সিপিএ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান

সংগৃহীত ছবি

সিপিএ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিন্দা ও দ্রুত সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে শেষ হলো ৬৩তম সিপিসি সম্মেলন। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন সিপিএ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আয়োজিত সিপিএর সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন নেওয়ার বিষয়ে জল্পনা ও ঐকমত্য থাকলেও সিপিএর বিধিগত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত রেজুলেশন নেওয়া যায়নি।

সিপিএর বিধি অনুয়ায়ী কোন বিষয়ে রেজুলেশন নিতে হলে ৬০ দিন আগে প্রস্তাব আকারে তা দাখিল করতে হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেহেতু সাম্প্রতিক ঘটনা সে হিসেবে এ বিষয়ে সিপিএর রেজুলেশন নেওয়ার সুযোগ নেই।

তাই এ বিষয়ে একটি সুপারিশ গ্রহণ করে বিবৃতি প্রদান করেছে সিপিএ।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএর বর্তমান চেয়ারপার্সন ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ৬৩তম সিপিপি কনফারেন্সে সর্বসম্মতভাবে বিবৃতি প্রদানের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসময় নব নির্বাচিত চেয়ারপার্সন এমিলিয়া মনজোবা লিফাকা উপস্থিত ছিলেন। পরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
এতে কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐকমত্যেও সৃষ্টি হয়েছে। আমরা একটি সর্বসম্মত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিঃশর্ত ভাবে ফেরৎ নিতে হবে

সিপিএর সুপারিশে বলা হয়, ৬৩তম সিপিএর সাধারণ সভায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গদের মানবতাবিরোধী সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

সুপারিশ পূর্ব দীর্ঘ বিবৃতির প্রস্তাবনায়, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মায়ানমার সরকারকে অবিলম্বে নিঃশর্ত ভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার আহবান জানানো হয়। জাতিসংঘের চার্টার, বিশ্বমানবাধিকার ঘোষণা, আইপিইউ ১৩৭তম সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সামনে রেখে এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তার আলোকে রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হোক। প্রস্তাবনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্যদের উপর যে নিধনযোগ্যসহ মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিক অধিকারসহ তাদের প্রতি সকল বৈষম্য বন্ধ করে টেকসই ও চিরস্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে কমনওয়েলথ দেশগুলো। একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা, জীবিকা ও নারগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।  

বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের জীবন ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলা হয়, সীমান্ত খুলে দিয়ে, তাদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, স্যানিটেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া যাতে তারা নিজভূমে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে নিজ নিজ সংসদ থেকে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে সিপিএ সেক্রেটারি জেনারেলকে রোহিঙ্গাদের অবস্থাটি সিপিএভুক্ত সংসদ, জাতিসংঘের মহাসচিব, সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সিপিএ কনফারেন্সের ৬৪তম সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগের প্রকাশ বিষয় থাকলে তা উত্থাপন করার আহবান জানানো হয়েছে।

গত রবিবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা ইস্যুতে সিপিসি সদস্যদেরকে একটি প্রেস ব্রিফ্রিং করেন। ফলে রোহিঙ্গা ইসূটির ওপর সিপিএ দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য সৃষ্টি হয় এবং এটিকে রেজুলেশন হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব ওঠে। বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশ বিশেষভাবে মিয়ানমারের বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য সিপিএ নির্বাহী কমিটির প্রতি আহ্বান জানায়।  

সম্পর্কিত খবর