অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক ও শান্তির পথে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে বম সোসাল কাউন্সিল। শুক্রবার (১০ মে) বম সিভিল ভয়েস নামে ফেইসবুক পেইজে এক ভিডিও বার্তায় বম সমাজের প্রতিনিধিরা এ আহ্বান জানান। ২২ মিনিটের ভিডিও বার্তাটি ছিল বম ভাষায়।
বম জনগোষ্ঠীর সামাজিক সংগঠন বম সোসাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম ভিডিও বার্তায় বলেন, “আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি কেএনএ/কেএনএফ নেতাদের কিছু কথা বলার এবং অনুরোধ করার জন্য।
“২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতের ঘটনা এবং তার পরবর্তীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বম গ্রামগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ ছাড়া সকলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, “ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ে বসবাসকারী বম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। আম, আনারস, ফলমূল বিক্রি করে যেখানে কোটি টাকা পাওয়ার কথা সেখানে বম সম্প্রদায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ”
পাড়াগুলোতে খাদ্য সংকটের কথা তুলে ধরে লালজার লম বম বলেন, “অনেকে বনে-জঙ্গলে পালিয়ে থেকে খাবার না পেয়ে কলা গাছ খেয়ে দিনাতিপাত করছে। বম সমাজ আজ যে চরম দুর্বিষহ দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে তা হল সরকারের ভাষ্যমতে, ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটি হয়েছে। আমাদের বম জাতিরা আজ যে দুর্বিষহ দিন পার করছে তার কারণ ব্যাংক ডাকাতি ও সরকারে অস্ত্র লুট করার কারণে। ”
তিনি বলেন, “সরকারের অনুরোধে বা নির্দেশনায় আমরা এখানে সমবেত হতে আসিনি। বরঞ্চ সাধারণ বম সমাজের মানুষদের আহ্বানে ও অনুরোধে সাধারণ মানুষের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি। বম সম্প্রদায়ের মানুষের একমাত্র দাবি হলো এই, ব্যাংক ডাকাতির সময়ে লুট করে নেওয়া দেশরক্ষা বাহিনীদের অস্ত্রসমূহ যত দ্রুত সম্ভব যেন ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। পাহাড়ে এখন জুম চাষের মৌসুম। জুমে বা কাজে গেলে কখন তাদের গায়ে গুলি লাগবে এই ভয়ে কেউ জুমের কাজে যেতে পারছে না। ”
লালজার লম বম বলেন, “সরকারের সঙ্গে আমাদের যেন অতীতের মত পুনরায় সুসম্পর্ক গড়ে উঠে, এজন্য বম সম্প্রদায় মানুষদের পক্ষ হয়ে অনুরোধ করছি যে, লুট করে নেওয়া সরকারে ১৪টি অস্ত্র ফেরত দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প পথ নেই। ”
এ সময় সেখানে বম সোসাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লাল থাং জুয়াল বম, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম, রুমা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাং খাম লিয়ান বম ছাড়াও কাউন্সিলের আরও ১০-১৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
গত ২ এপ্রিল রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি করে অর্থ লুট করে একদল সশস্ত্র লোকজন। পুলিশের ১০টি এবং আনসার সদস্যের ৪টি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে যায় তারা। অপহরণ করা হয় ব্যাংকটির ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে। দুদিন পর রুমার একটা পাহাড়ি এলাকা থেকে ছাড়া পান তিনি।
রুমা ঘটনার একদিন পর ৩ এপ্রিল থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকেও দিন-দুপুরে অর্থ লুটের ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনায় পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ জড়িত বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-অর্থ উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুমা ও থানচিতে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যের যৌথ বাহিনী। অভিযান সমন্বয় করছেন সেনাবাহিনী।
news24bd.tv/DHL