মুমিনের বাসস্থানের বৈশিষ্ট্য

মুমিনের বাসস্থানের বৈশিষ্ট্য

 উবায়দুল হক খান

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা—মানুষের এই পাঁচ মৌলিক অধিকারের মধ্যে বাসস্থান অন্যতম। বাসস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে পরিবার। পরিবার হলো সমাজের প্রাণকেন্দ্র। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্র করে।

মানবজাতির প্রথম ঐক্যের ভিত্তি হলো পরিবার। পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ.)-কে কেন্দ্র করে প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল জান্নাতে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম! তুমি তোমার স্ত্রীকে নিয়ে জান্নাতে বসবাস করো। যা ইচ্ছা তা খাও, কিন্তু এই গাছের নিকটবর্তী হয়ো না।

’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৩৫)

বাসস্থান ব্যক্তিগত প্রয়োজন
জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা, নির্জনে ইবাদত করা প্রভৃতি প্রয়োজনে বাসস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ছাড়া সন্তান প্রতিপালন, তাদের শিক্ষাদীক্ষা ও স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার তাগিদে ঘরবাড়ি প্রয়োজন। উত্তম ও নিরাপদ বাসস্থান নারীর অধিকার। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‌‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেমন গৃহে বাস করো, তাদেরও (স্ত্রীদের) তেমন গৃহে বাস করতে দেবে...। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

সন্তান প্রতিপালনে বাসস্থান
সন্তানের জন্য পারিবারিক অনুশাসন বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকেও বেশি কার্যকর। তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি। আর মুসলিম পরিবারে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের থাকা ও ঘুমানোর জন্য পৃথক রুমের ব্যবস্থা রাখতে হয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের নির্দেশ দাও, যখন তাদের বয়স হয় সাত বছর। আর তাদের (সালাতের জন্য প্রয়োজনে) প্রহার করো, যখন তাদের বয়স হয় ১০ বছর এবং তাদের শয্যা পৃথক করে দাও। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)

বসবাসের জন্য গৃহ প্রয়োজন
বাসস্থান বান্দাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অতি বড় নিয়ামত, যা মানুষের বসবাসের জন্য আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে দান করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের গৃহকে করেছেন আবাসস্থল এবং পশুচর্মের দ্বারা তোমাদের জন্য করেছেন তাঁবুর ব্যবস্থা, যা তোমরা সফরকালে সহজে বহন করতে পারো এবং অবস্থানকালে সহজে ব্যবহার করতে পারো। আর এগুলোর পশম, লোম ও চুল দ্বারা তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন গৃহসামগ্রী ও আসবাবপত্রের কিছু কালের জন্য। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮০)

এ আয়াতে আল্লাহ স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের গৃহের কথা উল্লেখ করেছেন। উভয়টিই নিয়ামত। গৃহে থাকে নানা আসবাব আর প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের উপকরণ। বিশ্রাম ও আরামের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

মুমিনের বাসস্থানের বৈশিষ্ট্য
একজন মুমিনের ঘর পৃথিবীর অন্য যেকোনো মানুষের ঘর থেকে আলাদা হতে হবে। একজন মুমিনের ঘর ও পরিবার কেমন হবে? যেমন ছিল প্রিয় নবী (সা.)-এর ঘর ও পরিবার।

মুমিনের ঘর হবে সর্বদা আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদতে সজীব। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই জীবনের পরম প্রত্যাশা। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের ঘরে ভিত্তি রেখেছে তাকওয়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর; তারা উত্তম নাকি তারা, যারা তাদের ঘরের ভিত্তি রেখেছে একটি ধ্বংসোন্মুখ খাদের কিনারে? যা তাকেসহ জাহান্নামের আগুনে পতিত হবে। আল্লাহ অবিচারকারীদের সত্য পথ দেখান না। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৯)

আর যে ঘরে বিশ্বাসের সুবাস থাকবে না, আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদতের প্রদীপ জ্বলবে না—সে ঘরের পরিণতির কথাও আল্লাহ বলেছেন, অবিশ্বাসের আগুনে পুড়বে সে ঘর, কষ্টের ভাঙা কাচে কাটবে হৃদয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘ঘর নির্মাণকারীদের ঘর তাদের অন্তরে সংশয় (কাঁটা) হয়ে থাকবে। যতক্ষণ না তাদের অন্তর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১০)

শুধু কি হৃদয় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হবে? অশান্তির দাবানলে ছাই হবে জীবন। পার্থিব জীবনের কোনো উপায়-উপকরণ তার আশ্রয় হবে না, হতে পারবে না। নিরাশ্রয় জীবনে ঘুরপাক খাবে সে। তবে কি মুমিনের জীবনে পার্থিব প্রয়োজন উপেক্ষিত থাকবে? না, তার জাগতিক জীবনের সব আয়োজন তার ঘরেও হয়। তবে তা জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হয় না। সে সন্তুষ্ট থাকে প্রয়োজন পূরণে, স্বস্তিকর জীবনে আর সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও বণ্টনে। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার পরিবারের সঙ্গে নিরাপদ থাকে, তার দেহ রোগমুক্ত থাকে, যার কাছে এক দিনের খাবার থাকে, তার জন্য পৃথিবীকে প্রশস্ত করা হয়েছে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৬)

মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম বাসস্থান দান করুন।

এই রকম আরও টপিক