দখলদারের কবলে অস্তিত্ব সংকটে পাম নদী

পাম নদী

দখলদারের কবলে অস্তিত্ব সংকটে পাম নদী

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

অবৈধ দখলদারের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলা পাম নদী। নদীর চারপাশে বাঁধ দিয়ে এবং বুক চিরে বিশালায়তনের পুকুর খনন করে মাছ চাষ ও ফসল উৎপাদন করছেন জিয়াউর রহমান জিয়া নামের এক প্রভাবশালী। নদীর সরু গতি প্রবাহকে পরিবর্তন করে ব্যক্তি মালিকানার জমির ওপর দিয়ে প্রবাহ নেওয়া হয়েছে। পাম সেতুর নিচে এক্সক্যাভেটর দিয়ে খনন করায় ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি।

 
অন্যদিকে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের অন্তত ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না। দিন-দুপুরে এমন কাজ চললেও নীরব প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পাম নদীটি পঞ্চগড় জেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকার নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের গড়ের ডাঙ্গা দিয়ে সোনাচান্দি এলাকায় করতোয়ার সাথে মিলিত হয়েছে।

নদীটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২০ মিটার।  

স্থানীয়রা জানান, আগে সবসময় পানি প্রবাহ থাকতো পাম নদীতে। এখন প্রায় মৃত। নদীটি মরে যাওয়ায় চাষাবাসে ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করা হতো। বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ পলি নিয়ে আসতো। জমির উর্বরতা বাড়তো। নদীটি দখল হয়ে যাওয়ায় জমির উর্বরতাও কমছে।  

তারা আরও জানান, আগে প্রচুর পরিমাণে দেশি মাছ পাওয়া যেতো পাম নদীতে। সব সময় মাছ ধরতো এলাকার মানুষ। এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে পামের পাড়ার যে স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে, নদীটি গতিপথ ছিল তার মাঝ বরাবর। নদীর বুকে সাম্রাজ্য তৈরি করে শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে ধান চাষ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ করেন পামেরপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমান জিয়া।  

এলাকাবাসী আরও জানান, নদীটির গতিপথ পরিবর্তন করে ছোট্ট ক্যানালে পরিণত কর হয়েছে। তবে অনাগত বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পামেরপাড়া গ্রামের অন্তত ৫০ পরিবারের দিন কাটছে দুঃশ্চিন্তায়। গত বছর বর্ষাকালে এই গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। ওই গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙনের চিহ্ন এখনো রয়েছে। উপড়ে গেছে বাঁশ বাগান ও গাছপালা। মাছ ও ধান চাষ করে আয় করছেন টাকা। নদীর জমি দখল করতে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচু করে বাধ দিয়েছেন জিয়া। পুকুরের সামনে নামফলক শাটিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘জিয়া মৎস্য খামার’ নামে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী বলেন, পামের আগের গতিপথ ছিল জিয়াদের বাড়ির পাশ দিয়ে। নদীর মাঝে পুকুর খনন করে চারপাশে বাঁধ দিয়ে এখন গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে আমাদের জমির ওপর দিয়ে। গত বছর বর্ষায় আমার ভিটেতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এবার তো ঘরবাড়ি চলে যাবে। তারা টাকাওয়ালা মানুষ আমরা তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছি না। প্রশাসনের লোক আসলে তারা কাজ বন্ধ রাখে। চলে গেলেই আবার কাজ শুরু করে। নদীটিতো হুমকিতে পড়েছে। সঙ্গে আমাদেরও হুমকিতে ফেলা হয়েছে।

ওই এলাকার বৃদ্ধ জামাল উদ্দিন বলেন, নদীতো এখন আর নদী নেই। নদীর মাঝে পুকুর করা হয়েছে। নদীর পানি যায় এখন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। এতো কিছু করলো তাদের কেউ কিছু বলে না। প্রশাসন এসে দেখুক, নদীটি আগে কোথায় ছিল; এখন কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে।  

এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, নদীর ওই জমি অর্পিত সম্পতি। আদালতের মাধ্যমে তা আমি পেয়েছি। মাছ চাষ করার জন্য চারপাশে বেঁধে পুকুর করেছি। নদী নদীর জায়গায় আছে। আর আমি অত গভীর করছি না যে, সেতুর ক্ষতি হবে। তারা যেসব অভিযোগ করেছে- তা মিথ্যে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তারা নদীর জমি দখল করলে বা নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, আমরা বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। একইসঙ্গে তাদের পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তারা এক সপ্তাহ সময় পাবেন। এর মধ্যে তা না করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক