আমেরিকা-ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ইরানের নিষেধাজ্ঞা, তালিকা প্রকাশ

আমেরিকা-ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ইরানের নিষেধাজ্ঞা, তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক

আমেরিকা ও ব্রিটেনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরান। পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলার অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ প্রতিষ্ঠান ও ৭ ব্যক্তি এবং ব্রিটেনের ৫ প্রতিষ্ঠান ও ৮ ব্যক্তি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংসদে পাস হওয়া দু'টি আইন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এই দু'টি আইনের একটি হচ্ছে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই শীর্ষক আইন। আর অন্যটি হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিদ্বেষমূলক তৎপরতা রুখে দেওয়ার আইন।

বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরান। বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিকভাবে দেশ দুটিকে অপমান করতেই ইরানের এমন চতুর কৌশল।

এর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞাকেই হাস্যকর জিনিষে রূপান্তর করতে চাইছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এই দেশটি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকার যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেগুলো হলো:

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-

১- লকহিড মার্টিন কর্পোরেশন, গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার অপরাধে।

২- জেনারেল ডাইনামিক্স কর্পোরেশন, গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলকে ১৫৫ মিলিমিটারের বুলেট সরবরাহ অপরাধে।

৩- স্কাইডিয়ো কোম্পানি, গাজা যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইসরাইলকে ড্রোন সরবরা

৪- শেভরন কর্পোরেশন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত গ্যাস কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন এবং সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করে তা গাজা যুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার অপরাধে।  

৫- খারন কোম্পানি, হামাসের বিরুদ্ধে মার্কিন অর্থ বিভাগের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন এবং অর্থ পাচারের অজুহাতে হামাস ও ইসলামি জিহাদকে ক্রিপ্টো কারেন্সি লেনদেনে বাধা দেওয়ার অপরাধে।

নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত মার্কিন ব্যক্তিদের তালিকা:

১- জেসন গ্রিনব্ল্যাট, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা। হামাসকে ধ্বংসের প্রচেষ্টায় জোরালো সমর্থন ও সহযোগিতা করার অপরাধে।

২- মাইকেল রুবিন, আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ থিঙ্ক ট্যাংক। হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত গাজার ওপর আগ্রাসন অব্যাহত রাখার আহ্বানকে সমর্থন ও তা বাস্তবায়নে সহযোগিতার অপরাধে।

৩- জেসন ব্রডস্কি, তথাকথিত 'অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরান' এর নির্বাহী পরিচালক। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে নানা পরিকল্পনা পেশ এবং ফিলিস্তিনিদের 'আল আকসা তুফান' অভিযানে ইরানের ভূমিকা রয়েছে-এই মর্মে মিথ্যাচারের অপরাধে।

৪- ক্লিফোর্ড ডি. মে, ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসি'র প্রেসিডেন্ট। গাজা যুদ্ধে মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেওয়ার অপরাধে।

৫- জেনারেল ব্রায়ান ফেন্টন, মার্কিন সেনাবাহিনীর স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের কমান্ডার। ইহুদিবাদী ইসরাইলকে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের অপরাধে।

৬- ব্র্যাড কুপার, মার্কিন নৌবাহিনীর ৫ম নৌবহরের কমান্ডার। গাজা যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সমর্থন করার অপরাধে।

৭- গ্রেগরি জে. হেইস, অস্ত্র কোম্পানি আরটিএক্স'র সিইও। গাজা যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহযোগিতার অপরাধে।

এছাড়া দখলদার ইসরায়েলের নানা অপরাধ বিশেষকরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সহিংসতা, ভারী ও নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার, ফিলিস্তিনিদের ভূমি ও ঘরবাড়ি দখল, অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের অব্যাহত প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও সহযোগিতার অপরাধে ব্রিটেনের কয়েক জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা

১- সাইপ্রাসে ব্রিটেনের আক্রোতিরি বিমান ঘাঁটি।

২- লোহিত সাগরে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ডায়মন্ড রণতরী।

৩- ব্রিটিশ এলবিট সিস্টেম কোম্পানি।

৪- ম্যাগিট পার্কার ব্রিটিশ কোম্পানি।

৫- ব্রিটিশ রাফায়েল কোম্পানি।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্রিটিশ ব্যক্তিদের তালিকা:

১- গ্র্যান্ট শ্যাপস, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

২- জেমস হ্যাকেনহল, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধিনায়ক।

৩- শ্যারন নেসমিথ, ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ।

৪-পল রেমন্ড গ্রিফিথস, ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর সহকারী চিফ অফ স্টাফ।

৫- অ্যাড্রিয়ান বার্ড, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক।

৬- রিচার্ড ক্যাম্প, লোহিত সাগরে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর রণতরী রিচমন্ডের কমান্ডার।

৭- সাইমন ক্ল্যাক, সাইপ্রাসে ব্রিটিশ অ্যাক্রোতিরি বিমান ঘাঁটির কমান্ডার।

৮- পিটার ইভান্স, লোহিত সাগরে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ডায়মন্ড রণতরীর কমান্ডার।

news24bd.tv/তৌহিদ