বিশ্বে এতো তরুণ বিলিওনিয়ার হয়ে উঠছেন কীভাবে?

গুস্তাভ ম্যাগনার ১৯ বছর বয়সেই তার বাবার নরওয়েজিয়ান ফিশিং কোম্পানি সালমারের আংশিক মালিকানা পেয়ে যান

বিশ্বে এতো তরুণ বিলিওনিয়ার হয়ে উঠছেন কীভাবে?

অনলাইন ডেস্ক

কয়েকদিন আগে ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বজুড়ে যে ধনী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যায়  বেশ কিছু অপরিচিত তরুণ মুখ। তাদের অনেকেই এখনও কাজই করতে শুরু করেনি বা কোন ক্যারিয়ারে ঢোকেনি। কিন্তু যথেষ্ট সুবিধা তারা পেতে যাচ্ছে, কারণ ২০০৯ সালের পর প্রথমবার সমস্ত বিলিওনিয়ার যাদের বয়স ৩০ এর নিচে, তারা সবাই উত্তরাধিকার সূত্রে এই সৌভাগ্যের মালিক হয়েছে।
সবমিলে যে ২৫ জন বিলিওনিয়ার তালিকায় দেখা যাচ্ছে যাদের বয়স ৩৩ বছর বা তার কম, এদের মধ্যে মাত্র ৭ জন নিজ চেষ্টায় ও পরিশ্রমে সম্পদের মালিক হয়েছেন।


লেখক কেন কস্টা বলেন, এটা পরিষ্কার যে “রিয়েল এস্টেট, ল্যান্ড, স্টক এবং শেয়ারে আগে কখনোই এত টানা ছিল না – আর হঠাৎ করে সেটা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে চলে গিয়েছে। ”
“আর আগে কখনোই ভবিষ্যত পৃথিবী এবং পুঁজিবাদ নিয়ে এই পরবর্তী প্রজন্মের চিন্তাটা তাদের পূর্বসূরীদের থেকে এতটা আলাদা ছিল না,” গত বছর প্রকাশিত নিজের এক নিবন্ধে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাংকার এবং সমাজসেবক।
কস্টা নিজেও একজন বিলিওনিয়ার এবং তার প্রধান থিসিস হল, তরুণ যারা দীর্ঘদিন তাদের আগের প্রজন্মের সম্পদ ভোগের কারণে বঞ্চিত হয়েছে, তারা বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উপর বিরক্ত।

তার উপর, যারা বুমার্স (যাদের জন্ম ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে) তাদেরকে খুব অল্প সময়ে ধনী হবার জন্য যথেচ্ছাচারের মাধ্যমে এই পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য দায়ী করে থাকে এই নতুন প্রজন্ম।


“জেনিয়ালস (১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্ম নেয়া তরুণ মিলেনিয়ালস এবং ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে জন্মানো জেনারেশন জেডকে একসাথে উল্লেখ করেন তিনি) যেমন অর্থ সম্পদের মালিক হবে তেমনি ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তিও হবে তাদের, আর প্রযুক্তিকে মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করে তারা নিজেদের দর্শন ছড়িয়ে দেবে,” বলে মনে করেন তিনি।
“এই অবশ্যম্ভাবী ঘটনা এড়ানোর কোন সুযোগ নেই, আর এরইমধ্যে হাতবদল আসলে শুরু হয়ে গিয়েছে এবং তা বেশ দ্রুতগতিতে ঘটছে। আর এই ঘটনা কিন্তু চুপচাপ ঘটবে না। এটার একটা বিরাট প্রলংয়করী প্রভাব পড়বে অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিতে। আর এর ফলাফল কী হবে তা পুরোটাই নির্ভর করছে নতুন প্রজন্মের উপর। ”
“আমার আশা যে তারা একটা টেকসই ও উন্নত অর্থনৈতিক ভবিষ্যত অর্জন করে নেবে, এবং আমি মনে করি আমাদের বুমারদের এটা দায়িত্ব তাদের সেই অর্জনে সাহায্য করা,” বলেন কস্টা।
ইউবিএসের এক রিপোর্টে দেখা যায়, অনেক হাই-প্রোফাইল বিলিওনিয়ার ব্যবসায়ী যদিও তাদের সম্পদের একটা বিরাট অংশ দান করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদের উত্তরাধিকাররাও একই পথে হাঁটবে কি-না সে বিষয়টি জানা যায় না।
এতে বলা হয়, “যেখানে দুই তৃতীয়াংশ (৬৮%) প্রথম প্রজন্মের বিলিওনিয়ার বলে যে তাদের সেবামূলক কাজের লক্ষ্য পূরণ এবং পৃথিবীতে একটা অবদান রেখে যাওয়াই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য, সেখানে এক তৃতীয়াংশেরও কম (৩২%) উত্তরাধিকার প্রজন্মকে একই উদ্দেশ্যের কথা বলতে শোনা যায়। ”
ইউবিএসের অভিজ্ঞতা বলে যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ দান করার ব্যাপারে নতুন প্রজন্ম খুব একটা আগ্রহ দেখায় না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা হয়তো পারিবারিক ফাউন্ডেশনে বিনিয়োগ করে থাকে।
“তবে যেসব কোম্পানি পরিবেশগত ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও চালনার আগ্রহ দেখা যায় বাণিজ্যিক এবং কল্যাণকর দুই উদ্দেশ্যেই,” রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
কয়েকজন উত্তরাধিকারের সাথে কথা বলে লা ইনভেস্টিগেশন ডি ব্যাঙ্কো।
“যেহেতু আমার বাবা তেল, গ্যাস ও খনি নিয়ে কাজ করেছে, আমি এখন এই পুরো ব্যবসাটাকে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি, প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছি যাতে পরিবেশে প্রভাবটা কম পড়ে,” বলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের একজন বিলিওনিয়ার।
“কিন্তু আমি এ সমস্ত ব্যবসা রাতারাতি বিক্রি করে দিতে পারবো না। এটা পারিবারিক ব্যবসার একটা যাত্রা, আমি যার হাল ধরি মাত্র কয়েক বছর আগে,” বলেন এই বিলিওনিয়ার।
আসলে বহুদিন ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিষয়টা ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছিল : ‘দ্য গ্রেট ওয়েলথ ট্রান্সফার’ অর্থাৎ একটা সময় বিশ্বের বেশিরভাগ ধনীর সম্পদের হস্তান্তর হবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে, সেটারই ইঙ্গিত ফোর্বসের এই তালিকায় এত তরুণ উত্তরাধিকারের উপস্থিতি। ধারণা করা হয় যে ২০২৯ সালের শেষ নাগাদ, ৮.৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারেরর বেশি অর্থ বর্তমান বিলিওনিয়ার থেকে তাদের পরবর্তী উত্তরাধিকারের হাতে যাবে।  
এই জগতে সুইস ব্যাংক ইউবিএসের এস্টেট প্ল্যানিং ম্যানেজার আইনজীবী ইউরি ফ্রেইতাসের ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা। ফ্রেইতাস একমত হন যে বৈশ্বিক সম্পদের ‘গ্রেট ট্রান্সফার’ এরইমধ্যে বেশ দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলছে, আর বিশ্বের বিলিওনিয়ার এখন যে কোন বয়সেই, একটু তাড়াতাড়িই, সম্পদ পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে দিচ্ছে।
নতুন বিলিওনিয়ার উত্তরাধিকার আসাটা এমন এক সময় হতে যাচ্ছে, যখন বেশিরভাগ সম্পদ কয়েকটি মাত্র পরিবারের হাতে থাকায় পৃথিবীর একটা বড় অংশ জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এ বছরের শুরুর দিকে অঙফ্যামের প্রকাশিত ইনইকুয়েলিটি এসএ রিপোর্টে উঠে আসে, ২০২০ সালের পর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পাঁচ বিলিওনিয়ারের সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে, যখন মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ–প্রায় ৫ বিলিয়ন মানুষের সম্পদ এই একই সময়ে কমে গিয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয় অসমতার এই প্রভাবটা ব্যাপক। সূত্র , বিবিসি বাংলা।  

news24bd.tv/ডিডি
 

সম্পর্কিত খবর