ফ্রিল্যান্সারদের ডলার যাচ্ছে বিটকয়েনে, এরপর হচ্ছে প্রতারণা

ফাইল ছবি

ফ্রিল্যান্সারদের ডলার যাচ্ছে বিটকয়েনে, এরপর হচ্ছে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সৎ পথে আয়ের মাধ্যমে দেশে প্রতিমাসে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে দেশের ফ্রিল্যান্সাররা। আর সেই ফ্রিল্যান্সারদের অবৈধ লেনদেনে উৎসাহ দিতে কাজ করছে একদল প্রতারকচক্র। দেশে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে একটি অপরাধীচক্র। একারণে দেশের ফ্রিল্যান্সিংখাত বিতর্কিত হতে চলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভুক্তভোগী ফ্রিল্যান্সাররা নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলছেন,  প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুবাই থেকে অবৈধ অনলাইন জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছে দেশে। আর তারা এজেন্ট ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যার ফলে এখন স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সী মানুষ এই জুয়ার খেলায় আসক্ত হয়ে সব হারাচ্ছেন। জুয়া যেন এখন দেশের সব জায়গায় একটা নতুন আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্রের এজেন্ট। এসব এজেন্টদের দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসতে পারে এই অনলাইন জুয়ার পেছনে কারা আছে তাদের আদ্যেপান্ত। বিভিন্ন এজেন্টদের দেয়া তথ্যমতে এই অনলাইন জুয়ার মূলহোতা হলো সাইফুল ইসলাম।

ভুক্তোভোগীদের ভাষ্যমতে, ঢাকার গুলশানে অফিস খুলে এবং নিজে ইমর্পোটার পরিচয়ের আড়ালে শত শত ফেইসবুক একাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সারদের ফেইসবুক ম্যাসেজে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন কেনাতো সাইফুল। এরপর নিজেকে ব্যবসায়ী দেখিয়ে কিছু নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনে বাকি অর্থ বিভিন্ন অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রাতে বিনিয়োগ করাতো। আর অধিক লাভের আশায় তার ফাঁদে পরে অনেকে পুজি হারিয়ে এখন অসহায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানায়, কোনো উচ্চবাচ্য করলে তাদেরকে মামলাসহ বিভিন্নভা‌বে ভয়ভীতি ও হামলার হুমকি দেয় সাইফুল। যেহেতু এই লেনদেন অবৈধ সেহেতু এ বিষয়ে কিছুই করার থাকেনা ভুক্তভোগীদের। তাই অন্তরালেই রয়ে যায় এমন প্রতারণার গল্প।

রফিক মোহাম্মদ ভূইয়া নামের এক ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন দেশে ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে কিছু ডলার উপার্জন করে। তার দাবী সাইফুল তাকে নগদ ৩ লাখ টাকার লাভ দেখিয়ে বিদেশী একটি একাউন্ট নিয়ে দেয়। সে ২ মাস পর বিটকয়েন থেকে টাকা ফেরত দেবে জানায়। এরপর টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিয়ে ভয় দেখায় অভিযুক্ত সাইফুল।

তার মত আরও ভুক্তভোগীদের মতে, অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় সঙ্গেও জড়িত এই সাইফুল ইসলাম। তাদের দাবী, এই সাইফুলকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার।

অভিযোগের বিষয়ে জান‌তে সাইফুলের সা‌থে মু‌ঠো‌ফো‌নে যোগা‌যোগ ক‌রা হলে তিনি নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, এ বিষয়ে সব অভিযোগ মিথ্যা, এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। এমনকি বিটকয়েন কি সে সম্পর্কে সম্পুর্ণ অজ্ঞতা প্রকাশ করেন সাইফুল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিটের এসপি নাজমুল ইসলাম ব‌লেন, অনলাইন প্রতারণা, জুয়ার বিরু‌দ্ধে আমা‌দের অভিযান অব‌্যাহত আ‌ছে এবং  ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনেক অপকর্ম ও প্রতারণা করা হচ্ছে। তি‌নি ব‌লেন, অনলাইন জুয়া একদম নিষিদ্ধ, দেশের আইন মোতাবেক আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযান করেছি। আমাদের এ ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যে কাউকেই আইনের আওতায় আনা যাবে। মানি লন্ডারিং এবং আর্থিক জালিয়াতি কারণে দেশের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, এতে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের  উপর প্রভাব পড়ছে। তাই এদের ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি জানান, ভুক্তভোগীরা নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি সিটিটিসি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের আইনের আওতায় নেয়া হবে।

নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, বিটিআরসির সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। আর শুধুমাত্র ডিএমপি থে‌কেই এই অর্থবছ‌রে এখন পর্যন্ত অর্ধশত জুয়ারী ও মানি লন্ডারিং এর সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এ ধরণের কিপ্টোকারেন্সির লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ। আর এ ধরণের অবৈধ লেনদেন করে কেও ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার বৈধ সমাধান পাওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যপারে এর আগেও সতর্কবার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যংক।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বৈধ উপায়েই দেশের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স আনছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোও যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। আর তাই বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকিং লেনদেনের মাধ্যমেই ফ্রিল্যান্সারদের কষ্টার্জিত টাকা আনতে তাদের উৎসাহিত করতে হবে এবং এ ধরণের ক্ষতিকর অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত রাখতে হবে তাদের।

news24bd.tv/aa