মৌলিক চিন্তা বনাম রেফারেন্স গবেষণা 

আফসান চৌধুরী

মৌলিক চিন্তা বনাম রেফারেন্স গবেষণা 

আফসান চৌধুরী

যারা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বা একাডেমিক গবেষণার সঙ্গে জড়িত আছেন তারা জানবেন যে রেফারেন্স বা ফুটনোট খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রে। এর ফলে সবাই লাইব্রেরি কেন্দ্রিক হয়, পন্ডিতির পরম্পরা রক্ষা করাটা বড় কাজ হয়ে যায়। আমাদের দেশে এটাই বড় হয়। কারণ মৌলিক চিন্তা করতে রিস্ক নিতে হয়, সেটা কেন কেউ নেবে।

মিস করলে না হবে ডিগ্রি, না হবে ইনক্রিমেন্ট, না হবে প্রমোশন। এই ধারাবাহিকতা চলছে প্রজন্মে থেকে প্রজন্মে।
পশ্চিমে দেখেছি, সমাজে একাডেমিকদের প্রভাব কম, সমাজে ইজ্জত উদ্ভাবনকারীদের যারা নিয়ম না মেনে নিজে নতুন কিছু করবে। মাস্টারি পাড়ায় পরম্পরা পন্থীরা আছে, যারা পরের প্রজন্মকে পড়ায়।
যারা আবার সেটাই রিপিট করে নয়া প্রজন্মে। কিন্তু তাদের পাত্তা কম। আমরা বরং তাদের অনেককে বেশি চিনি তাদের দেশের লোক থেকে, আমাদের পন্ডিতরা তো বটেই।

 পশ্চিমে একধরনের আলাদাকরণ ঘটে গেছে। কারণ রিস্কের বদলে প্রাপ্তি আছে সেখানে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা শিক্ষা/গবেষণার দুনিয়ায় নিয়মটাকেই  বড় করে দেখি, কতো রেফারেন্স দিলে পদ্ধতি। এক ডক্টরেট ছাত্রের কথা মনে আছে যে জানায়, তার সুপারভাইসর বলেছে, আরও ১০০ রেফারেন্স দাও, না হলে তুমি পড়েছে, এটা তোমার থিসিস যারা দেখবে তারা বুঝবে কী করে। আমি তাকে মার্কেট থেকে ১৫০টা রেফারেন্স জোগাড় করতে বলি। আজকাল সব পাওয়া যায়। এটার  মূল্য কম আমাদের মতো দেশ ছাড়া।
যেদিন বলতে পারবো গুলি মারো এই একাডেমিক গোলামীর, নিজের হয়ে ভাব, নিজের কাজ করে দেখাও তুমি কে, ততোদিন পর্যন্ত আমরা ফোকো দেরিদা কোটেশন ঘরানার দুনিয়ায় পড়ে থাকবো। মৌলিক চিন্তা নয়, বিদেশি পন্ডিত কোট করে প্রমাণ করবো, আমি জানি, আমি পড়েছি, ভাবা তো তাদের কাজ, আমি রেফারেন্স দিই। লেখক ও গবেষক যেদিন বলতে পারবো গুলি মারো এই একাডেমিক গোলামীর, নিজের হয়ে ভাব, নিজের কাজ করে দেখাও তুমি কে, ততোদিন পর্যন্ত আমরা ফোকো দেরিদা কোটেশন ঘরানার দুনিয়ায় পড়ে থাকবো। মৌলিক চিন্তা নয়, বিদেশি পন্ডিত কোট করে প্রমাণ করবো, আমি জানি, আমি পড়েছি, ভাবা তো তাদের কাজ, আমি রেফারেন্স দিই।  
লেখক ও গবেষক ও অধ্যাপক
news24bd.tv/ ডিডি

 

সম্পর্কিত খবর