ভারতে নিহত ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডসহ এইসব তদন্তনাধীন মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের আগে গণমাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন না করা সংক্রান্ত হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশটি বুধবার (২৯ মে) জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার বরাবর পাঠিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে নিখোঁজ হন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
এতে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত পরিচালনা করছে।
এতে আরও বলা হয়, অতীতেও তদন্তনাধীন চাঞ্চল্যকর ঘটনার ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। তন্মধ্যে বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ড, ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ড, ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকরাম হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্য।
এই সংক্রান্তে আমাদের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বনাম রাষ্ট্র (৩৯ বিএলডি ৪৭০) মামলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়ে বলা হয়, ‘এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা খুবই সংগত হবে যে, ইদানীং প্রায়শই লক্ষ্য করা যায় যে, বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার পূর্বেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেকসময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অনুমোদনযোগ্য এবং বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতি উৎসাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে একজন অভিযুক্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না যে, তিনি প্রকৃত অপরাধী বা তার দ্বারাই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে। গণমাধ্যমের সামনে গ্রেপ্তার কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সংগত নয় যে, তার মর্যাদা ও সম্মানহানি হয় এবং তদন্ত চলাকালে অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের পূর্বে গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার কোনো ব্যক্তি বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে এমন কোনো বক্তব্য উপস্থাপন সমীচীন নয়, যা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে বিতর্ক বা প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে। ’
ওই রায়ে আরও বলা হয়, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপনের পূর্বেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন এবং কোনো মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে তদন্ত বিষয়ে কতটুকু তথ্য গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করা সমীচীন হবে সে সম্পর্কে একটি নীতিমালা অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ/সুরক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিদর্শক, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া গেল। ’
সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের ঘোষিত রায় সবার জন্য বাধ্যকর। ফলশ্রুতিতে হাইকোর্ট বিভাগের উল্লেখিত রায় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়।
এমতাবস্থায় আনার হত্যাকাণ্ডসহ সব তদন্তনাধীন মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে যথাযথ আইনি প্রতিকার চাওয়ার কথা নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।