পঞ্চগড়ে সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাহারি তৈজসপত্র

পঞ্চগড়ে সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাহারি তৈজসপত্র

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার শিমুলতলী এলাকায় সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ওয়ান টাইম তৈজসপত্র। উদ্যোক্তারা বলছেন, ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম তৈজসপত্রের পরিবর্তে সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র স্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশসম্মত। বাজারে চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। ইকো বিডি গ্রীন নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

পঞ্চগড়ে ব্যাপক আকারে সুপারি চাষ হয়। চাষিরা তাদের বাড়ির আনাচে কানাচে গড়ে তুলেছেন সুপারি বাগান। এসব বাগানে সংগৃহীত সুপারি দেশের নানা প্রান্তে রপ্তানি হয়। এসব বাগানের সুপারি গাছের পাতাসহ খোলের বয়স হয়ে গেলে তা লাল হয়ে একসময় মাটিতে পড়ে যায়।

হাজার বছর ধরে পাতা সহ এই খোল রোদে শুকিয়ে চাষিরা রান্না বান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করে আসছেন। এই খোল দিয়ে বর্তমানে তৈজসপত্র বানিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছে ইকো বিডি নামের ওই প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফরিদুল আলম হিরু বলেন, তার বড় ভাই নুরুল আলম সেলিম ঢাকায় ব্যবসা করেন। ভারত এবং চীন ভ্রমণে গিয়ে তিনি সুপারির গাছের খোল দিয়ে ওয়ান টাইম প্লেট তৈরির কারখানা পরিদর্শন করেন। পরে দেশে এসে গত বছরের অক্টোবর মাসে কারখানা স্থাপন করেন তিনি। শুরুতে সুপারির খোল পাওয়া যাচ্ছিল না। চাষিরা সাধারণত সুপারির খোল শুকিয়ে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

তারা এগুলো বিক্রি করতে চাচ্ছিলেন না। আস্তে আস্তে আমরা বোঝাতে সক্ষম হই। বর্তমানে প্রতিটি খোল আমরা ২ থেকে ৩ টাকা দরে কিনছি। জেলার সুপারি অধ্যুষিত সব ইউনিয়নে আমাদের লোক কাজ করছে। তারা চাষিদের বাড়িতে গিয়ে সুপারির খোল সংগ্রহ করেন। আগে সুপারির খোলগুলো মাটিতে পড়ে থাকতো। ফাঙ্গাসে নষ্ট হতো। আমরা কেনার উদ্যোগ নেয়ার পর এখন সেগুলো বাশের টারে ঝুলিয়ে রাখে চাষিরা। ফলে এটা নষ্ট হয় না।

কারখানার শ্রমিকরা বলছেন প্রথমে খোলগুলোকে পাতা থেকে আলাদা করা হয়। তারপর খোলগুলোকে নিমপাতা ও লেবুর রস যুক্ত পানিতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে মেজে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপর আধঘণ্টা রোদে শুকিয়ে নেয়া হয়। এরপর পাতার খোল ছাঁচের মেশিনে বসিয়ে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রী তাপ এবং চাপ প্রয়োগ করা হয়।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোলাকার বাটি, গোলাকার প্লেট, চৌকোণা প্লেট, লাভ প্লেট, চামচ, ট্রে-সহ ৮ ধরনের জিনিস প্রস্তুত করা হয়ে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ আরও জানান, প্লেট ৭ থেকে ৮ টাকা, বাটি ৫ টাকা অন্যান্য তৈজসপত্র নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় চাহিদা কম হলেও এনজিওরা এই তৈজসপত্র কিনছেন। এছাড়া ঢাকা চট্টগ্রামেও রপ্তানি হচ্ছে।

সুপারি চাষিরা বলছেন, এই বাড়তি আয় দিয়ে সুপারি বাগানের পরিচর্যা করা যাচ্ছে। টুনির হাট এলাকার সুপারি চাষি নুর হাসান জানান, আমরা তো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতাম। এখন প্রতি খোলে তিন টাকা করে পাচ্ছি। এটা বাড়তি আয়। এই আয় দিয়ে সুপারি বাগানের পরিচর্যা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের জানান, এটা পরিবেশবান্ধব একটি উদ্যোগ। এই তৈজসপত্রগুলো ব্যবহার করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। পাশাপাশি এটি স্বাস্থ্যসম্মত। ব্যবহার করার পর মাটিতে ফেলে দিলে সার হয়ে যাবে। মাটির উর্বরতা বাড়বে।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার জানান, এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। দেশে বিদেশে পরিবেশসম্মত এসব তৈজসপত্রের চাহিদা বাড়বে।

news24bd.tv/SC