কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অবহেলা নয়

ফাইল ছবি

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অবহেলা নয়

ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম

কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সাধারণত কারোর সপ্তাহে যদি তিন বারের কম মলত্যাগ হয় তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। অনেকেই বলে থাকেন, পায়খানা পরিষ্কার হয় না, চিকন নালে বাথরুম হয়, বাথরুম করতে গেলে দেখা যায় খুব শক্ত গুটিগুটি ধরণের পায়খানা হচ্ছে। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যে নির্দেশ করে।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয়

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পূর্ণ বয়স্করা প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস পানি পান করুন।
  • নিয়মিত শাক-সবজি খান।  
  • নিয়মিত প্রত্যুষে মলত্যাগের অভ্যাস করুন।
     
  • নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন।
  • প্রতিদিন ভালো ঘুমান বা পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন।  

এসব করলে সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে পায়খানা নরম করার জন্য ল্যাকটোলোজ জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এতেও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায় তাহলে ইসুবগুলের ভূষি দিনে তিন চামচ করে দুইবার সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিন।  আশা করা যায়, এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ মিলবে।  

অবহেলা নয়
এত কিছুর পরও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয় না। অনেকসময় মলদ্বারে শক্ত পায়খানা এসে আটকে থাকে। সেক্ষেত্রে মলদ্বারে গ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ দিতে হয়। তাতেও যদি কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে এনেমা (পায়খানা নরম করার ওষুধ) দিতে হয়। কিন্তু এই কোষ্ঠকাঠিন্যকে শুধু ‘কোষ্ঠকাঠিন্য’ ভেবে বসে থাকলে হবে না। অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য ভেবে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ কিনে খান। দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন যারা তাদের মনে রাখা উচিত- কোষ্ঠকাঠিন্যের আড়ালে অনেক সময় নানা রোগ হয়ে থাকে।  
যেমন : শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন একটি রোগকে বলে ‘হাসপ্রাঙ্ক ডিজিজ’। মলদ্বারের মাংসপেশীতে বিভিন্ন রকমের স্নায়ু থাকে যা সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে মলদ্বার থেকে মলগুলো বের হতে সাহায্য করে। কিন্তু সেই স্নায়ুগুলো যদি না থাকে বা শুকিয়ে যায় তখন এই রোগটি হয়ে থাকে।  

কাজেই এই রোগকে অবহেলা করে দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকলে অবশ্যই একজন শিশু সার্জন বা কোলন ও রেকটাল সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। আবার অনেকের দেখা যায়, আগে স্বাভাবিক পায়খানা হতো, কিন্তু হঠাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিয়েছে, আবার নরম পায়খানা হচ্ছে। এ রকম সমস্যা যদি হয়, তাহলে দেখা যায় ক্ষেত্রবিশেষে কোলন বা রেকটাল ক্যান্সার হতে পারে।  কাজেই কোষ্ঠকাঠিন্য ভেবে কারোর এই রোগটিকে হেলাফেলা করা উচিত নয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই যে কারোর ক্যান্সার হবে এমন কথা নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য চলতে থাকলে যদি স্বাভাবিক নিয়ম-কানুনে ভালো না হয়-তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।  চিকিৎসক রোগীদের রোগের বিবরণ নিয়ে, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে; কী কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে সেটি শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা দেবেন।  

লেখক : জেনারেল ও কলোরেক্টাল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

news24bd.tv/health