দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থীর সংকটে পড়েছে। গত দুই বছরে কলেজগুলোতে আসন খালি ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। কমেছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকপক্ষের দাবি, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি শিক্ষার্থী সংকটের প্রধান কারণ।
শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়ার চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে মেডিকেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা অবশ্য শুধু অটোমেশনকে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণ হিসেবে মানতে নারাজ।
মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারিতে মানুষ সেবার মান নিয়ে ভাবে। কারণ তারা এখানে অর্থ ব্যয় করছে। যথাযথ মান অনুযায়ী না থাকলে কাজ করার প্রয়োজন নেই। সেটা যে সেক্টরেই হোক না কেন। এই মান শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দুই ক্ষেত্রেই চাই।
মূল প্রবন্ধে সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত দুই বছরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ২০ শতাংশ আসন খালি গেছে। চলতি বছরে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীর ৬ হাজার ২০৮ টি আসনের মধ্যে এক হাজার ২০০ আসন খালি রয়েছে। যা মোট আসনের ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
তিনি বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে নিজ এলাকা থেকে দূরবর্তী জেলায় শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ হওয়ার তারা আগ্রহ হারাচ্ছে।
বিপিএমসিএ-এর সাবেক সভাপতি ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অন্যতম খাত। এসব কলেজে বর্তমানে শুধুমাত্র ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। যাদের মাধ্যমে প্রতিবছর ২ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। প্রতিবছর বিদেশ থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তি হয়। অটোমেশন পদ্ধতিতে ভর্তির কারণে এসব বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি নানান সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকাসহ বিদেশের কলেজগুলোতে ভর্তির প্রবণতা বাড়ছে। এ বছর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে। বিডিএস বা ডেন্টালের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ১ হাজার ৪০০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ৪০০ জন, অর্থাৎ ১০০০ আসনই ফাঁকা। আগের বছরও ৬০ শতাংশ বা ৮০০ আসন ফাঁকা ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধের পথে।
সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যায়। এভাবে প্রতি বছর প্রায় ৭-৮ বিলিয়ন ডলার আমাদের চিকিৎসা বাবদ বিদেশে চলে যাচ্ছে। সরকার চিকিৎসা সেবার উপর মানুষের আস্থা এবং প্রতিযোগিতা বাড়ানো উদ্যোগ নিতে হবে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী বলেন, মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা থাকা সত্বেও অনেক শিক্ষার্থী সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার কলেজগুলোর আসনও ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় ভর্তি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। প্রয়োজনে জনবল বাড়াতে হবে। আসন ফাঁকা নিয়ে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা প্রায় অসম্ভব।
অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি সাবেক সভাপতি ) ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ভালো মানের ডাক্তার তৈরির ক্ষেত্রে কোনো আপস নেই। আশা করবো এরপর থেকে নতুন করে কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যেন চালু না হয়। বরং সিদ্ধান্ত নিন, বিদ্যমান যে কলেজগুলো আছে সেগুলোর মানোন্নয়ন করবেন কীভাবে। শুধু বেসরকারি নয়, সব হাসপাতালেই শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেগুলো মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো.আবদুল করিম, বিপিএমসির সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান, বিশ্ব ব্যাংক (সাউথ আফ্রিকা) হেড অব এডুকেশন ড. মোখলেসুর রহমান, বিপিএমসির সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক প্রমুখ।
news24bd.tv/SC