শিডিউল বিপর্যয়ের চক্রে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে 

সংগৃহীত ছবি

শিডিউল বিপর্যয়ের চক্রে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে 

অনলাইন ডেস্ক

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের চক্রে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। দুর্ঘটনা-মারামারিসহ নানা কারণে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের।

গত ২ মে বগুড়ার সান্তাহার জংশনে যাত্রীদের সঙ্গে রেলকর্মীদের মারামারি হয়।

এর পরদিন ৩ মে গাজীপুরের জয়দেবপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। যেটা উদ্ধার করতে লেগে যায় ২৯ ঘণ্টা। এরপর থেকে গত আট দিন ধরে টানা শিডিউল জটিলতায় পড়ে ট্রেনগুলো আধঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি করে ছাড়ছে।  

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোর ৩টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে ঢাকাগামী আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগির দুটি চাকা লাইনচ্যুত হয়।

মুলাডুলি স্টেশন অতিক্রম করে আউটার সিগন্যালে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ চালু হয়।

এভাবে প্রায়ই দুর্ঘটনাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। বিশেষ করে শিশু-নারী-বৃদ্ধ যাত্রীদের ভুগতে হচ্ছে বেশি। এমনকি দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ট্রেন না পেয়ে যাত্রা বাদও দিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।

রেল সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে প্রতিদিন পশ্চিমাঞ্চলে ২৩ ট্রেনটি চলে। এরমধ্যে ১৯টি আন্তঃনগর, তিনটি কমিউটার ও একটি মেইল ট্রেন।  

এর মধ্যে ঢাকা-জয়দেবপুর হয়ে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু হয়ে ঈশ্বরদী যায় ১৯টি ট্রেন এবং ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যায় চারটি ট্রেন। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস, মধুমতী এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ছাড়া বাকি ১৯টি ট্রেনই আধঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টা দেরিতে চলছে।

এ ট্রেনগুলোর মধ্যে রংপুর এক্সপ্রেস আধঘণ্টা দেরিতে চললেও বাকি ১৮টি ট্রেন দীর্ঘক্ষণ দেরিতে স্টেশন ছাড়ছে। এর মধ্যে আন্তঃনগর রয়েছে- পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, রাজশাহী এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, ধুমকেতু এক্সপ্রেস, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস।  

দেরিতে চলা তিন মেইল ও কমিউটার হচ্ছে রাজশাহী এক্সপ্রেস, ঢাকা কমিউটার ও টাঙ্গাইল কমিউটার।

কমলাপুর স্টেশন সূত্র বলছে, এর আগে এপ্রিলের গরমের কারণে ট্রেন ধীরে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন ৮০ কিলোমিটার গতির ট্রেনকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলতে হয়। এতে প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছিল না এবং পৌঁছাতেও পারছিল না। এখন গরম না থাকলেও নিয়মিত বিরতিতে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে গত আট দিন ধরেই শিডিউল বিপর্যয় চরমে উঠেছে।  

সূত্রমতে, পশ্চিমাঞ্চল রেলের রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর লাইনের প্রতিটি ট্রেন সর্বনিম্ন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। আবার রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী চারটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন কয়েক ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে।  

এদিন সকালে নীলসাগর ও একতা এক্সপ্রেস, রাজশাহী কমিউটার নির্ধারিত সময় থেকে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর স্টেশন ত্যাগ করে। দিনের বাকি ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যায়।  

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ট্রেনগুলো স্টেশনে আসতে দেরি হওয়ায় ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। রংপুর এক্সপ্রেসে অন্য ট্রেনের রেক দিয়ে আধঘণ্টা পরে ছাড়া হয়েছে।

যাত্রীরা বলছেন, যেসব ট্রেন বিলম্বে রয়েছে সেসব ট্রেন নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। স্টেশনে থাকা বোর্ডে বিলম্ব লেখা ওঠে। কিন্তু ট্রেন কোথায় আছে বা কখন আসবে সেটা কেউ জানে না।

news24bd.tv/DHL