রামেকে চিকিৎসকের নির্দেশে রোগীর স্বজনকে মারধরের অভিযোগ

রামেকে চিকিৎসকের নির্দেশে রোগীর স্বজনকে মারধরের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে এক রোগীর স্বজনকে দায়িত্বরত চিকিৎসকের নির্দেশে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১২ মে) সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

পরে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত করা হয়। এ ঘটনায় ভয়ে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী কে নিয়ে তার স্ত্রী হাসপাতাল থেকে চলে যান।

পরে কেড়ে নেওয়া ফোন থেকে এক সাংবাদিককে ফোন দিয়ে হুমকি প্রদান ও গালিগালাজ করেন ওই চিকিৎসক।

রোগীর স্বজনরা জানান, বুকে তীব্র ব্যথা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাবু নামের এক রোগীকে নওগাঁর আত্রাই থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তার ভাগনে দেলোয়ার। ভর্তির পর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হলে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত ডা. সিনথিয়া তার ইসিজি করে বলেন তার বুকের ডান পাশে রক্তনালী ব্লক পাওয়া গেছে। জরুরীভাবে তাকে ইনজেকশন দিতে হবে।

ইনজেকশনের দাম পড়বে ৪৫ হাজার টাকা। তারা রাজি থাকলে ওষুধ কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তখন দেলোয়ার বিষয়টি একজন রিপোর্টারকে জানান।

বুলবুল হাবিব বিষয়টি জানার জন্য হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুস সাঈদকে ফোন দেন। ডা. জাহিদুস সাঈদ বলেন, এরকম ক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতাল থেকেও বিনামূল্যে ইনজেকশন সরবরাহ করা হয় যেটার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ। আর বাইরের ইনজেকশনটা আরেকটু আপগ্রেডেড। সেটার কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশ। তবে যে যেটা পছন্দ করে তাকে সেই ইনজেকশন দেওয়া হয়।

পরে ডা. জাহিদুস সাঈদ ডা. সিনথিয়াকে হাসপাতালের ইনজেকশন দেওয়ার কথা বললে, বিভাগীয় প্রধানকে অভিযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে দেলোয়ারের ওপর চড়াও হয়। তার স্টাফরা এ সময় দেলোয়ারকে মারধর করেন। পরে দেলোয়ারের ফোন কেড়ে নিয়ে সাংবাদিক বুলবুল হাবিবকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করে ও হুমকি প্রদান করে ডা সিনথিয়া। ফোন কেড়ে নেওয়ার পর মার খেয়ে দেলোয়ার ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে বুলবুল হাবিব বলেন, ডা. জাহিদুস সাঈদের সাথে কথা বলার পরে দেলোয়ারকে ফোন দিয়ে বলতে বলা হয় হাসপাতালের ইনজেকশনটি যেন তাদের দেওয়া হয়। একটু পর দেলোয়ার ফোন দিয়ে আমাকে বলতে থাকে ভাই, আমাকে ধরে মারছে আমাকে বাঁচান। তারপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার খানিক পর দেলোয়ারের ফোন নম্বর থেকে ডা. সিনথিয়া আমাকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করে।

সিনথিয়া আমাকে ফোনে বলতে থাকে, তুই কত বড় সাংবাদিক হয়েছিস, পাওয়ার দেখাস, আমার বিভাগীয় প্রধানের কাছে কমপ্লেইন করিস, তুই হাসপাতালে আয় তারপর চিকিৎসা হবে। আমি বারবার তাকে গালিগালাজ না করার অনুরোধ করি। তারপরও তিনি গালিগালাজ করতে থাকেন। পরে ফোন কেটে দেন। তখন আমি হাসপাতালের পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই।

এ ঘটনার পর দেড় ঘণ্টা রোগী ও রোগীর স্বজনকে হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফোনেও পাওয়া যায় না। হাসপাতালের নার্স ও স্টাফ ও আনসার সদস্যরা কেউ তাদের ওয়ার্ডে খুঁজে পায় না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে রোগীর জামাই ফোন দিয়ে সাংবাদিক বুলবুল হাবিবকে জানান যে, তারা হাসপাতাল থেকে ভয়ে বেরিয়ে এসে রাজশাহীর ভদ্রা বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছে নাটোর যাওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে নাটোর হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে।

পরে হাসপাতালের পরিচালকের আশ্বাসে আবার তাদের ফিরিয়ে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। তাদের হাতেই দেলোয়ারের কেড়ে নেওয়া ফোন ফেরত দেন আনসার সদস্য লিটন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মেদ বলেন, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। রোগীকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

news24bd.tv/SC