারে গায়ে সিলিমপুরে বসে বসে প্রথম অভিযানের অনেক কথা মনে পড়ছে।

লেখক : রাজনীতিক

news24bd.tv/desk