ব্যবসায়ীরা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নিলে গ্রীন ফাইন্যান্সের বিকাশ হবে: ড. সুবর্ণ বড়ুয়া

নিউজটোয়েন্টিফোরের সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. সুবর্ণ বড়ুয়া।

ব্যবসায়ীরা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নিলে গ্রীন ফাইন্যান্সের বিকাশ হবে: ড. সুবর্ণ বড়ুয়া

অনলাইন ডেস্ক

গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশে গ্রীন ফাইন্যান্সের যাত্রা শুরু হয়েছে। গ্রীন ফাইন্যান্সের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে নিউজটোয়েন্টিফোরের মুরসালিন হোক জুনায়েদের সাথে কথা বলেছেন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ড. সুবর্ণ বড়ুয়া। বিশেষ এই সাক্ষাৎকারের সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো।

নিউজটোয়েন্টিফোর: বাংলাদেশে গ্রীন ফাইন্যান্সের বর্তমান অবস্থা কি?

সুবর্ণ বড়ুয়া: ২০১১-১২ এর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রীন ব্যাংকিং গাইডলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্রীন ফাইন্যান্স চালু হয়।

গত এক যুগে গ্রীন ফাইন্যান্স অনেকটাই বিস্তার লাভ করেছে। তবে যতোটুকু হওয়ার কথা ছিল ততোটুকু হয়নি। ব্যাংকগুলো যখন বিনিয়োগ করে তখন কমপ্লায়েন্সের ব্যাপারটা খুব একটা দেখা হয় না। ব্যবসায়ীদেরকে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নিতে উৎসাহিত করা গেলে গ্রীন ফাইন্যান্স আরও বিকশিত হবে।

নিউজটোয়েন্টিফোর: গ্রীন ফাইন্যান্সে মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

সুবর্ণ বড়ুয়া: অর্থনীতি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নজরদারী করা খুব কষ্টকর। আমি আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জনবল নিয়োগ দিয়ে গ্রীন ফিন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করবে।

নিউজটোয়েন্টিফোর: গ্রীন ফাইন্যান্সের ভবিষ্যত কি?

সুবর্ণ বড়ুয়া: বিশ্বব্যাপী গ্রীন ফাইন্যান্সের ৯৯ শতাংশই ক্যাপিটাল মার্কেট কেন্দ্রিক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো, এখানে ব্যাংকই ফাইন্যান্সিংয়ের প্রধান পক্ষ হিসেবে কাজ করে। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্যাপিটাল মোবিলাইজেশনের দরকার হবে, এতো অর্থ ব্যাংকগুলো দিতে পারবে না। তাই ক্যাপিটাল মার্কেটকে মোবিলাইজ করেই আমাদেরকে এগোতে হবে।

নিউজটোয়েন্টিফোর: গ্রীন ফাইন্যান্স ও বন্ড কিভাবে একসাথে কাজ করতে পারে?

সুবর্ণ বড়ুয়া: ব্যবসায়ীরা যদি ক্লাইমেট ফ্রেন্ডলি প্রজেক্টে অর্থ বিনিয়োগ করেন তবেই আমরা কোনো বন্ডকে গ্রীন বন্ড বলতে পারবো। বিশ্বব্যাপী গ্রীন বন্ডের মার্কেট ভ্যালু কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশে গ্রীন বন্ড এখনও সেকেন্ডারি ইস্যু, আমরা ভ্যানিলা বন্ডেরই কোনো সুরাহা করতে পারিনি।  

নিউজটোয়েন্টিফোর: বন্ডের প্রতি জনগণকে কিভাবে আকৃষ্ট করা যায়?

সুবর্ণ বড়ুয়া: নির্দিষ্ট আয়ের জন্য বন্ডে বিনিয়োগ করে মূলত পেনশন ফান্ডের মালিকরা। বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে পেনশন ফান্ড আনা যায়নি, ফলে বন্ডেরও তেমন চাহিদা নেই। এতে করে বন্ড দিয়ে যারা ফাইন্যান্সিং করতে চান তারাও তেমন আগ্রহী হন না। মানি মার্কেটের এক্সচেঞ্জ রেটের সাথে বন্ড মার্কেটের কুপন রেটের একটা সমন্বয় প্রয়োজন।

নিউজটোয়েন্টিফোর: পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা কেমন?

সুবর্ণ বড়ুয়া: পুঁজিবাজার হচ্ছে সম্পদ সৃষ্টি করার একটি জায়গা। ক্যাপিটাল মার্কেটকে আমরা ইনক্লুসিভ করতে পারিনি। প্রোডাক্ট ইনোভেশনের ক্ষেত্রে আমাদের বিশাল গ্যাপ আছে। ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে আমাদের ইনোভেশন প্রয়োজন।

নিউজটোয়েন্টিফোর: এখন পর্যন্ত আইসিবি কি কি কাজ করেছে ও ভবিষ্যতে আপনাদের টার্গেট কি?

সুবর্ণ বড়ুয়া: কোনো পরিবর্তন রাতারাতি আসে না। একটু সময় দিতে হবে। আমরা স্মার্ট আইসিটি অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে আমরা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে চাই। আমরা সবকিছু এখন অ্যাপ কেন্দ্রিক করে ফেলছি, আইসিবির সকল লেনদেন ডিজিটাল করার কাজ চলছে। আইসিবির বিনিয়োগ নীতিমালার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একইসাথে মার্কেটকে সাপোর্ট দেয়া ও আইসিবির অর্থনৈতিক কাঠামোর ক্ষতি রোধ করার জন্য নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

নিউজটোয়েন্টিফোর: আইসিটি খাতের সাথে আইসিবির যুক্ত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

সুবর্ণ বড়ুয়া: আইসিটি খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। এই খাতে প্রচুর উদ্ভাবন প্রয়োজন। আইসিবিকে যদি রিফাইন্যান্সিং করতে দেয়া হয় তাহলে আমরা উদ্ভাবনী প্রকল্পে বিনিয়োগ করে উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারবো।

নিউজটোয়েন্টিফোর: ই-কমার্স খাত নিয়ে আইসিবি কিভাবে কাজ করতে পারে?

সুবর্ণ বড়ুয়া: ই-কমার্স খাত নিয়ে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যারা ই-কমার্স থেকে পণ্য কেনে তাদের বেশিরভাগ বিষয়টিকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখে। ই-কমার্স ট্রাডিশনাল ব্যবসার মতো না, তাই এই খাতের পর্যবেক্ষণ ও নীতিমালাও আলাদা হতে হবে। ই-কমার্স খাতে অঘটন রোধ করতে হলে সুচিন্তিত পদক্ষেপের প্রয়োজন। আস্থার ঘাটতি কমাতে হলে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ই-কমার্স নিয়ে আমাদের জ্ঞানের ঘাটতি আছে। যেসকল ই-কমার্স কেলেঙ্কারী ঘটেছে সেগুলোর সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের বয়স ৩০-৪৫ এর মধ্যে। কেনো তারা এরকম কাজ করে সেটা গবেষণা করে বের করতে হবে। যেসকল ই-কমার্স সাইট সুনামের সাথে ব্যবসা করছে তাদের জন্য ক্যাপিটাল মার্কেটের দ্বার উন্মুক্ত এবং আইসিবি তাদেরকে সবরকমের সহায়তা করবে।

news24bd.tv/ab