একদলীয় শাসনে বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত: মঈন খান

একদলীয় শাসনে বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত: মঈন খান

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, একদলীয় শাসনে বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে রোববার (৫ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে এক আলোচনা সভায় এসব কথা জানান তিনি।

তিনি বলেছেন, আজকে জাতিসংঘের যে সিদ্ধান্তের কথা আমরা বলেছি অর্থাৎ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস, সেই মুক্ত গণমাধ্যমে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য কি? সেটা কিন্তু জাতিসংঘের দলিলে লেখা আছে। মুক্ত গণমাধ্যমের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো অর্জিত গণতন্ত্র।

গণতন্ত্রের কারণেই কিন্তু জাতিসংঘ মুক্ত গণমাধ্যমের কথা চিন্তা করেছে, ঘোষণা করেছে এবং পালনও করছে। কাজেই সেই গণতন্ত্র যদি দেশে না থাকে এবং দেশে যদি একদলীয় শাসন কায়েম হয়ে থাকে তাহলে মানুষের মুক্ত চিন্তা-বিকাশের কোনো সুযোগ না থাকে। এখানে যদি মানুষকে বাধ্য করা হয় যেমন একই লাইনে চলে, ডানেও যেতে পারে না আবার বাঁয়েও যেতে পারে না। ঠিক সেইভাবে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে যেখানে একই লাইনে আওয়ামী লীগের নীতি অনুযায়ী কথা অনুযায়ী, বক্তব্য অনুযায়ী, চিন্তাধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে এই লাইনে চলার জন্য যেখানে বাধ্য করা হয় সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকতে পারে না।

আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে এ কথা আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে বাংলাদেশ যে আদর্শে সৃষ্টি হয়েছিলো সেই গণতন্ত্র রক্ষার মূল কবজ হচ্ছে মুক্ত সংবাদমাধ্যম। সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে আজকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হোক আজকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আমাদের প্রতিজ্ঞা।

গণমাধ্যম বা মিডিয়া সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছিলাম আজ তার পুনরাবৃত্তি করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, দ্য মিডিয়া ইজ মোর পাওয়াফুল বাই দ্য স্টেট। আমি এ কথা বলি এবং আমি বিশ্বাস করি মিডিয়া একটি রাষ্ট্রের শক্তির চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী। কেনো বলছি এই কথা? আমি সেটা ব্যাখ্যা দিয়ে বলছি, বিকজ দ্য মিডিয়া ক্যান ডু এ্যান্ড আন-ডু স্টেট এক্সারসাইজ। অর্থাৎ সরকার যতবড় শক্তিশালী হোক তারা যদি অন্যায় করে সেই অন্যায়কে প্রকাশ করে দিয়ে মিডিয়া সেই রাষ্ট্রকে গড়তে পারে, ভাঙতে পারে। আজকের সরকার এই সত্যকে যত শিগগিরই উপলব্ধি করবে আমি বলব এটা তাদের জন্য তত মঙ্গল। '

জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, 'আজকে দেশের কি অবস্থা সেটা আমরা-আপনারা সবাই জানি। আজকে যদি গণমাধ্যমকে আমরা মুক্ত করতে চাই, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা আনতে চাই, তাহলে প্রথম আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সেদেশে গণমাধ্যম মুক্ত থাকে না এবং গণমাধ্যমের কর্মীরা কখনো স্বাধীন হবে না। '

এ সময় তিনি আরও বলেন, আমি জোর গলায় বলছি, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কর্মীরা আজকে স্বাধীন নন। তারা আর্থিক সংকটে জর্জরিত। তাদের আজকে চাকুরির নিশ্চয়তা নেই। যখনই সাংবাদিকরা সত্য কথা বলতে চায় তখন তাদের চাকুরি চলে যায়। গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের মতো এরকম নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোনো মানুষ নাই। আজকে কথা কথায় মামলা হচ্ছে, সাগর-রুনি হত্যাকারীর বিচার হচ্ছে না, ৬০ জন সাংবাদিক হত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে না, বন্ধ পত্রিকাগুলো খোলার কোনো ব্যবস্থা নাই, আপনি চারটি পত্রিকা বন্ধ করে, পাঁচ হাজার পত্রিকা বন্ধ করে, হাজার হাজার নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে আপনি মুক্ত গণমাধ্যমের কথা বলছেন হাসতেও কষ্ট লাগে…. এটা চলতে পারে না।

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভয়াবহ সংকটকাল অতিক্রম করছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এমন সংকটকাল গণমাধ্যমকে পার করতে হয়নি। গণমাধ্যমের টুঁটি এমনভাবে চেপে ধরা হয়েছে যে এর স্বাধীনতা প্রায় বিপন্ন। এই দুঃশাসন পাকাপোক্তভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সাংবাদিক গ্রেফতার-নির্যাতন, কথা কথায় গণমাধ্যম বন্ধ….প্রায় ৪‘শ গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে….একটা অস্বস্তিকর অবস্থা। আমি জোরালো ভাবে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদকে নিপাত ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত..যদি আমরা দেশপ্রেমিক হই, মুক্ত গণমাধ্যম চাই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাই, আমরা যদি গণতন্ত্র চাই, ভোটাধিকার চাই, নতুন প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য দেশ চাই তাহলে আমাদের প্রধান টার্গেট হওয়া উচিত ফ্যাসিবাদকে তাড়ানো, হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ। '

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক সহসভাপতি খায়রুল বাশার, একেএম মহসিন, সহকারী যুগ্ম মহাসচিব বাছির জামাল, এহেতাসামুল হক শাওন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা রফিক মাহমুদ, রাশেদুল হক, শহীদুল ইসলাম, দিদারুল আলম, শাহনাজ পলি, খন্দকার আলমগীর, আবু সাঈদ সভায় বক্তব্য রাখেন।

news24bd.tv/SC