অবশেষে প্রবাসী পরিবারের মুখে হাসি ফোটাল রাজউক

পূর্বাচল নতুন শহরে দেওয়া হলো সেই প্লট

অবশেষে প্রবাসী পরিবারের মুখে হাসি ফোটাল রাজউক

অনলাইন ডেস্ক

মাহবুবা জামান পলি। তিন পুত্রসন্তানের জননী। একসময় স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সৌদি আরবে বসবাস করতেন। ২০০৩ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় অনেকে প্লট বরাদ্দ নিচ্ছিলেন।

পলির স্বামী মো. মাছুম আব্দুল মজিদও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী কোটায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন হাজার ডলার জামানত দিয়ে ১০ কাটার একটি প্লট বরাদ্দ পান। মজিদ সৌদিতে ব্যবসা করতেন, ভালোই চলছিল সব কিছু। হঠাৎ ২০০৮ সালে মজিদের মৃত্যু হয়। এরপর সংসারে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।

ওই সময় পরিশোধ হয়নি প্লটের  দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তি। সেই বছরই স্ত্রী পলিকে দেশে ফিরতে হয় ৮, ৪ ও ২ বছর বয়সী তিন পুত্রসন্তানকে নিয়ে।

স্ত্রী দেশে এসে দিশাহারা হয়ে পড়েন ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে কিভাবে বাঁচার লড়াই করবেন এই ভেবে। এর পরের বছর রাজউকে যোগাযোগ করলে তাঁকে জানানো হয় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ওয়ারিশানদের নামে আদালত থেকে সাকসেশন পেপার নিয়ে আসতে।

মানসিকভাবে বিপর্যন্ত, পারিবারিক নানা ঝামেলা ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার (প্রায় ছয় মাস) কারণে আর যাওয়া হয়নি আদালতে। এভাবে পেরিয়ে যায় প্রায় ১০ বছর। অথচ ২০১২ সালের মধ্যে তৃতীয় কিস্তি পরিশোধ করে প্লট বুঝে নেওয়ার কথা ছিল।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ২০১৮ সালে রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনহারা বিপর্যস্ত পরিবারটি। সে বছর মানবিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট নিয়মে তৃতীয় কিস্তি এবং ২০২২ সালে দ্বিতীয় কিস্তি দিয়ে এক দশক পরে এসেও রাজউকের সহায়তা পেয়েছেন।

বুঝে নিয়েছেন সেই প্লট। সম্প্রতি প্লট পেয়ে রাজউকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন পলিসহ তাঁর পুত্রসন্তানরা।
 
মাহবুবা জামান পলি যা বলছেন

মাহবুবা জামান পলি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘একসময় পুরো পরিবার সৌদি আরবে ছিলাম। হঠাৎ স্বামীর মৃত্যুর পর আকাশ থেকে পাতালে পড়ে গেছি এমন অবস্থা ছিল। এরপর তিনটা বাচ্চা রক্ষা করাটাই আমার মূল কাজ ছিল। কিভাবে সাকসেশন পেপার করব, জমি পেতে কী কী লাগবে, কত কিস্তি গেছে এবং রাজউকের আইন-কানুন সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না। ’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এসে আবার নতুন করে বাচ্চাদের নিয়ে চলা শুরু করাটা অনেক কষ্টের ছিল। এসবের মধ্য দিয়ে অবশেষে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউকের সার্বিক সহযোগিতায় ও মানবিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে মোট তিন কিস্তিসহ সুদসমেত ৪৯ হাজার ৬১৬.৭৫ ডলার পরিশোধ করেছি। রাজউকের কর্তাব্যক্তিদের আন্তরিকতা ও পেশাদারির কারণে এই প্লটটি পেতে অনেক সহজ হয়েছে। রাজউকের সার্বিক সহযোগিতায় প্লটটি পেয়ে আমাদের মুখে হাসি ফিরে পেয়েছি। ’

পলি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অসংখ্য মানুষকে সৌদি নিয়েছেন। তাঁদের অনেকে এখন কোটিপতি। মানুষের এত এত উপকার করেছে, যা বলে শেষ করতে পারব না। যদি রাজউকের এই সহায়তা না পেতাম, খুবই হতাশ হতাম। এখন মনে হচ্ছে কারো উপকার করলে অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে উপকার পাওয়া যায়। সেটির উদাহরণ হিসেবে পেয়েছি রাজউক থেকে। ’

রাজউক কর্মকর্তারা যা বললেন

পরিবারের সচ্ছলতা ও দেশের উন্নয়নের জন্য অনেকে দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমান। তাঁদের পাঠনো রেমিট্যান্সে দেশের রিজার্ভে প্রতিদিন অর্থ যোগ হচ্ছে। তাঁরা দেশের সম্পদ। তাঁদের একজন ছিলেন মাহবুবা জামান পলির স্বামী মো. মাছুম আব্দুল মজিদ। তিনি ২০০৩ সালে পূর্বাচল নতুন শহরে ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী’ ক্যাটাগরিতে ৩১৮৭ কোর্ডের মাধ্যমে ১০ কাঠা আয়তনের ১০ নং সেক্টরের ৩০১ নং রাস্তার ৩৪ নং প্লটটি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে জামানত দাখিল করেন। একসময় তিনি মারা গেলে পরিবার কিস্তি চালাতে পারেনি। দীর্ঘ সময় পর আবারও নির্দিষ্ট নিয়মে কিস্তি পরিশোধ করেছেন। ফলে মজিদের ওয়ারিশদের প্লটটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজউক কর্তারা আরও বলেন, শুধু ওই প্রবাসীর ক্ষেত্রেই নয়, সবার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে ও মানবিকতার সঙ্গে সবাইকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে রাজউক।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক