‘ছেলেকে মেরে ফেললেও তারা যেন লাশটা দেয়’, মায়ের আর্তি

গাছে বেঁধে নির্যাতন, ৮ দিন ধরে নিখোঁজ কিশোর

‘ছেলেকে মেরে ফেললেও তারা যেন লাশটা দেয়’, মায়ের আর্তি

সাভার প্রতিনিধি

সাভারের আশুলিয়ায় আম চুরির অপরাধে ১৬ বছরের এক কিশোরকে গাছে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মুরাদ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের ৮ দিন পার হলেও ভুক্তভোগী ওই কিশোরের সন্ধান মেলেনি। এঘটনায় ভুক্তভোগী ওই কিশোরের মামা সুকুমার দাস বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

পরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই কারখানার দুইজন নিরাপত্তা কর্মীকে আটক করেছে।

থানা পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত ২৭ এপ্রিল (শনিবার) সকালে কাউকে কিছু না বলে ঘুম থেকে উঠে যায় ১৬ বছর বয়সী কিশোর শ্রী কৃষ্ণ। অনেক খোঁজাখোজি করেও তাকে না পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর দুইদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই কিশোরের গাছে হাত-পাঁ বাঁধা ছবি ভাইরাল হলে তার মা সুমি রানী দাস লোক মারফত জানতে পেরে পুলিশ নিয়ে দক্ষিণ গৌরিপুর এলাকায় মুরাদ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় যান। তবে এসময় পুলিশ বাদী পক্ষের লোকজনকে সাথে না নিয়ে তারাই কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে চলে যায়।

পরে বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তায় আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মুরাদ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার দুইজন নিরাপত্তা কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

ভুক্তভোগী কিশোরের মা সুমি রানী দাস অভিযোগ করেন, আমার ছেলেকে আম চুরির অপরাধে কারখানার ভেতরে গাছেবেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে। কারখানার আশপাশের লোকজন ছাদের ওপর থেকে দেখে ভিডিও করেছে। তারা আমাকে বলেছে আপনার ছেলেকে কর্তৃপক্ষ মেরে গুম করে ফেলেছে। আজকে ৮ দিন হয়ে গেলেও আমার ছেলেকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কারখানার লোকজনের কাছে একটাই চাওয়া আমার ছেলেকে যদি তারা মেরে ফেলে তাহলে অন্তত তার লাশটা যেন আমাকে দিয়ে দেয়।

নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদ অ্যাপারেলস কারখানার অ্যাডমিন কর্মকর্তা আনিসুর কিরন বলেন, আম চুরির অপরাধে কিশোর শ্রী কৃষ্ণকে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছিল, কিন্তু তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। পরে তাকে ভাত খাওয়াইয়া নতুন শার্ট দিয়ে হাতে পাঁচশ টাকা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরপর সে কোথায় গেছে বা কোথায় আছে তা আমরা জানি না। আপনি কারখানায় আসেন কথা বলি। বিষয়টি নিয়ে নিউজ কইরেন না।

আশুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্য ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত হোসেন বলেন, গাছে হাত-পা বাঁধা ছবি পাওয়ার পর কারখানার দুইজন নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে মারধর করেছে কিনা তার কোনো প্রমাণ পাইনি। তাছাড়া যেখানে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরাও নেই বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে ভুক্তভোগীর মামা, খালা ও নানীর অভিযোগ, কিশোর শ্রী কৃষ্ণকে আম চুরির অপবাদে দুই দিন কারখানার ভেতর আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরসহ নির্যাতন করেছে এবং পরে তাকে গুম করা হয়েছে। তা না হলে আজকে ৮ দিন ধরে আমরা বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করার পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের বাসায় খুঁজেও তাকে পাচ্ছি না। আমরা আমাদের ছেলেকে চাই। আমাদের আর কোনো দাবি নাই।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, কিশোরকে হাত-পা বেঁধে মারধরের ঘটনায় আটক দুই নিরাপত্তা কর্মীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।

news24bd.tv/তৌহিদ