হাদিসের বর্ণনায় মদিনা নগরীর মর্যাদা

হাদিসের বর্ণনায় মদিনা নগরীর মর্যাদা

 মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

পবিত্র নগরী মদিনায় শুয়ে আছেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)। পবিত্র এই ভূমিতেই ইসলামের উত্থান হয়েছিল এবং এখান থেকেই সারা পৃথিবীতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন মহানবী (সা.)। মূলত আল্লাহ এই নগরীকে ইসলামের জন্য কবুল করেছিলেন।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) পবিত্র এই নগরের বহুবিদ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কথাও উল্লেখ করেছেন।
মদিনার অনন্য মর্যাদা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে মদিনার সম্মান তুলে ধরা হলো—

১. রাসুলের প্রিয় নগরী : রাসুল (সা.) মদিনা নগরীকে ভালোবাসতেন এবং তা যেন অন্যদের প্রিয় হয় সে দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমনিভাবে প্রিয় করেছ মক্কাকে, বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করো। (সহিহ বুখারি : ১৮৮৯)

২. রাসুলের শেষ নিবাস : মদিনায়ই তিনি তাঁর জীবনের শেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল কাটিয়েছেন।

এখান থেকেই তিনি ইসলামের বাণী পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেন। জীবনের শেষ নিবাস হিসেবেও তিনি এই নগরীকে বেছেন নেন।

৩. বরকতময় শহর : নবী করিম (সা.) আল্লাহর কাছে মদিনার সব কিছুতে বরকত দানের দোয়া করেন। তিনি আল্লাহর কাছে বলতেন, হে আল্লাহ! মক্কায় যতটুকু বরকত রয়েছে, মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দাও। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৩৯২)

৪. মদিনার সম্মান সংরক্ষিত : মদিনাকে শরিয়ত ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করেছে। হারাম শব্দের একটি অর্থ নিষিদ্ধ এবং আরেকটি পবিত্র। দুটি অর্থই এ নগরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাসুল (সা.) বলেন, মদিনার আইর ও সওর পর্বতের মাঝখানের স্থানটুকু হারাম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৩৯৩)

৫. নিরাপদ নগরী মদিনা : আল্লাহ তাআলা মদিনার প্রবেশদ্বারসমূহে ফেরেশতাদের মধ্য থেকে প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, যাঁরা এতে মহামারি ও দাজ্জালের প্রবেশকে প্রতিহত করবেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মদিনার পথে-প্রান্তরে রয়েছে (প্রহরী) ফেরেশতাগণ, (তাই) এখানে মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৮০)

৬. মদিনায় মৃত্যু হওয়ার মর্যাদা : হাদিসে মদিনায় মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদার কথা এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম, সে যেন তা করে। কেননা যে তথায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি তার জন্য শাফায়াত করব। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৮১৮)

৭. মদিনা ঈমানের স্থান : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনাকে দারুল ঈমান বা ঈমানের স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ঈমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৭৬)

৮. মদিনায় জ্ঞানচর্চার মর্যাদা : মদিনা ছিল প্রথম বিদ্যালয়, যেখানে মহানবী (সা.) এমন একটি প্রজন্মকে প্রস্তুত করেছিলেন, যাদের হাতে তিনি ইসলামের আমানত তুলে দেন। ইসলামী জ্ঞানের সূতিকাগার হিসেবে মদিনার রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ হন্যে হয়ে ইলম অনুসন্ধান করবে, তবে মদিনার আলেমের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ কোনো আলেম তারা খুঁজে পাবে না। ’ (সুনানে নাসায়ি হাদিস : ৪২৭৭)

আল্লাহ সবাইকে মদিনার সম্মান রক্ষার তাওফিক দিন। আমিন।