ভারতের নির্বাচন ও নরেন্দ্র মোদির নিরঙ্কুশ জয়ের পরিকল্পনা

নির্বাচনে জেতার জন্য মোদির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।

ভারতের নির্বাচন ও নরেন্দ্র মোদির নিরঙ্কুশ জয়ের পরিকল্পনা

অনলাইন ডেস্ক

ভারতে ছয় সপ্তাহব্যাপী জাতীয় নির্বাচন চলছে। এমন সময়ে পুরো দেশজুড়ে চালের প্যাকেট থেকে শুরু করে বড় বড় বিলবোর্ড পর্যন্ত সর্বত্র দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচনে জেতার জন্য মোদির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি। নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে দেশবাসীকে বিজেপির দেয়া বার্তার মধ্যে ছিল মোদির অধীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিশ্ব পরিসরে ভারতের শক্ত অবস্থান।

এবারের নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪০০ আসনে জেতার মহাপরিকল্পনা করেছে দলটি, আর এজন্য স্থানীয় কৌশলও অবলম্বন করেছে তারা।

মতামত জরিপে জানা গেছে, ১ জুন শেষ হতে যাওয়া নির্বাচনে মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করবেন। তবে ভারতের ইতিহাসে মাত্র একবার কোনো দল লোকসভার ৪০০ আসনে জয় পেয়েছে, ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস পার্টির ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল।

রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪০০ আসনে জেতার জন্য বিজেপি তিনটি কৌশল অবলম্বন করেছে- বিরোধী দলের বর্ষীয়ান প্রার্থীর বিপরীতে তারকা প্রার্থীদের দাঁড় করানো, খ্রিস্টানসহ দক্ষিণ ভারতের সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা এবং উত্তর ভারতের পুনঃনির্ধারিত রাজনৈতিক সীমানার অধীনে হিন্দু অধ্যুষিত নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো।

গত এপ্রিলে বিজেপির প্রেসিডেন্ট জে পি নাড্ডা রয়টার্সকে বলেছিলেন, কৌশলের সংমিশ্রন, সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি এবং কৌশলের ক্ষেত্রে নমনীয়তার মাধ্যমে বিজেপি এমন অনেক আসনে জয়লাভ করবে যেখানে তারা আগে কখনো জিততে পারেনি।

তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে বিজেপি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানকে ব্যবহার করে চরমপন্থী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। নির্বাচনে জিতলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশ্বাস দিলেও বিজেপি বিয়ে এবং উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং গোত্রীয় আইন-কানুন পরিবর্তনের কথাও বলেছে। অনেক মুসলিম এবং আদিবাসী সম্প্রদায় বিজেপির এই ইচ্ছার বিরোধিতা করেছে, যা কার্যকর করতে আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি লাগবে।

রয়টার্সকে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খারগে জানান, নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভায় বিরোধী দলের মতামতকে অগ্রাহ্য করতেই মোদি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরিকল্পনা করেছেন।

প্রথম দিকের নির্বাচনে নিম্ন ভোটার উপস্থিতির কারণে বিজেপির অনেকেই ৪০০ আসনে জেতার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করলেও বিজেপির অধীনে পরবর্তী সরকার গঠিত হওয়ার বিষয়টি প্রায় সুনিশ্চিত।

কংগ্রেসের ওপর গান্ধী-নেহেরু পরিবারের প্রভাবের তীব্র সমালোচনা করে এসেছে বিজেপি। কিন্তু দক্ষিণ কেরালায় দলটি সাবেক কংগ্রেস নেতা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির ছেলে অনিল অ্যান্টনিকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে। ২০০৯ সালে নির্বাচনী এলাকাটি গঠিত হওয়ার পর থেকে সেখানে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। আসনটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিষ্টানদের বসবাস রয়েছে। বিজেপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ঐ কংগ্রেস নেতা তার ছেলের সমালোচনা করেছেন এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতাকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে অনিলের সবচেয়ে বড় সমর্থক হচ্ছেন মোদি নিজে, যিনি গত মার্চে দক্ষিণ কেরালায় এসেছিলেন এবং অনিলের প্রশংসা করেছিলেন।

গত ডিসেম্বরের পর থেকে মোদি মোট ১৬ বার দক্ষিণ ভারতের পাঁচটি রাজ্য সফর করেছেন। বিজেপি প্রেসিডেন্ট নাড্ডার মতে, ৪০০ আসনে জিততে হলে দক্ষিণ ভারতে খুবই ভালো ফলাফল করতে হবে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বসবাস দক্ষিণ ভারতে এবং অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে বিজেপিকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে।

অপরদিকে, উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশে বিজেপি বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে। নিজেকে ডানপন্থী বলে পরিচয় দেয়া কঙ্গনা জাতীয়তাবাদী আবহের অনেকগুলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। জনপ্রিয় অভিনেতাদের সন্তানদেরকে বড় বড় চলচ্চিত্রে সুযোগ দেয়ার বিরোধীতা করে আলোচনায় এসেছেন এই অভিনেত্রী।

কঙ্গনার পাশাপাশি আরও চারজন অভিনয়শিল্পী এবারের নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন।  
অঞ্জনা নেগিয়া নামে একজন ভোটার জানান, কঙ্গনা আমার পছন্দের প্রার্থী। তার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও আমি মনে করি নির্বাচনে জিতলে দেশের উন্নয়নে তিনি নতুন পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিই মুসলিম অধ্যুষিত এবং এগুলো বিরোধী দলের হাতে রয়েছে। এই তিনটি আসনের মধ্যে একটিতে জয়ের আশা করছে বিজেপি। অনন্তনাগ-রাজৌরি আসনে ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশ, এবং নতুন ভোটারদের অধিকাংশই হয় হিন্দু নয়তো আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এই নতুন ভোটাররা বিজেপির অধীনে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে, তাই বিজেপি এই আসনে জেতার আশা করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের নির্বাচনী এলাকার পুনঃনির্ধারণের ফলে উত্তর ভারতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনগুলো বিজেপির হাতে যাবে, যা দক্ষিণ ভারতে দলটির দূর্বল অবস্থানের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

news24bd.tv/ab