রিমালে এখন পর্যন্ত যত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি

রিমালে এখন পর্যন্ত যত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রিমালে লণ্ডভণ্ড উপকূূল। দমকা বাতাস শেষ হলেও উপকূলবাসীর মনে শেষ হয়নি আতঙ্ক। উপকূলের জেলাগুলোতে ক্ষত রেখে গেছে এই প্রলয়ঙ্কারী ঝড়। ঘূর্ণিঝড় রিমালে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নিহতদের মধ্যে বরিশালে তিন, ভোলায় তিন, পটুয়াখালীতে তিন এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামে একজন করে রয়েছে। যদিও সরকারিভাবে গতকাল বিকালে জানানো হয়েছে ১০ জনের মৃত্যুর কথা।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সারাদেশে সাড়ে ৩৭ লাখের বেশি মানুষ এই রিমাল তাণ্ডবের শিকার। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার বেশি সময়ে ধরে চলা এই ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরেই বাড়ছে।

জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা।

সোমবার বিকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভা ৯১৪টি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬। ৩৫ হাজার ৪৮৩টি সম্পূর্ণ এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, দেশে বিদ্যুতের মোট গ্রাহক চার কোটি ৬৮ লাখ। যার মাধ্যমে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুই কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই হিসাবে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষই বিদ্যুৎহীন অবস্থায় পার করেছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমাদের বিতরণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড় কমে যাওয়ার পর দ্রুতই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে দিতে আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। যেসব এলাকায় ঝড় কমে এসেছে সেসব এলাকায় আমাদের কর্মীরা কাজ শুরু করেছে। ’

বিদ্যুৎ বিতরণ আরেকটি কোম্পানি ওজোপাডিকো সোমবার পর্যন্ত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। এই কম্পানির চার লাখ ৫৩ হাজার ৮১ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট জানিয়েছেন, রিমালের আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৮৪ লাখের বেশি মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৩২ লাখ শিশু।

বিবৃতিতে শেলডন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিসেফ শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রাথমিক সতর্কতামূলক প্রচারণা ও প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে সর্বাত্মক সহায়তা করছে। ’

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ রোববার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আঘাত হানে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করলেও রাতভর শুধু তাণ্ডবই চালায়। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ংকর হয়ে ওঠার কারণে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। সারা রাত তাণ্ডব ঘটিয়ে গতকাল সকালের দিকে দুর্বল হতে থাকে রিমাল। এ অবস্থায় সকালে সমুদ্রবন্দরগুলোয় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।

news24bd.tv/FA