মহানবী (সা.) যে উপার্জনকে সর্বোত্তম বলেছেন

মহানবী (সা.) যে উপার্জনকে সর্বোত্তম বলেছেন

 মাইমুনা আক্তার

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হালাল রুজি অর্জন করা ফরজের পর একটি ফরজ। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) ইসলামে হালাল রুজি অর্জনকেই বড় করে দেখা হয়, কোনো নির্দিষ্ট পেশাকে নয়। হালাল পন্থায় মুমিনের শ্রম ঘামে অর্জিত সম্পদই শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন ধরনের উপার্জন উত্তম ও শ্রেষ্ঠ? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ব্যক্তির নিজ হাতে কাজ করা এবং সৎ ব্যবসা।

(সুয়ুতি আদদুররুল মানসুর, ৬/২২০)

যুগে যুগে সব নবী-রাসুলেরই কোনো না কোনো পেশা ছিল, তাঁরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতেন না। কোনো কাজকে ছোট করে দেখতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ যত নবীই প্রেরণ করেছেন, সবাই মেষ চরিয়েছেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও? নবীজি (সা.) বলেন, হ্যাঁ, আমিও।

আমি নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীর মেষ চরাতাম। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৪৬৬)

আদম (আ.), লুত (আ.) ও ইউনুস (আ.) চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। হজরত শিশ (আ.)ও ছিলেন একজন কৃষক। তাঁর পৌত্র মাহলাইল সর্বপ্রথম গাছ কেটে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করেন।

ইদরিস (আ.) কাপড় সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একদল পণ্ডিত মনে করেন, হিকমত ও জ্যোতির্বিদ্যার জন্ম ইদরিস (আ.)-এর সময়ই হয়েছিল। নুহ (আ.) ও জাকারিয়া (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। হুদ (আ.) জীবিকা নির্বাহ করতেন ব্যবসা ও পশু পালন করে। সালেহ (আ.)-এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন।

ইবরাহিম (আ.), শোয়াইব (আ.), হারুন (আ.), আইউব (আ.), জুলকিফল (আ.), ইয়াকুব (আ.),  ইয়াসা (আ.), ইলিয়াস (আ.) পশু পালন করতেন।

ইসমাইল (আ.) পশু শিকার করতেন। দাউদ (আ.)-এর পেশা ছিল যুদ্ধাস্ত্র, লৌহবর্ম ও দেহবস্ত্র প্রস্তুত করা। সুলাইমান (আ.) ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর শাসক ও নবী। মুসা (আ.) ছিলেন একজন রাখাল। মহানবী (সা.) ছিলেন একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। তিনি ছোট বেলায় মেষও চরিয়েছেন।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে এক লোক তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলেছিল, মি. লিংকন, আপনার ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে আপনার বাবা আমার পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করত। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, স্যার, আমি খুব ভালো করেই জানি আমার পিতা আপনার পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করতেন। শুধু আপনার কেন, এখানে এ রকম অনেকেই আছেন, যাঁদের পরিবারের জন্য বাবা জুতা তৈরি করতেন। জুতা তৈরিতে তিনি ছিলেন একজন জিনিয়াস। তিনি এমন এক অদ্ভুত নির্মাতা ছিলেন যে আজ পর্যন্ত তাঁর নির্মাণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি বা কেউ অভিযোগ করেনি। আপনার কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে বলুন, আমি আপনার জন্য আর এক জোড়া জুতা তৈরি করে দেব। আমি নিজেও জুতা বানাতে পারি। লিংকন আরো বলেন, কোনো কাজ ছোট নয়। ছোট সে, যে কাজকে ছোট ভেবে অহেতুক বিদ্রুপ করে। সুতরাং কোনো পেশা ছোট করে দেখা উচিত নয়।
 

এই রকম আরও টপিক