তাপপ্রবাহ: বড় বিপদের মুখে বাংলাদেশ-ভারত 

তাপপ্রবাহ

তাপপ্রবাহ: বড় বিপদের মুখে বাংলাদেশ-ভারত 

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপপ্রবাহ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাপপ্রবাহের কবলে ঘটছে প্রাণহানি। খরায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশসহ এশিয়াজুড়ে আঘাত হানা তাপপ্রবাহ আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

আগামী বছরগুলোতে তা আরও শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ মাসে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন ও রেডক্রস ক্লাইমেট সেন্টার থেকে যৌথভাবে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।  

এ বছর গ্রীষ্মের প্রথম ধাপের তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে তাপমাত্রা।

এই অবস্থায় জনজীবন যখন অতিষ্ট তখন কয়েকদিন স্বস্তির বৃষ্টিতে শান্ত ছিল প্রকৃতি। তবে ফের শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় ছিল ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী তিন-চার দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

ইউএনওসিএইচএর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পর্যবেক্ষণের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৬টির অধিবাসীরা তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে দেশের ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে তা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর মধ্যে অন্তত ১০ লাখ মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হিসাব মিলিয়ে ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

দেশের ইতিহাসে এত বেশি এলাকাজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন আমরা হইনি। সামনের বছরগুলোতে এ ধরনের তাপপ্রবাহ আরও তীব্রতা নিয়ে নিয়মিতভাবে হাজির হতে পারে। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।

ইউএনওসিএইচএর প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে তাপপ্রবাহের কারণে অনেক মানুষ পানিশূন্যতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শরীরে ভারসাম্যহীনতা, বমি, জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। গত ২৯ এপ্রিল ঢাকায় সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল। ওই দিন রাজধানীতে মোট ৬ জন মারা যান। তখন বাংলাদেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বেশির ভাগ সময়জুড়ে তাপমাত্রা অনুভূত হয়েছে তার চেয়ে ৬ ডিগ্রি বেশি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত এপ্রিলের মতো চলতি মে মাসেও বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনে তাপপ্রবাহ চলছে। এসব দেশের কৃষিকাজ থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। বিশ্বের ধান উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এ অঞ্চলের কৃষিব্যবস্থায় এই তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সেচের পানির অভাব, পোকামাকড়ের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষি মজুরি বেড়ে গেছে।

গত ২৯ এপ্রিল ঢাকায় সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল। ওই দিন রাজধানীতে মোট ৬ জন মারা যান। তখন বাংলাদেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বেশির ভাগ সময়জুড়ে তাপমাত্রা অনুভূত হয়েছে তার চেয়ে ৬ ডিগ্রি বেশি।

জাতিসংঘের হিসাবে, তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে মাগুরা জেলায়। এপ্রিলের শুরু থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হলেও তা মারাত্মক তীব্রতা পায় ২১ এপ্রিল। আর সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন ছিল ২৪ এপ্রিল। ওই দিন রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালীতে সবচেয়ে বেশি গরম ছিল। এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। গত এপ্রিলের তাপপ্রবাহ আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলে।
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক